Beta
রবিবার, ১ ডিসেম্বর, ২০২৪
Beta
রবিবার, ১ ডিসেম্বর, ২০২৪

এবার ‘ক্লাসে মনোযোগ না দেওয়ায়’ ৪৯ এসআইকে শোকজ

সারদা পুলিশ একাডেমিতে প্রশিক্ষণ শেষে পাসিং আউট প্যারেডে পুলিশ সদস্যরা। ফাইল ছবি
সারদা পুলিশ একাডেমিতে প্রশিক্ষণ শেষে পাসিং আউট প্যারেডে পুলিশ সদস্যরা। ফাইল ছবি
[publishpress_authors_box]

রাজশাহীর সারদায় প্রশিক্ষণরত এসআই ক্যাডেটদের মধ্যে চলা ‘শোকজ’ আতঙ্কের মধ্যেই নতুন করে কারণ দর্শানোর নোটিস পেয়েছেন আরও ৪৯ জন। এবারের অভিযোগ, এই ক্যাডেটরা ক্লাসে পাঠদান চলাকালে অমনোযোগী ছিলেন।

এর আগে গত সপ্তাহে নাশতা না খেয়ে হইচই করে মাঠের মধ্যে বিশৃঙ্খল পরিবেশ সৃষ্টির কারণ দেখিয়ে ২৫২ ক্যাডেট এসআইকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। এরপর প্রশিক্ষণ ক্লাসে প্রশিক্ষকের কথা না শোনায় কারণ দর্শানোর চিঠি পান ১০ জন।

এসব বিষয় নিয়ে আতঙ্কে ছিলেন সারদায় বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমিতে প্রশিক্ষণরত ৪০তম এসআই ক্যাডেট ব্যাচের প্রশিক্ষণার্থীরা। প্রশিক্ষণের প্রায় শেষ পর্যায়ে এসে চাকরি নিয়ে দুশ্চিন্তার মধ্যেই নতুন করে ৪৯ জনকে শোকজের খবর এল।

অবশ্য কারণ দর্শানোর চিঠি দেওয়ার কয়েকদিন আগে থেকেই এই ৪৯ জনকে নিয়মিত পার্সি প্যারেড প্রশিক্ষণ থেকে বিরত রাখা হয়েছিল। চিঠিতে তাদের বিরুদ্ধে প্রশিক্ষণ ক্লাসে পাঠদান চলাকালে অমনোযোগী হওয়ার অভিযোগ করা হয়েছে।

আওয়ামী লীগ সরকার আমলে ২০২৩ সালে পুলিশের এসআই পদে নিয়োগের জন্য ৮২৩ জনকে চূড়ান্ত করে তাদের পাঠানো হয় সারদার পুলিশ একাডেমিতে। বিসিএসে যোগদানসহ বিভিন্ন কারণে ১৯ জন অব্যাহতি নেওয়ার পর সবশেষে ছিলেন ৮০৪ জন। 

৪০তম ব্যাচের ক্যাডেট হিসাবে প্রশিক্ষণ শেষ করে আগামী মাসেই তাদের চাকরিতে যোগদানের কথা ছিল।

কিন্তু গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর এসআই পদে নিয়োগ নিয়ে প্রশ্ন তোলে বিএনপি। আওয়ামী লীগ আমলে দলীয় বিবেচনায় এই নিয়োগ হয়েছে অভিযোগ করে তা বাতিলের দাবি জানায় দলটি।

এই চিঠিটিই পেয়েছেন সারদায় প্রশিক্ষণরত ৪৯ ক্যাডেট এসআই। ছবি : সকাল সন্ধ্যা
এই চিঠিটিই পেয়েছেন সারদায় প্রশিক্ষণরত ৪৯ ক্যাডেট এসআই। ছবি : সকাল সন্ধ্যা

বিএনপি এই দাবি তোলার পাঁচ দিন পর গত সোমবার শৃঙ্খলা ভঙ্গের কারণ দেখিয়ে ২৫২ জন এসআইকে একযোগে অব্যাহতি দেওয়া হয়। এরপর থেকে দফায় দফায় শোকজ করার খবর আসছে।

বৃহস্পতিবার ‘কৈফিয়ত তলব প্রসঙ্গে’ শিরোনামে দেওয়া ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, “আপনি বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমি সারদা, রাজশাহীতে ৪০তম ক্যাডেট এসআই/২০২৩ ব্যাচে গত ৫/১১/২০২৩ তারিখ থেকে এক বছর মেয়াদী মৌলিক প্রশিক্ষণরত আছেন। গত ২১ অক্টোবর সন্ধ্যা ৭টা থেকে রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত চেমনি মেমোরিয়াল হলে প্রশিক্ষণরত ক্যাডেট এসআইদের ‘আইনের গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন ধারার’ ওপর ক্লাস ছিল। ক্লাসে আইন প্রশিক্ষক হিসেবে পুলিশ পরিদর্শক (নিরস্ত্র) মো. রেজাউল করিম, মো. নজরুল ইসলাম, মো. সিরাজুল ইসলাম, শেখ শাহীন রাজা উপস্থিত ছিলেন।

“তারা ক্লাসে উপস্থিত হয়ে দেখতে পান সিটে বসার সময় আপনি শৃঙ্খলার সঙ্গে না বসে এলোমেলোভাবে বসে হৈচৈ করে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেছেন। পুলিশ পরিদর্শক (নিরস্ত্র) মো. রেজাউল করিমসহ তার সঙ্গীয় অন্যান্য ইন্সপেক্টররা বারবার শৃঙ্খলার সঙ্গে বসার কথা বললেও আপনি তাদের নির্দেশ অমান্য করেন এবং কথায় কর্ণপাত না করে বসা নিয়ে হৈচৈ করতে থাকেন।”

এছাড়া আরও বলা হয়েছে, “পাঠদান চলাকালীন আপনার ক্লাসে কোনও মনোযোগ ছিল না এবং পাশাপাশি বসে কথাবার্তা বলছিলেন। ক্লাসে চলাকালীন আপনার এ ধরনের শৃঙ্খলা বিরোধী আচরণ বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমির নিয়ম শৃঙ্খলার পরিপন্থী।”

চিঠিতে বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমির অধ্যক্ষের পক্ষে সই করেছেন পুলিশ সুপার (অ্যাডমিন অ্যান্ড লজিস্টিকস্) মো. তারেক বিন রশিদ।

প্রশিক্ষণার্থী ২৫২ এসআইকে বাদ দেওয়ার নেপথ্যে কী

সেখানে বলা হয়, “এসব কার্যকলাপের পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৪৩ সালের পিআরবি বিধি ৭৪১-৩ উপবিধির খ (৩) অনুযায়ী আপনাকে কেন চলমান মৌলিক প্রশিক্ষণ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হবে না তার লিখিত ব্যাখ্যা এ কৈফিয়ত তলবনামা প্রাপ্তির পরবর্তী তিন দিনের মধ্যে দাখিলের জন্য নির্দেশ দেওয়া হলো।”

এই নোটিস পেয়েছেন এমন একজন ক্যাডেট এসআই সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “আমাদের আগে আরও ১০ জনকে শোকজ করা হয়েছে। আগামীকাল শনিবার কিংবা রবিবার তাদের ছুটিতে পাঠানো হতে পারে। এরই পরই হয়তো তাদের অব্যহতি লেটার দেওয়া হবে।

“এর আগে অব্যাহতি পাওয়া ২৫২ জনের সঙ্গেও এমন ঘটনাই ঘটেছে। তাদেরও শোকজ করার পর অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। এর আগে তাদেরও পার্সি প্যারেড প্রশিক্ষণ থেকে আলাদা করা হয়েছিল।” 

তিনি বলেন, “এখন নতুন করে আমাদের ৪৯ জনকে শৃঙ্খলা ভঙ্গের নোটিস দেওয়া হলো। তবে নোটিস দেওয়ার আগে থেকেই পার্সি প্যারেড থেকে আলাদা রাখায় আমরা বুঝতে পেরেছিলাম যে কিছু একটা হতে চলেছে। আর এখানে এখন শোকজ খাওয়া মানেই অব্যাহতির তালিকায় চলে যাওয়া।”

হিন্দু এসআইদের ‘ঢালাও’ বাদ দেওয়া ‘প্রশ্নবোধক’

তবে ৪০তম এসআই ক্যাডেট ব্যাচের বিষয়ে কোনও কথা বলতে চাননি পুলিশ একাডেমির অধ্যক্ষ অতিরিক্ত আইজিপি মাসুদুর রহমান ভুঞা। এ বিষয়ে কিছু জানতে পুলিশ সদর দপ্তরে যোগাযোগের পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।

যদিও এর আগে পুলিশ সদর দপ্তর থেকে বলা হয়েছিল, প্রশিক্ষণার্থীদের শৃঙ্খলা রক্ষার বিষয়টি পুরোপুরি সারদা পুলিশ একাডেমিই দেখে। সেখানে পুলিশ সদর দপ্তরের কোনও হাত নেই।

১০ প্রশিক্ষণার্থীকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া বিষয়ে সকাল সন্ধ্যাকে মাসুদুর রহমান ভুঞা বলেছিলেন, “প্রশিক্ষণার্থীর কোনও কিছু অনিয়মের মধ্যে পড়লে তার কৈফিয়ত তলব করা নিয়মিত ঘটনা। কেউ অপরাধ করলে শাস্তি পাবে সেটাই স্বাভাবিক। শোকজ করার সঙ্গে অব্যাহতির কোনও সম্পর্ক নেই। শোকজ খেলেই অব্যাহতি পাবে, এমন কথা ঠিক নয়।”

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

ad

সর্বাধিক পঠিত