পাঁচ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের লোভ দেখিয়ে প্রতারণার অভিযোগে করা মামলায় সংঘবদ্ধ একটি চক্রের আরেক সদস্যকে গ্রেপ্তারের কথা জানিয়েছে পুলিশ।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) বলছে, গ্রেপ্তার নারীর নাম পান্না বেগম (৪১)। যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত একজন মারা গেছেন বলে তার বিমার পাঁচ মিলিয়ন ডলারের লোভ মো. নুরুজ্জামান নামে একজনকে দেখিয়েছিল চক্রটি।
ডিএমপির সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, বৃহস্পতিবার বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে অভিযান চালিয়ে পান্না বেগমকে গ্রেপ্তার করা হয়।
তার কাছ থেকে ৬ লাখ ১ হাজার ২৫০ টাকা, বিভিন্ন ব্যাংকের ৩৬টি অ্যাকাউন্টের চেকের পাতা, তিনটি ভিসা কার্ড, চারটি মোবাইল ফোন, আটটি সিমকার্ড, পান্না ইন্টারন্যাশনাল নামক ভুয়া এজেন্সির আটটি ভিজিটিং কার্ড, একটি করে রাবার স্ট্যাম্প ও সিল প্যাড এবং একটি অফিসিয়াল হাত ব্যাগ উদ্ধার করা হয়েছে।
পুলিশ জানিয়েছে, পাঁচ মিলিয়ন ডলারের লোভ দেখিয়ে প্রতারণার অভিযোগে গত ১২ অক্টোবর নিউ মার্কেট থানায় মামলা করেন নুরুজ্জামান। পরদিন বনশ্রীর মডেল এজেন্সি নামে একটি অফিস থেকে প্রতারক চক্রের সদস্য আজিজ মোল্লাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
মামলায় বলা হয়, গত ২৯ সেপ্টেম্বর দুপুরে আন্না হ্যারিসন নামের ফেইসবুক আইডি থেকে নুরুজ্জামানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তাকে জানানো হয়, বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মোহাম্মদ বেলটন নামে এক ব্যক্তি যুক্তরাষ্ট্রে কর্মরত থাকা অবস্থায় মারা গেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের এলাইনস ব্যাংকে বেলটনের পাঁচ মিলিয়ন ডলার জমা আছে। আন্না হ্যারিসন নুরুজ্জমানকে মৃত বেলটনের আত্মীয় পরিচয় দিতে বলেন এবং এলাইনস ব্যাংক ম্যানেজারের কথা বলে আরেকটি হোয়াটসঅ্যাপ নাম্বার দেন।
আন্না হ্যারিসন তার বানানো ম্যাসেজ সেই ব্যাংক ম্যানেজারকে দিতে বলেন। তারপর তিনি নুরুজ্জামানকে তার কথিত আইন উপদেষ্টার নম্বর দিয়ে যোগাযোগ করতে বলেন। কথিত আইন উপদেষ্টা বিমার টাকা পাওয়ার জন্য নুরুজ্জামানকে ৭৬ হাজার ডলার পাঠাতে বলেন। পরবর্তীতে আন্না হ্যারিসন ৭৬ হাজার ডলার পরিশোধের একটি স্লিপ নুরুজ্জামানকে দেন।
এরপর কথিত ব্যাংক ম্যানেজার বিমার পাঁচ মিলিয়ন ডলার বাংলাদেশে পাঠানোর জন্য একটি শিপিং কোম্পানির কাছে দুটি ল্যাগেজ দেওয়া হয়েছে বলে নুরুজ্জামানকে জানান। প্রমাণ হিসেবে একটি ভিডিও দেখান তিনি।
কথিত ওই ব্যাংক ম্যানেজার বিমা খরচ ও ডেলিভারি খরচ বাবদ ১ লাখ ৮৫ হাজার টাকা চাইলে নুরুজ্জামান তার কথামতো ডাচ বাংলা ব্যাংকের উত্তরা শাখার একটি অ্যাকউন্টে তা জমা দেন।
গত ৩ অক্টোবর সকাল ৮টায় একটি নম্বর থেকে অজ্ঞাতপরিচয় একজন ফোন করে নিজেকে ঢাকা বিমানবন্দরের কাস্টমস কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে নুরুজ্জামানের দুটি ল্যাগেজ কাস্টমসে আটকে থাকার কথা জানান।
লাগেজ দুটি ছাড়াতে ৪ লাখ সাত হাজার টাকা দেওয়ার কথা বললে নুরুজ্জামান তাদের কথামতো ইসলামী ব্যাংকের একটি অ্যাকাউন্টে তা জমা দেন।
এরপর নুরুজ্জামান কথিত কাস্টমস কর্মকর্তার কথামতো আয়কর ও ট্যাক্স বাবদ আরও ১১ লাখ ৭৫ হাজার টাকা ইসলামী ব্যাংকের আরেকটি অ্যাকাউন্টে জমা দেন। এসব টাকা দেওয়ার পরও তারা নুরুজ্জামানের কাছে আরও ১০ লাখ ৫০ হাজার টাকা চায়।
এভাবে বার বার টাকা চাওয়ায় নুরুজ্জামানের সন্দেহ হলে তিনি বিমানবন্দর কাস্টমসের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানতে পারেন এটি একটি সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্রের কাজ। এভাবে চক্রটি বাদীর কাছ থেকে সবমিলে ১৭ লাখ ৬৭ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয়।
ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে, পান্না বেগম সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্রের সদস্য হিসেবে মূলত আন্না হ্যারিসন নামে ফেইক ফেইসবুক আইডি পরিচালনা করতেন। নিজেকে কাস্টমস অফিসার পরিচয় দিয়ে ভিকটিমদের ফোন করে তাদের কাছে টাকাও চাইতেন তিনি। চক্রটি দীর্ঘদিন একই কৌশলে অসংখ্য মানুষকে ফাঁদে ফেলে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।
পুলিশ কর্মকর্তা তালেবুর জানান, গ্রেপ্তার পান্না বেগমের বিরুদ্ধে নিউ মার্কেট থানায় আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। প্রতারক চক্রের অন্য সদস্যদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।