Beta
শনিবার, ১২ জুলাই, ২০২৫
Beta
শনিবার, ১২ জুলাই, ২০২৫

সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতায় ৪ উদ্বেগ : সাদিক আহমেদ

এমসিসিআই আয়োজিত ‘সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতা ও এর চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক আলোচনায় সাদিক আহমেদ। ছবি : সংগৃহীত
এমসিসিআই আয়োজিত ‘সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতা ও এর চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক আলোচনায় সাদিক আহমেদ। ছবি : সংগৃহীত
[publishpress_authors_box]

সরকারের কিছু ভুল নীতি ও সঠিক পদক্ষেপের অভাবে দেশের অর্থনীতিতে কিছু উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে বলে মনে করেন বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) ভাইস চেয়ারম্যান সাদিক আহমেদ।

বিশ্ব ব্যাংকের সাবেক এই কর্মকর্তা এ মুহূর্তে বাংলাদেশের সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতায় চারটি উদ্বেগ দেখছেন, এগুলো হলো—চলতি হিসাবে বড় ঘাটতি, রিজার্ভ কমে যাওয়া ও টাকার অবমূল্যায়ন, দীর্ঘ মেয়াদে উচ্চ মূল্যস্ফীতি এবং রাজস্ব আহরণ কম হওয়া।

মঙ্গলবার ঢাকার গুলশানে মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এমসিসিআই) আয়োজিত ‘সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতা ও এর চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক আলোচনায় উদ্বেগের বিষয়গুলো তুলে ধরেন।

তার মতে, এগুলো কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। সরকারের নেওয়া কিছু ভুল নীতি ও সঠিক পদক্ষেপের অভাবই এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।

সাদিক আহমেদ বলেন, “বাংলাদেশে যে দীর্ঘমেয়াদি অগ্রগতি হচ্ছিল, তা গত চার বছরে একাধিক বাহ্যিক ধাক্কায় হুমকির মুখে পড়েছে। অর্থনীতিতে স্থিতিশীলতা আনতে সরকার বেশ কিছু উদ্যোগ নিয়েছে, তবে এর ফলাফল এখন পর্যন্ত আশানুরূপ নয়। বর্তমানে দেশে উচ্চ মূল্যস্ফীতি, বৈদেশিক মুদ্রার সংকট ও জিডিপি প্রবৃদ্ধি নিম্নমুখী রয়েছে। বিনিয়োগ ও রপ্তানি বৃদ্ধির হারও কম।”

উদ্বেগগুলোর মধ্যে চলতি হিসাবে ঘাটতিকে প্রথম স্থানে রাখছেন সাদিক আহমেদ।

তিনি বলেন, বৈশ্বিক মূল্যস্ফীতির কারণে আমদানি ব্যয় বাড়ায় বড় ধরনের বাণিজ্য ও চলতি হিসাবের ঘাটতি তৈরি হয়েছে। সরকার আমদানি কমিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করলেও মুদ্রার বিনিময় হার বাজারভিত্তিক করেনি। ফলে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে রিজার্ভ কমেছে। মাত্র ১১ মাসে ৪৪ শতাংশ বা ২১ বিলিয়নের বেশি রিজার্ভ কমেছে।

এটাকে বড় ধরনের চাপ বলে মনে করেন বিশ্বব্যাংকের সাবেক এই অর্থনীতিবিদ।

বর্তমানে সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতায় দ্বিতীয় উদ্বেগ হিসেবে রিজার্ভ কমে যাওয়া ও টাকার অবমূল্যায়নকে চিহ্নিত করেছেন তিনি। বলেন, আমদানি নিয়ন্ত্রণ ও শুল্ক বৃদ্ধির পরও সরকার রিজার্ভের ক্ষতি রোধ করতে পারেনি। সরকার দীর্ঘদিন ধরেই বিনিময় হার এক জায়গায় বেঁধে রেখেছিল। এখন টাকার অবমূল্যায়ন করে বিনিময় হার সমন্বয়ের উদ্যোগ নিয়েছে।

“ফলে বর্তমান মূল্যস্ফীতির জন্য টাকার অবমূল্যায়নকে নয়, বরং বিনিময় হার ধরে রাখাকে দোষ দিতে হবে।”

২০২২ সালের জানুয়ারিতে দেশে মূল্যস্ফীতি ৫ দশমিক ৯ শতাংশ ছিল, যা ২০২৩ সালের আগস্টে বৃদ্ধি পেয়ে ৯ দশমিক ৯ শতাংশে পৌঁছায়। সাদিক আহমেদ বলেন, এরপর থেকে মূল্যস্ফীতি ১০ শতাংশের আশপাশে থাকছে। এ ছাড়া দীর্ঘ সময় ধরে কর-জিডিপি হার বাড়ছে না।

এসব বিষয়ে সরকার বেশ কিছু উদ্যোগ নিলেও আশ্চর্যজনকভাবে সেসব কোনও কাজে আসছে না, অভিযোগ তার।

খেলাপি ঋণ কমানোর উপায়

ব্যাংকিং খাতের দুরাবস্থার কথা তুলে ধরে সাদিক আহমেদ বলেন, “খেলাপি ঋণের পরিমাণ কমায় দুর্বল ও সমস্যাযুক্ত ব্যাংকগুলোর ঋণ দেওয়া বন্ধ করে দিতে হবে। খেলাপি ঋণের হার ১০ শতাংশের নিচে কমিয়ে আনার আগ পর্যন্ত দুর্বল ব্যাংকগুলোকে নতুন ঋণ দেওয়া থেকে বিরত রাখতে হবে। এটিই খেলাপি ঋণ কমানোর সবচেয়ে প্রত্যক্ষ ও টেকসই উপায়।”

সমস্যাযুক্ত ব্যাংকগুলোর বেশিরভাগই ব্যাংকিং পরিচালনা রীতির শর্ত পূরণ করেনি উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত তথ্য অনুযায়ী ১৬টি ব্যাংকের খেলাপি ঋণ বিতরণ করা মোট ঋণের ১০ শতাংশের ওপরে ছিল।

এর মধ্যে নয়টি ব্যাংকের খেলাপি ঋণের হার ছিল ২০ শতাংশের বেশি।

ব্যাংক একীভূতকরণ প্রসঙ্গে

সম্প্রতি বেশ কয়েকটি সরকারি-বেসরকারি ব্যাংক একীভূত করার বিষয়টিও আসে আলোচনায়।

ব্যাংক একীভূত করা ব্যবসায়িক সিদ্ধান্ত উল্লেখ করে সাদিক আহমেদ বলেন, “সাধারণত কেউ দুর্বল প্রতিষ্ঠান একীভূত করতে চায় না। ফলে জোর করে ব্যাংক একীভূত করা কোনও সমাধান নয়।”

মুদ্রার বিনিময় হার নির্ধারণে বাংলাদেশ ব্যাংক যে ক্রলিং পেগ ব্যবস্থা চালু করেছে, তা পুরোপুরি তুলে দেওয়ার পক্ষে মত দেন তিনি। এর বদলে তা বাজারভিত্তিক করার পরামর্শ দেন।

দীর্ঘদিন ধরে নয়–ছয় ভিত্তিতে সুদহার রাখা সরকারের ভুল সিদ্ধান্ত বলেও মনে করেন সাদিক আহমেদ।

সামষ্টিক অর্থনীতিতে স্থিতিশীলতা আনতে এই মুহূর্তে রাজস্ব নীতি সংস্কারে সবচেয়ে গুরুত্ব দেওয়ার পরামর্শ দেন পিআরআই ভাইস চেয়ারম্যান। রাজস্ব নীতিকে মুদ্রা নীতির সহায়ক হতে হবে বলে মনে করেন তিনি। বলেন, তা না হলে মুদ্রানীতি ঠিকভাবে কাজ করবে না, মূল্যস্ফীতি বাড়বে।

যা মুদ্রার বিনিময় হারকে আবার বেসামাল করে তুলবে।

মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আনতে আরও সময় লাগবে বলেও মত সাদিক আহমেদের। এ জন্য ভবিষ্যতে সুদহার আরও বাড়াতে হতে পারে বলে মনে করেন তিনি। আর মূল্যস্ফীতি কমিয়ে আনতে অবশ্যই বাজেট ঘাটতি কমানোর পরামর্শ দিলেন।

স্বাগত বক্তব্যে এমসিসিআই সভাপতি কামরান টি রহমান বলেন, গত কয়েক বছর ধরে সামষ্টিক অর্থনীতির ক্ষেত্রে অনেক চ্যালেঞ্জের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য অংশীজন ও নীতিনির্ধারকদের গুরুত্বসহকারে কাজ করতে হবে।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন পিআরআই চেয়ারম্যান জায়েদী সাত্তার, এমসিসিআইয়ের সাবেক জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি আনিস এ খানসহ অন্যরা।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত