Beta
সোমবার, ১৭ মার্চ, ২০২৫
Beta
সোমবার, ১৭ মার্চ, ২০২৫

বঙ্গোপসাগরে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে ৫৫ কোম্পানিকে দরপত্রের আহ্বান

সোমবার পেট্রোবাংলা অডিটোরিয়ামে ‘বাংলাদেশ অফশোর বিডিং রাউন্ড ২০২৪-এর অধীনে তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাস অনুসন্ধান’ বিষয়ে সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ। ছবি : পিআইডি
সোমবার পেট্রোবাংলা অডিটোরিয়ামে ‘বাংলাদেশ অফশোর বিডিং রাউন্ড ২০২৪-এর অধীনে তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাস অনুসন্ধান’ বিষয়ে সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ। ছবি : পিআইডি
[publishpress_authors_box]

বঙ্গোপসাগরে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে এমন ৫৫ কোম্পানিকে দরপত্রের আমন্ত্রণ পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী। তিনি বলেন, দরপত্র আকর্ষণীয় করতে এবার নতুন নতুন বিষয় যুক্ত করা হয়েছে, এতে বিদেশি কোম্পানি আগ্রহী হবে।    

সমুদ্রে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানকে আরও বেগবান করতে বাংলাদেশ অফশোর বিডিং ২০২৪ ঘোষণা করেছে। গভীর সমুদ্রে চিহ্নিত ২৪টি ব্লকের জন্য শুরু হয়েছে এই বিডিং রাউন্ড। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, বিশ্বসেরা প্রতিষ্ঠানগুলো এই বিডিংয়ে অংশগ্রহণ করবে। ওপেন টেন্ডারের মাধ্যমেই কাজটি করা হবে। 

রবিবার (১০ মার্চ) পেট্রোবাংলার ওয়েবসাইট, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে সমুদ্রে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের সুযোগ দিয়ে দরপত্র আহ্বান করে পেট্রোবাংলা।

এর পরদিন সোমবার পেট্রোবাংলা অডিটোরিয়ামে ‘বাংলাদেশ অফশোর বিডিং রাউন্ড ২০২৪-এর অধীনে তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাস অনুসন্ধান’বিষয়ে সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ।

সেখানে উপস্থিত ছিলেন, প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী এবং বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ।

সংবাদ সম্মেলনে বিডিংয়ের বিভিন্ন তথ্য উপস্থাপন করা হয়। সেখানে জানানো হয়, পেট্রোবাংলা আন্তর্জাতিক তেল ও গ্যাস কোম্পানিগুলোকে (আইওসি) আমন্ত্রণ জানিয়েছে। 

তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী বলেন, “দরপত্র আরও আকর্ষণীয় করতে এ বছর, আমরা কিছু নতুন বিষয় চালু করেছি। যেমন- ব্রেন্টের সঙ্গে গ্যাসের দাম সংযুক্ত করা হয়েছে। একইসঙ্গে প্রতি বছর সর্বোচ্চ ৭৫ শতাংশ ব্যয় পুনরুদ্ধারের বিষয়টিও যুক্ত করা হয়েছে।

“তেল ও গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য অফশোর বিডিংয়ে অংশগ্রহণকারী প্রতিষ্ঠানকে সব ধরনের ট্যাক্স থেকে মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে। এতে বিডিংয়ে বিদেশি কোম্পানি আগ্রহী হবে।”

“এবারের বিডিংয়ে কতগুলো আকর্ষণীয় দিক রয়েছে। এবার ব্রেন্ট ক্রুডের সঙ্গে সামঞ্জস্য রাখা হয়েছে। ক্রুডের দাম বেড়ে গেলে তারা কিছুটা সুবিধা পাবে, আর দাম কমে গেলে আমরা সুবিধা পাব। ফ্যাক্টর আর রাখা হয়েছে। এতে তারা উৎপাদন বাড়াতে আগ্রহী হবে। কোম্পানিগুলোর গাফিলতির জন্য কোনও রকম দুর্ঘটনা ঘটলে দায়ভার তাদের বহন করতে হবে।”

“সম্ভাব্য দরদাতা হিসেবে সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে এমন ৫৫টি আইওসিকে দরপত্রের আমন্ত্রণ পাঠানো হয়েছে,” যোগ করেন প্রধানমন্ত্রীর এই উপদেষ্টা।

সংবাদ সম্মেলনে তিনি ভূ-রাজনীতি সম্পর্কে একটি প্রশ্ন এড়িয়ে গেছেন, যা নিলাম রাউন্ডে আইওসির অংশগ্রহণের একটি কারণ হতে পারে।

প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, “গভীর সমুদ্রে চিহ্নিত ২৪টি ব্লকের বিডিং রাউন্ড আমরা শুরু করতে যাচ্ছি। আমরা চাচ্ছি বিশ্বসেরা প্রতিষ্ঠানগুলো প্রতিযোগিতামূলকভাবে এই অফশোর বিডিংয়ে অংশগ্রহণ করুক।

“ওপেন টেন্ডারের মাধ্যমেই কাজটি করা হবে। আশা করছি, আগামী সেপ্টেম্বরে বিডিং শেষ হবে। রমজানের পর প্রমোশনাল সেমিনার করা হবে। সেখানে বিদেশিরা অংশগ্রহণ করবে।”  

জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের সচিব নুরুল আলম তার বক্তব্যে বলেন, অফশোরের পাশাপাশি অনশোরেও আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বানের পরিকল্পনা করা হচ্ছে। সাগরে বাপেক্সের ক্যারিড শেয়ার ১০ শতাংশ থাকবে।

পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান জনেন্দ্র নাথ সরকার বলেন, সাগরের তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে ২৪টি ব্লকে ১০ মার্চ আন্তর্জাতিক দরপত্র উন্মুক্ত করছে পেট্রোবাংলা।

তিনি বলেন, পেট্রোবাংলা ডাটার জন্য পৃথক আটটি প্যাকেজ প্রস্তুত করেছে, যেগুলো কিনতে পারবে আগ্রহী প্রতিষ্ঠান। আর কিছু ডেটা রয়েছে, যেগুলো ফ্রি দেখার সুযোগ পাবে কোম্পানিগুলো। এছাড়া স্লামবার্জার ১২ হাজার ৯৩২ লাইন কিলোমিটার ২ডি জরিপ করেছে। সেই জরিপের ডেটাও কিনতে পারবে। কোনও কোম্পানি এক অথবা একাধিক ব্লকের জন্য আবেদন করতে পারবে।

২০১৬ সালে অফশোরে মাল্টিক্লায়েন্ট সার্ভের কাজ শুরু হয়। টেন্ডার প্রসেস করতে গিয়ে ৩ বছর ও কোভিডের কারণে ২ বছর পিছিয়ে যায়। এখন গভীর সমুদ্রের ১৩ হাজার কিলোমিটারের ডেটা বাংলাদেশের হাতে চলে আসায় যুক্তরাষ্ট্রসহ বেশ কয়েকটি দেশ এখানে কাজ করতে আগ্রহ দেখিয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, দরপত্র জমা দেওয়ার জন্য ছয় মাস (৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত) সময় পাবে বহুজাতিক তেল-গ্যাস কোম্পানিগুলো।

এক নজরে মডেল পিএসসি ২০২৩

২০১৯ সালে অফশোর ও অনশোরের জন্য আলাদাভাবে উৎপাদন অংশীদারি চুক্তি (পিএসসি) হালনাগাদ করা হলেও কোভিড-১৯ অতিমারীর জন্য বিড রাউন্ড আয়োজন সম্ভব হয়নি। তবে কোভিডের কারণে বিশ্ব অর্থনীতির সঙ্গে সঙ্গে তেলের বাজারেও বেশ অস্থিরতা দেখা যায়। ফলে অনুসন্ধান কার্যক্রমে ভাটা লক্ষ করা যায়।

সেই প্রেক্ষিতে অফশোর মডেল পিএসসি ২০১৯-কে বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে আরও যুগোপযোগী ও প্রতিযোগিতামূলক করার লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক পরামর্শক নিয়োগ করা হয়। পরবর্তী সময়ে পরামর্শকের মতামত ও পেট্রোবাংলার নিজস্ব পর্যালোচনার উপর ভিত্তি করে বাংলাদেশ অফশোর মডেল পিএসসি ২০২৩ প্রণয়ন করা হয়, যা ২০২৩ সালের ২৬ জুলাই অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি অনুমোদন দিয়েছে। 

নতুন পিএসসির আকর্ষণীয় দিক  

>> নতুন পিএসসিতে আন্তর্জাতিক তেল কোম্পানিগুলোকে বাংলাদেশের সমুদ্র এলাকায় অনুসন্ধানের সুযোগ সৃষ্টির লক্ষ্যে বেশ কিছু আকর্ষণীয় বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এর মধ্যে অন্যতম হলো, গভীর ও অগভীর সমুদ্রাঞ্চলের উভয়ের জন্য বার্ষিক ব্যয় পুনরুদ্ধার সর্বোচ্চ ৭৫ শতাংশ করা। এই পরিবর্তনের ফলে কন্ট্রাক্টর তার বিনিয়োগকৃত অর্থ দ্রুত ফেরত পাওয়ায় একদিকে উৎসাহিত হবে, অন্যদিকে ব্যয় পুনরুদ্ধার দ্রুত শেষ হলে পেট্রোবাংলা তথা সরকারও দ্রুত অধিক হারে লভ্যাংশ প্রাপ্ত হবে।

 >> লভ্যাংশ ভাগাভাগির ক্ষেত্রে পিএসসিতে পরিবর্তন আনা হয়েছে। ইতঃপূর্বে পিএসসিতে প্রফিট শেয়ারিংয়ের পদ্ধতি প্রোডাকশন বেজড ছিল, যা বর্তমান পিএসসিতে প্রফিটাবিলিটি বেজড (আর-ফ্যাক্টর) অনুসরণে করা হয়েছে। এ পদ্ধতিতে কন্ট্রাক্টরের বিনিয়োগকৃত অর্থ যৌক্তিক সময়ে ফেরত প্রাপ্তির বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছে সঙ্গে লভ্যাংশ শেয়ারের আপার লিমিট ও লোয়ার লিমিট বিডেবল রাখার কারণে সরকারের আরও বেশি লভ্যাংশ প্রাপ্তির সুযোগ রাখা হয়েছে।

 >> গ্যাসের মূল্য নির্ধারণের ক্ষেত্রে ইতঃপূর্বে ব্যবহৃত মার্কার প্রাইস এইচএসএফও- এর পরিবর্তে অগভীর ও গভীর সমুদ্রাঞ্চলের গ্যাসের মূল্য নির্ধারণের জন্য মার্কার প্রাইস হিসেবে ব্রেন্ট ব্যবহার করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে গ্যাসের মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ব্রেন্টের ১০ শতাংশ। আগের মতো ফ্লোর ও সিলিং না থাকায় গ্যাসের মূল্য আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সংযুক্ত হয়েছে।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত