কোটা সংস্কার আন্দোলনের মধ্যে গত ১৬ জুলাই ৬ জনের মৃত্যুর ঘটনা উদ্ঘাটনে গণবিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে নাগরিকদের কাছে তথ্য চাওয়া হবে বলে জানিয়েছে বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশন।
বুধবার সুপ্রিমকোর্ট অডিটোরিয়ামে এক বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান কমিশনের প্রধান হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি খোন্দকার দিলীরুজ্জামান।
তিনি বলেন, “সরকারি চাকরিতে কোটা বিলুপ্ত করে ২০১৮ সালে সরকার এক প্রজ্ঞাপন জারি করে। তার প্রেক্ষিতে কয়েকজন বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হাইকোর্ট বিভাগে রিট দায়ের করেন। গত ৫ জুলাই হাইকোর্ট বিভাগের একটি বেঞ্চ কোটা বিলুপ্তির বিজ্ঞপ্তিটি বাতিল করে দেন। এরপর ছাত্র-ছাত্রীগণ আন্দোলন শুরু করেন। এই আন্দোলন চলাকালীন গত ১৬ জুলাই সারাদেশে এক অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি তৈরি হয়। তাতে ৬ জন ব্যক্তি মৃত্যুবরণ করেন।
“তার প্রেক্ষিতে গত ১৮ জুলাই সরকার আমাকে দিয়ে এক সদস্য বিশিষ্ট কমিশন গঠন করে দেন। এরই মধ্যে কমিশন তার কাজ শুরু করেছে। তারই আলোকে আজকে (বুধবার) কমিশনের প্রথম মিটিং হলো। গণবিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে বিভিন্ন নাগরিকের কাছে যেসব তথ্য আছে, সেগুলো আহ্বান করব।”
কমিশন শুধু ৬ জনের ক্ষেত্রেই তদন্ত কাজ করবে কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “আমাদের যে টার্মস অব রেফারেন্স আছে, সে অনুসারে করবো। এখন পর্যন্ত এই ছয়জনের ব্যাপারে বলা আছে।”
৬ জনের বাইরে আরও যে মৃত্যু আছে সে বিষয়ে আপনাদের বক্তব্য কি জানতে চাইলে বিচারপতি খোন্দকার দিলীরুজ্জামান বলেন, “সে বিষয়ে আইনানুগ যে কার্যক্রম রয়েছে সেটা চলতে থাকবে। পরিস্থিতি আরও একটু স্বাভাবিক হলে আমরা অবশ্যই ঘটনাস্থলগুলো পরিদর্শন করব।”
ঘটনার এত দিন পরেও কেন ঘটনাস্থলে যাওয়া হলো না—এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “যেহেতু একটি অস্বাভাবিক পরিস্থিতি বিরাজ করছিল, কারফিউ ছিল, ছুটি ছিল। যে কারণে তাৎক্ষণিকভাবে সেখানে পৌঁছানো সম্ভব হয়নি। আমরা চেষ্টা করব সকল ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করার জন্য।”
তাকে যে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, সে দায়িত্ব সততা, নিষ্ঠা এবং স্বচ্ছতার মাধ্যমে পালন করবেন বলেও জানান এই বিচারপতি।
মৃত্যুর কারণ উদ্ঘাটন, মৃত্যুর জন্য দায়ী কারা- তা চিহ্নিতকরণ এবং ৫ থেকে ১৬ জুলাই অগ্নিসংযোগ, লুটপাট, সন্ত্রাসী কার্যক্রমের তথ্যাদি আগামী ৬ আগস্টের মধ্যে ডাকযোগে বা মেইলের মাধ্যমে পাঠানো যাবে বলেও জানান তিনি।
কমিশনের প্রথম দিনের বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব (সমন্বয় ও সংস্কার বিভাগ) মো. মাহমুদুল হোসাইন খান, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব জাহেদা পারভীন, উপসচিব তানভীর আহমেদ ও হাইকোর্ট বিভাগের রেজিস্ট্রার মুন্সী মশিয়ার রহমান।
কোটা সংস্কার আন্দোলনের মধ্যে গত ১৬ জুলাই ৬ জনের মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। ১৮ জুলাই এ ঘটনা তদন্তের জন্য বিচার বিভাগীয় কমিশন করে সরকার। ১৯ জুলাই কমিশনের প্রধান হিসেবে বিচারপতি খোন্দকার দিলীরুজ্জামান দায়িত্বভার গ্রহণ করেন।
এ কমিশনকে আগামী ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে সরকারের কাছে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে।