Beta
শনিবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৫
Beta
শনিবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৫

ফেব্রুয়ারিতে রপ্তানি আয় বেড়েছে ১২ শতাংশ

ডলার
ডলার
[publishpress_authors_box]

দেশের বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের অন্যতম প্রধান উৎস রপ্তানি আয় এক বছরের ব্যবধানে বেড়েছে ১২ শতাংশের বেশি।

সোমবার রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) প্রকাশিত হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী, ফেব্রুয়ারিতে ৫১৮ কোটি ৭৫ লাখ (৫ দশমিক ১৮ বিলিয়ন) ডলার দেশে এনেছেন রপ্তানিকারকরা।

এই সংখ্যা গত বছরের ফেব্রুয়ারির চেয়ে ১২ দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ বেশি। সেসময় রপ্তানি আয় এসেছিল ৪৬৩ কোটি (৪ দশমিক ৬৩ বিলিয়ন) ডলারের।

রপ্তানি আয়ের তথ্যে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন রপ্তানিকারক ও অর্থনীতিবিদরা। তারা বলেছেন, এই ইতিবাচক ধারা অব্যাহত থাকলে রিজার্ভের উপর যে চাপ রয়েছে তা কেটে যাবে। অর্থনীতিতে স্বস্তি ফিরে আসতে শুরু করবে।

অন্যদিকে ইপিবির এই তথ্যের সঙ্গে একমত নন নিট পোশাক শিল্পমালিকদের সংগঠন বিটিএমইএ’র নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম। তিনি বলছেন, নানা সংকটের কারণে নিট পোশাক শিল্প ভালো নেই। কোনও কারখানারই রপ্তানি তথ্য ভালো নয়। এ অবস্থায় ইপিবির তথ্য নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেন তিনি।

ফেব্রুয়ারিতে এক বছরের ব্যবধানে রপ্তানি আয় বাড়লেও তা চলতি বছরের জানুয়ারির চেয়ে কম। বছরের প্রথম মাসে রপ্তানি আয় হয়েছিল ৫৭২ কোটি ৪৩ লাখ (৫ দশমিক ৭২ বিলিয়ন) ডলার। যা একক মাসের হিসাবে অতীতের যেকোনো মাসের চেয়ে বেশি।

এর আগে ২০২২ সালের ডিসেম্বরে পণ্য রপ্তানি থেকে ৫৩৬ কোটি ৫২ লাখ (৬ দশমিক ৩৬ বিলিয়ন) ডলার আয় করেছিল বাংলাদেশ; যা এক মাসের হিসাবে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ।

সব মিলিয়ে চলতি অর্থবছরের প্রথম আট মাসে (জুলাই-ফেব্রুয়ারি) পণ্য রপ্তানি থেকে ৩ হাজার ৮৪৫ কোটি ২২ লাখ (৩৩ দশমিক ২৬ বিলিয়ন) ডলার আয় করেছে বাংলাদেশ। এই অংক গত ২০২২-২৩ অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ৩ দশমিক ৭১ শতাংশ বেশি।

অবশ্য নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৬ দশমিক ৪৮ শতাংশ কম।

সদ্য শেষ হওয়া ফেব্রুয়ারি মাসে রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৫ দশমিক ২৩ বিলিয়ন ডলার। যার বিপরীতে আয় হয়েছে ৫ দশমিক ১৮ বিলিয়ন ডলার। সে হিসেবে, রপ্তানি আয় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে দশমিক ৯৮ শতাংশ কম এসেছে।

ইপিবির তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাস শেষে (জুলাই–অক্টোবর) পণ্য রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি ছিল ৩ দশমিক ৫২ শতাংশ। তবে টানা তিন মাস (অক্টোবর, নভেম্বর ও ডিসেম্বর) প্রবৃদ্ধি কমায় ছয় মাসের (জুলাই-ডিসেম্বর) হিসাবে সামগ্রিক পণ্য রপ্তানি বৃদ্ধির গতি কমে দশমিক ৮৪ শতাংশে নেমে আসে।

জানুয়ারিতে রপ্তানি বাড়ায় প্রবৃদ্ধি বেড়ে ২ দশমিক ৫২ শতাংশে ওঠে। ফেব্রুয়ারি শেষে তা আরও বেড়ে ৩ দশমিক ৭১ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।

৮৫ দশমিক ৪৫ শতাংশই এসেছে পোশাক থেকে

জুলাই-ফেব্রুয়ারি সময়ে দেশের রপ্তানি আয়ের প্রধান খাত তৈরি পোশাক শিল্প থেকে এসেছে ৩২ দশমিক ৮৫ বিলিয়ন ডলার। যা গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ৪ দশমিক ৭৭ শতাংশ বেশি। তবে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আয় কমেছে ৫ দশমিক ২২ শতাংশ।

এর মধ্যে নিট পোশাক রপ্তানি থেকে এসেছে ১৮ দশমিক ৫৯ বিলিয়ন ডলার; প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৮ দশমিক ৯৮ শতাংশ। তবে লক্ষ্যের চেয়ে আয় কমেছে ১ দশমিক ৩৯ শতাংশ।

ওভেন পোশাক থেকে এসেছে ১৪ দশমিক ২৬ বিলিয়ন ডলার; গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে আয় কমেছে দশমিক ২৬ শতাংশ। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে কমেছে ৯ দশমিক ৭৮ শতাংশ।

এই আট মাসে পোশাক খাত থেকে আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩৪ দশমিক ৬৬ বিলিয়ন ডলার।

গত ২০২২-২৩ অর্থবছরের জুলাই-ফেব্রুয়ারি সময়ে তৈরি পোশাক রপ্তানি থেকে আয় হয়েছিল ৩১ দশমিক ৩৬ বিলিয়ন ডলার।

ইপিবির হিসাব বলছে, জুলাই-ফেব্রুয়ারি—এই আট মাসে মোট রপ্তানি আয়ের ৮৫ দশমিক ৪৫ শতাংশই এসেছে তৈরি পোশাক রপ্তানি থেকে।

পোশাক রপ্তানিকারকদের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি বাংলাদেশ চেম্বারের বর্তমান সভাপতি আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী পারভেজ সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “এটা ভালো যে, জানুয়ারির পর ফেব্রুয়ারি মাসেও সার্বিক রপ্তানি ৫ বিলিয়ন ডলারের বেশি হয়েছে। কিন্তু মনে রাখতে হবে, নানা বাধা বিপত্তির মধ্য দিয়ে যাচ্ছি আমরা। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ধাক্কা এখনও লেগে আছে।

“মূল্যস্ফীতি বাড়ায় আমাদের প্রধান বাজার ইউরোপ-আমেরিকার মানুষ পোশাক কেনা কমিয়ে দিয়েছে। তাদের এখন খাবারের পেছনে বেশি ব্যয় করতে হচ্ছে। সব মিলিয়ে আমাদের এখন খারাপ সময় যাচ্ছে।”

ফেব্রুয়ারিতে রেকর্ড ২.১৬ বিলিয়ন ডলার রেমিটেন্স

এর মধ্যেও পর পর দুই মাস ভালো রপ্তানিতে আশান্বিত এই ব্যবসায়ী নেতা। তবে আগামী দিনগুলোতেও এই ধারা অব্যাহত থাকবে কিনা তা নিয়ে চিন্তার কথা জানালেন।

ইতিবাচক ধারা অব্যাহত থাকলে রিজার্ভের উপর চাপ কেটে যাবে বলেও মনে করেন তিনি।

তবে হতাশার কথা শুনিয়েছেন নিট পোশাক শিল্পমালিকদের সংগঠন বিটিএমইএ’র নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম। সকাল সন্ধ্যাকে তিনি বলেন, “ইপিবির তথ্যের সঙ্গে আমরা আমাদের রপ্তানির তথ্যের মিল খুঁজে পাচ্ছি না। আমাদের সবার রপ্তানি কমছে, আমরা কেউ ভালো নেই। অথচ ইপিবি বলছে, রপ্তানি বাড়ছে। ইপিবির তথ্য নিয়ে আমাদের প্রশ্ন আছে।”

আগামী দিনগুলো কেমন যাবে—এ প্রশ্নের উত্তরে হাতেম বলেন, “ভালো যাওয়ার কোনো লক্ষণ আমরা দেখতে পাচ্ছি না। গ্যাস সংকট লেগেই আছে। বিশ্ব পরিস্থিতিও ভালো না। বিদ্যুতের দাম বেড়েছে। এর মধ্যে রপ্তানি বাড়ার আশা করা বোকামি ছাড়া আর কিছু নয়।”

অর্থনীতির গবেষক পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “এই সংকটের সময় রপ্তানি আয় বাড়া স্বস্তির খবর। এই আয় রিজার্ভের পতন ঠেতাতে সহায়তা করবে।”

তবে আত্মতুষ্টিতে না ভুগে এই ইতিবাচক ধারা যাতে আগামী দিনগুলোতে অব্যাহত থাকে সেটার দিকে রপ্তানিকারক ও সরকারকে মনোযোগ দেওয়ার পরামর্শ দেন এই অর্থনীতিবিদ।

“মনে রাখতে হবে—এই মুহূর্তে রপ্তানি আয় যদি কমে যেত, তাহলে আমাদের রিজার্ভ কিন্তু আরও কমে যেত। তাতে অর্থনীতিতে সংকট আরও বাড়ত। তাই আমি মনে করি, রিজার্ভের প্রধান দুই উৎস রপ্তানি আয় ও প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্স যেনো বাড়ে, সেদিকেই সবার সজাগ দৃষ্টি রাখা উচিৎ।”

অন্যান্য খাত

তৈরি পোশাক ছাড়া অন্য সব খাতেই রপ্তানি আয় কমেছে। চলতি অর্থবছরের আট মাসে (জুলাই-ফেব্রুয়ারি) হিমায়তি মাছ রপ্তানি কমেছে ১৪ দশমিক ১০ শতাংশ। চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি থেকে আয় কমেছে ১৪ দশমিক ৩৮ শতাংশ।

পাট ও পাটজাত পণ্য থেকে আয় কমেছে ৪ দশমিক ৬৮ শতাংশ। হোম টেক্সটাইল রপ্তানি থেকে আয় কমেছে ২৯ দশমিক ৯৪ শতাংশ।

তবে এই আট মাসে ওষুধ রপ্তানি থেকে আয় ১২ দশমিক ৬৭ শতাংশ বেড়েছে। প্লাস্টিক পণ্য রপ্তানি থেকে আয় বেড়েছে ১৬ দশমিক ৮২ শতাংশ।

চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরে পণ্য রপ্তানি থেকে ৬২ বিলিয়ন ডলার আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরেছে সরকার। এর মধ্যে ৮৪ দশমিক ৩০ শতাংশ (৫২ দশমিক ২৭ বিলিয়ন) তৈরি পোশাক থেকে আয়ের লক্ষ্য ধরা হয়েছে।

গত ২০২২-২৩ অর্থবছরে পণ্য রপ্তানি থেকে সব মিলিয়ে ৫৫ দশমিক ৫৬ বিলিয়ন ডলার আয় করেছিল বাংলাদেশ। এর মধ্যে ৪৭ বিলিয়ন ডলারই এসেছিল তৈরি পোশাক থেকে।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত