সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের তিন সমন্বয়ককে হাসপাতাল থেকে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) হেফাজতে নেওয়া হয়েছে।
তারা হলেন– নাহিদ ইসলাম, আসিফ মাহমুদ ও আবু বাকের মজুমদার। তিনজনই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী।
ঢাকার গণস্বাস্থ্য হাসপাতালে চিকিৎসাধীন এই তিনজনকে শুক্রবার বিকালে হাসপাতাল থেকে তুলে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ ওঠার পর রাতে ডিবির পক্ষ থেকে জানানো হয়, ‘নিরাপত্তাজনিত কারণে’ তাদের হেফাজতে নেওয়া হয়েছে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের তিন সমন্বয়কের ডিবি হেফাজতে থাকার বিষয়টি শুক্রবার রাতে সংবাদমাধ্যমকে নিশ্চিত করেন ডিবিপ্রধান হারুন অর রশীদ।
এর আগে শুক্রবার বিকালে হাসপাতাল থেকে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে কোটা আন্দোলনের তিন সমন্বয়ককে তুলে নিয়ে যাওয়া হয় বলে অভিযোগ করেন নাহিদ ইসলামের বাবা বদরুল ইসলাম।
একই অভিযোগ করেন আসিফ মাহমুদের বাবা বিল্লাল হোসেনও।
সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে জুলাইয়ের শুরুতে রাজপথে আন্দোলন শুরু হলেও তা সংঘাতে গড়ায় ১৫ জুলাই, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলনকারীরা আক্রান্ত হওয়ার পর।
১৯ জুলাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন সর্বাত্মক অবরোধ ডেকেছিল; তারপর সহিংসতা সারাদেশে ছড়ায় ব্যাপক মাত্রায়। তাতে পাঁচ দিনে প্রায় দুইশ মানুষ নিহত হয়। পরিস্থিতি সামাল দিতে কারফিউ জারি করে সেনাবাহিনী মোতায়েন করে সরকার।
এর মধ্যে সর্বোচ্চ আদালতের রায় হয়, তার আলোকে কোটা সংস্কার করে সরকারের প্রজ্ঞাপনও আসে। তখন কোটা সংস্কারের আন্দোলনকারীদের মুখপাত্রদের অনেকের অনুপস্থিতি দেখা যায়।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মোট সমন্বয়ক ৬৫ জন। যারা প্রকাশ্যে আসছিলেন তারা অভিযোগ করেন, তাদের অনেক সহকর্মীকে পাওয়া যাচ্ছে না।
যে তিন সমন্বয়ককে শুক্রবার ডিবি হেফাজতে নেওয়া হয়েছে, তাদের এর আগেও তুলে নেওয়া হয়েছিল বলে সম্প্রতি জানিয়েছিলেন তারা।
কোটা সংস্কারের দাবি আন্দোলনের শুরু থেকে আন্দোলনকারীদের মুখপাত্র হিসেবে নানা কর্মসূচি ঘোষণা করে সংবাদ মাধ্যমের সামনে আসছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ বিজ্ঞানের শিক্ষার্থী নাহিদ ইসলাম। ১৯ জুলাইয়ের পর তার খোঁজ মিলছিল না।
পরে গত ২১ জুলাই সন্ধ্যায় জানা যায়, চিকিৎসার জন্য নাহিদ ইসলাম ঢাকার গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন নাহিদের শরীরের বিভিন্ন জায়গায় সেদিন নির্যাতনের কালসিটে দাগ দেখা যায়। সেদিন তিনি জানান, তাকে খিলগাঁওয়ের নন্দীপাড়ার একটি বাসা থেকে তুলে নেওয়া হয়েছিল।
নাহিদ জানিয়েছিলেন, তুলে নেওয়ার পর মানসিক এবং শারীরিক নির্যাতন করা হয়। এতে তিনি ‘সেন্সলেস’ হয়ে পড়েন। পরে তাকে ঢাকার পূর্বাচলে রেখে যাওয়া হয়।
এছাড়া অপর দুই সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদকে রামপুরা মহানগর আবাসিক এলাকা ও আবু বাকের মজুমদারকে ধানমণ্ডি থেকে তুলে নেওয়া হয়েছিল বলেও জানিয়েছিলেন তারা।
গত বুধবার এক ফেইসবুক পোস্টে আসিফ মাহমুদ বলেন, “গত ১৯ জুলাই রাত ১১টায় আমাকে হাতিরঝিলের মহানগর আবাসিক এলাকা থেকে তুলে নিয়ে যায়। আন্দোলন স্থগিত করার ঘোষণা দিতে চাপ দেওয়া হয়। না মানায় ইনজেকশন দিয়ে সেন্সলেস (অচেতন) করে রাখা হয়।
“এই চার-পাঁচ দিনে যতবার জ্ঞান ফিরেছে, ততবার ইনজেকশন দিয়ে সেন্সলেস করে রাখা হয়। আজ বুধবার (২৪ জুলাই) বেলা ১১টায় আবার একই জায়গায় চোখ বাঁধা অবস্থায় ফেলে দিয়ে যায়।”
একইদিন ফেইসবুকে এক পোস্টে আবু বাকের মজুমদার বলেন, “আমাকে ১৯ জুলাই সন্ধ্যার পর ধানমণ্ডি থেকে উঠিয়ে নিয়ে যায় এবং আন্দোলন বন্ধে স্টেটমেন্ট (বিবৃতি) দিতে বলায় আমি অস্বীকৃতি জানালে একটা অন্ধকার কক্ষে আটকে রাখে। যে এলাকা থেকে তুলে নেয়, তার পাশের এলাকায় আমাকে চোখ বেঁধে ফেলে যায়।”