জুলাই-আগস্টের আন্দোলনে আহত আরও ৬০ জনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর প্রস্তুতি চলছে। ইতোমধ্যে আহত ৪০ জন সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড, রাশিয়াসহ বিভিন্ন দেশে উন্নত চিকিৎসার জন্য গেছে।
রবিবার ফরেইন সার্ভিস অ্যাকাডেমিতে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম।
তিনি বলেন, আহত ৬০ জনের মধ্যে আটজনকে ব্যাংকক ও সিঙ্গাপুরে পাঠানো হবে। বাকিদের মধ্যে ২১ জনকে তুরস্কে ও ৩১ জনকে পাকিস্তান পাঠানো হবে।
পাকিস্তানে রোগী পাাঠানোর কারণ হিসেবে স্বাস্থ্য উপদেষ্টা বলেন, দেশটিতে মাইন বিস্ফোরণে আহতদের চিকিৎসার জন্য বিশেষায়িত হাসপাতাল আছে। যুক্তরাষ্ট্রের এক বিশেষজ্ঞ দল এ তথ্য জানিয়েছে।
জুলাই-আগস্টের আন্দোলনে নিহত ও আহতের তালিকার প্রথম ধাপের খসড়া চূড়ান্ত করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয় গত ২১ ডিসেম্বর। প্রকাশ করা হয় বিশেষ সেল (musc.portal.gov.bd) এর ওয়েবসাইটেও। সে তালিকায় ৮৫৮ জন নিহত এবং ১১ হাজার ৫৫১ জন আহতের তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে নূরজাহান বেগম জানান, আন্দোলনে আহত ও নিহতদের তথ্য যাচাই-বাছাই করে ৮৬৪ জনের বেশি নিহত ও ১৪ হাজারের বেশি আহত রোগীর তালিকা প্রস্তুতি করা হয়েছে। আহতদের মধ্যে ৭০ শতাংশ সাধারণ মানুষ, ২৫ শতাংশ শিক্ষার্থী।
স্বাস্থ্য উপদেষ্টা জানান, আহতদের মধ্যে ৪০ জনকে বিদেশে উন্নত চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয়েছে। তাদের মধ্যে থাইল্যান্ডে ১৬ জনকে, সিঙ্গাপুরে ১৩ জনকে এবং একজনকে রাশিয়া পাঠানো হয়। তাদের চিকিৎসায় ১৯ কোটি টাকা খরচ হয়েছে।
তিনি বলেন, জুলাই অভ্যুত্থানে ৪৫০ জন একটি চোখ হারিয়েছেন এবং ২১ জন দুই চোখই হারিয়েছেন। ১৭ জন পা ও চারজন হাত হারিয়েছেন। আহত বাসেত খান মুসার চিকিৎসায় এখন পর্যন্ত সাড়ে ছয় কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে।
স্বাস্থ্য উপদেষ্টা জানান, দেশে আহতদের সুচিকিৎসার জন্য বিদেশ থেকে ২৬ জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক আনা হয়। জুলাই যোদ্ধারা হেলথ কার্ড দেখিয়ে সারাদেশের সব হাসপাতালে বিনামূল্যে চিকিৎসা পাবেন।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ-চীন সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে হাসপাতাল করবে চীন। এক হাজার শয্যার এ হাসপাতাল নীলফামারী হওয়ার সম্ভাবনা আছে। হাসপাতালের জমি খোঁজা হচ্ছে।
নূরজাহান বেগম বলেন, “চীনের রাষ্ট্রদূতকে আমরা বলেছিলাম রবোটিক ফিজিওথেরাপির সেট একটি আমাদের উপহার হিসেবে দিতে। আমাদের শুধু আন্দোলনে আহতদের জন্য না, ভবিষ্যতেও দুর্ঘটনায় আহতদের জন্য লাগবে। চীন আমাদের কথা রেখেছ, একটি সেট আমাদের উপহার হিসেবে দিয়েছে।”
“এটা বর্তমানে চট্টগ্রাম বন্দরে আছে। এটা স্থাপন করতে আমাদের ৬ হাজার স্কয়ার ফুটের মতো জায়গা লাগবে। আমরা সেই জায়গা ঠিক করেছি বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (সাবেক বিএসএমএমইউ)। সেখানে এটা ডেডিকেটেড করা থাকবে।”
আহতরা সেখানে ফিজিওথেরাপি নিতে পারবেন জানিয়ে স্বাস্থ্য উপদেষ্টা বলেন, “তার জন্য আমরা একটি দলকে প্রশিক্ষণ দিয়ে দিব। ব্যাংকক থেকে আমরা বিশেষজ্ঞ নিয়ে আসব। তারা এখানে প্রশিক্ষণ দিয়ে গেলে ভবিষ্যতে সবাই এখান থেকে সহায়তা পাবে।
“আমাদের এখানে একটা রবোটিক ফিজিওথেরাপি বসালে হবে না, আমরা উত্তরবঙ্গে এবং চট্টগ্রামে দেওয়ার চেষ্টা করব, যাতে ওখানকার রোগীদের এখানে ফিজিওথেরাপি দিতে আনতে না হয়।”
সংবাদ সম্মেলন শেষে এক প্রশ্নে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবু জাফর বলেন, বাংলাদেশে চীনের সহয়তায় তিনটি বড় হাসপাতাল তৈরির প্রস্তুতি চলছে। নীলফামারীতে এক হাজার শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতাল করবে চীন। তিন দিনের মধ্যে জায়গা নির্ধারণের জন্য বলা হয়েছে।
প্রাথমিকভাবে ১৬ একরের মতো একটি জায়গা নির্বাচন করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, “এটার দেখভাল করছে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়। আর একটি হাসপাতাল তৈরি করা হবে সাভার ধামরাইয়ে। এটি হবে পূর্নবাসন প্রতিষ্ঠান। এখানে বিভিন্ন ধরনের দুর্ঘটনা আহতদের সেবা দেওয়া হয়।
“এছাড়া চট্টগ্রামে ৫০০ থেকে ৭০০ শয্যার আরও একটি হাসপাতাল তৈরি প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। এটা প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। কিছুই চূড়ান্ত হয়নি। এর বাইরে চায়না অর্থায়নে চট্টগ্রামে বার্ন ও প্লাস্টিক ইউনিট পরিচালিত হচ্ছে।”