Beta
মঙ্গলবার, ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫
Beta
মঙ্গলবার, ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫
অভিনেত্রী শিমু হত্যার ৩ বছর

‘মায়ের অভাব তো পূরণ করা সম্ভব না’

রাইমা ইসলাম শিমু
রাইমা ইসলাম শিমু
[publishpress_authors_box]

“আমার বোনকে নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করা হয়েছে। নিশ্চয়ই আল্লাহ ন্যায়বিচার করবেন। বোনকে অনেক মিস করি। শিমুর ছেলে-মেয়েকে বুঝ দেওয়ার মতো আমার কাছে কোনও ভাষা নেই। তারা সবসময় মায়ের কথা মনে করে। সব চাহিদা পূরণ করতে পারলেও মায়ের অভাব তো আমার পক্ষে পূরণ করা সম্ভব না। এটা কি পূরণ করা সম্ভব? ছেলেটা ছোট, এখনও একা একা কান্নাকাটি করে। তারা মাকে অনেক মিস করে।”

তিন বছর আগে অভিনেত্রী রাইমা ইসলাম শিমু হত্যার স্মৃতিচারণ এবং পরবর্তী পরিস্থিতি জানাতে গিয়ে সকাল-সন্ধ্যাকে একথা বলেছিলেন তার ভাই হারুনুর রশীদ।

২০২২ সালের ১৭ জানুয়ারি সকাল ১০টার দিকে ঢাকার কেরানীগঞ্জ থেকে শিমুর বস্তাবন্দি খণ্ডিত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। তার আগের দিন সকালে তাকে হত্যা করা হয়েছিল।

আলোচিত এ ঘটনায় শিমুর ভাই হারুনুর রশীদ কেরানীগঞ্জ মডেল থানায় একটি মামলা করেন। হত্যার অভিযোগে স্বামী সাখাওয়াত আলী নোবেল ও তার বন্ধু এস এম ফরহাদকে গ্রেপ্তার করা হয়। বর্তমানে তারা কারাবন্দি।

তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে পুলিশ জানিয়েছিল, ‘পারিবারিক বিষয়াদি ও দাম্পত্য কলহের’ কারণে শিমুকে হত্যা করা হয়। হত্যা করে শিমুর স্বামী নোবেল ও লাশ গুম করতে সহায়তা করে নোবেলের বন্ধু ফরহাদ।

শিমু-নোবেল দম্পতির এক মেয়ে ও এক ছেলে। মেয়ের বয়স প্রায় ১৮ বছর; ছেলের বয়স ৮ বছর।

হারুনুর রশীদের অভিযোগ, শিমুর স্বামী কারাবন্দি নোবেল মেয়েকে দেখে নেওয়ার হুমকি দিয়েছেন। জেল থেকে বের হয়ে মেয়েকে হত্যার হুমকিও দিয়েছেন তিনি।

“আসামি কত নিষ্ঠুর! জেলে থেকে মেয়েকে দেখে নেওয়ার হুমকি পর্যন্ত দিয়েছে। জেল থেকে বের হয়ে মেয়েকে মেরে ফেলার হুমকিও দিয়েছে। আমরা তার কঠিন সাজা চাই,” বলেন তিনি।

মামলা সম্পর্কে জানতে চাইলে হারুনুর রশীদ বলেন, “আমরা চেয়েছিলাম আরও দ্রুত গতিতে মামলাটি নিষ্পত্তি হোক। কিন্তু দেখতে দেখতে অনেকটা সময় পার হয়ে গেল। আশা করছি, দ্রুত সময়ের মধ্যে বিচার শেষ হবে। আদালতের কাছে আমাদের একটাই দাবি থাকবে- আসামির যেন সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড হয়। তিন বছর হয়ে গেছে। আশা করব, এ বছরের মধ্যে বিচারটা যেন শেষ হয়।”

শিমুর বোন ফাতেমা বেগম বলেন, “আমরা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। ন্যায়বিচার আশা করছি। সর্বোচ্চ সাজা ফাঁসির প্রত্যাশা করি।”

এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, “মা তো মা-ই। সন্তানেরা মায়ের কথা বলবে, মনে করবে। আমরা সবটা দিয়েও তো মায়ের অভাব পূরণ করতে পারব না। তবুও আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি, ওদের ভালো রাখার। ব্লাড কানেক্টেড, স্মৃতিতে তো মা থেকে যাবে।”

ফাতেমা বেগম আরও বলেন, “আজকে আমার ভাইয়ের মেয়ের বিয়ে। আমরা সব আত্মীয়-স্বজন এক হয়েছি। সবাই বোনের কথা বলে। সে থাকলে আনন্দটা আরও বেশি হতো। মেয়েটা কান্না করে। বলে, আম্মু নেই। মায়ের অভাব পূরণ করা সম্ভব।”

সংশ্লিষ্ট আদালতের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর মোহাম্মদ সৈকত উল্লাহ চৌধুরী জানান, মামলাটি সাক্ষ্য গ্রহণ পর্যায়ে রয়েছে। এখন পর্যন্ত অভিযোগপত্রভুক্ত ৩৩ জন সাক্ষীর মধ্যে ১৮ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ করেছে রাষ্ট্রপক্ষ। আশা করা হচ্ছে, শিগগিরই রায় হবে।

তিনি বলেন, “সাক্ষীদের জবানবন্দিতে আসামিদের নাম ওঠে এসেছে। আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ রাষ্ট্রপক্ষ প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছে। আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তি হবে আশা করতেই পারি।”

শিমুর স্বামী সাখাওয়াত আলী নোবেল ও তার বন্ধু এস এম ফরহাদ গ্রেপ্তার হয়ে এখথন কারাবন্দি।
শিমুর স্বামী সাখাওয়াত আলী নোবেল ও তার বন্ধু এস এম ফরহাদ গ্রেপ্তার হয়ে এখন কারাবন্দি।

আসামিপক্ষের আইনজীবী আবদুর রহমান (জীবল) বলছেন, রাষ্ট্রপক্ষ আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণ এখনও করতে পারেনি।

শিমুর বিরুদ্ধে বিয়েবহির্ভূত সম্পর্কের অভিযোগ তুলে তিনি বলেন, “রাষ্ট্রপক্ষ আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণ করতে ব্যর্থ হয়েছে। আশা করি, এই মামলা থেকে আসামিরা ন্যায়বিচার পাবেন।”

মামলাটি ঢাকার ৪র্থ অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতে রয়েছে।

সর্বশেষ গত ১৩ জানুয়ারি সাক্ষ্য গ্রহণের দিন ধার্য ছিল। ওইদিন মামলার দ্বিতীয় তদন্ত কর্মকর্তা কেরানীগঞ্জ মডেল থানার উপপরিদর্শক শহিদুল ইসলাম সাক্ষ্য দেন। আগামী ১৬ ফেব্রুয়ারি পরবর্তী সাক্ষ্য গ্রহণের তারিখ রয়েছে। ৩৩ জন সাক্ষীর মধ্যে ১৮ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ করেছে আদালত। 

মামলার অভিযোগে বলা হয়, ২০২২ সালের ১৭ জানুয়ারি সকাল ১০টার দিকে স্থানীয়ভাবে সংবাদ পেয়ে কলাতিয়া ফাঁড়ির পুলিশ এবং কেরানীগঞ্জ মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ ও কেরানীগঞ্জ সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হযরতপুর ইউনিয়ন পরিষদের আলীপুর ব্রিজ সংলগ্ন ঝোপ থেকে ত্রিশোর্ধ এক নারীর বস্তাবন্দি মরদেহ উদ্ধার করে। নিহতের পরিচয় শনাক্ত করার জন্য আঙুলের ছাপ নেওয়া হয়। ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহ মিটফোর্ড হাসপাতালে পাঠানো হয়। পরে তথ্য-প্রযুক্তির সাহায্যে মৃতদেহের পরিচয় শনাক্ত হয়।

তদন্তে জানা যায়, মরদেহটি চিত্রনায়িকা রাইমা ইসলাম শিমুর। দাম্পত্য কলহের জেরে ১৬ জানুয়ারি সকাল আনুমানিক ৭-৮ টার মধ্যে যেকোনো সময় খুন হন শিমু।

হারুনুর রশীদ মামলা করার পর ২০২২ সালের ২৯ আগস্ট কেরানীগঞ্জ মডেল থানার পরিদর্শক শহিদুল ইসলাম দুইজনকে অভিযুক্ত করে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। ওই বছরের ২৯ নভেম্বর দুই আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেয় আদালত।

রাইমা ইসলাম শিমুর জন্ম বরিশালে। চলচ্চিত্রে তার অভিষেক হয় ১৯৯৮ সালে কাজী হায়াৎ পরিচালিত ‘বর্তমান’ সিনেমার মধ্য দিয়ে।

এক সাক্ষাৎকারে তিনি জানান, দেলোয়ার জাহান ঝন্টু, চাষি নজরুল ইসলামসহ বিভিন্ন পরিচালকের ২৫টি চলচ্চিত্রে পার্শ্ব চরিত্রে অভিনয় করেছেন তিনি। পাশাপাশি টেলিভিশন নাটকেও অভিনয় ও প্রযোজনা করেছেন।

সর্বশেষ ২০০২ সালে তিনি জামাই শশুর চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। শিমু বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সহযোগী সদস্য ছিলেন।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত