ঢাকার সড়কে দুই বাসের পাল্লা দেওয়ার বলি হয়েছিল কলেজ ছাত্র রাজীব হোসেন। দুই বাসচালককে আসামি করে মামলা হলেও ছয় বছরেও শেষ হয়নি বিচার। উচ্চ আদালত রাজীবের পরিবারকে ৫০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণের আদেশ দিয়েছিল, তার মধ্যে মিলেছে মাত্র ৫ লাখ টাকা।
রাজীব ২০১৮ সালের ৩ এপ্রিল বিআরটিসির একটি দোতলা বাসের পেছনের ফটকে দাঁড়িয়ে যাচ্ছিলেন। মহাখালীর সরকারি তিতুমীর কলেজের স্নাতক (বাণিজ্য) দ্বিতীয় বর্ষে পড়ছিলেন তিনি, তার বয়স ছিল ২১ বছর।
বিআরটিসি বাসে চলার সময় রাজীবের ডান হাত ছিল ফটকের বাইরে। বাসটি কারওয়ান বাজারে পৌঁছলে পেছনে থাকা স্বজন পরিবহনের একটি বাস বিআরটিসি বাসটিকে অতিক্রম করতে যায়।
শুরু হয় দুই বাসের প্রতিযোগিতা, যেমন ঘটনা হরহামেশা দেখা যায় রাজধানীতে। এক পর্যায়ে বাস দুটির চাপে পড়ে রাজীবের বেরিয়ে থাকা হাতটি শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।
গুরুতর আহত রাজীবকে প্রথমে ঢাকার পান্থপথের শমরিতা হাসপাতালে নেওয়া হয়েছিল। পরে বর্তি করা হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। ১৬ এপ্রিল রাজীবের মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ শুরু হয়। দুই সপ্তাহ মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করে ১৭ এপ্রিল হার মানেন তিনি।
রাজীবের মৃত্যুর ঘটনায় করা মামলায় ২০২০ সালের ২ ফেব্রুয়ারি বিআরটিসি বাসের চালক ওয়াহিদ এবং স্বজন পরিবহনের চালক মো. খোরশেদের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয় শাহবাগ থানা পুলিশ। তারপর ঢাকার আদালতে বিচার শুরু হলেও এখনও শেষ হয়নি।
রাজীবের খালা জাহানারা বেগম সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “সাক্ষ্যগ্রহণ চলছে। আমরা আমাদের সাক্ষ্য দিয়েছি। এখনও রায় হয়নি।”
এদিকে ঘটনার একদিন পর ৪ এপ্রিল রাজীবের চিকিৎসা ও ক্ষতিপূরণের নির্দেশ চেয়ে হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী রুহুল কুদ্দুস কাজল।
হাইকোর্ট রাজীবের পরিবারকে এক কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছিল। সেই রুল শুনানি শেষে ৫০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে নির্দেশ দেয় বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি মো. খায়রুল আলমের হাইকোর্ট বেঞ্চ।
রায়ে বেসরকারি স্বজন পরিবহন এবং রাষ্ট্র মালিকানাধীন বিআরটিসিকে ক্ষতিপূরণের টাকা সমানভাগে দিতে বলা হয়। প্রাথমিক ক্ষতিপূরণ ১০ লাখ টাকা নির্ধারণ করেছিল উচ্চ আদালত।
স্বজন পরিবহন রাজীবের পরিবারকে ৫ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দিয়ে হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আবেদন করে। সেই আপিল এখন শুনানির অপেক্ষায় আছে।
রাজীবের খালা জাহানারা বলেন, “হাইকোর্টের আদেশের পর প্রথমে ৫ লাখ টাকা দিয়েছিল। এরপর আর কোনও টাকা পাইনি।”
রাজীবের ছোট দুই ভাই এখন মাদ্রাসায় পড়ছে। এর মধ্যে একজন আলিম (এইচএসসি) পরীক্ষা দেবে। আরেকজন প্রথম বর্ষে পড়ছে বলে জানান রাজীবের খালা।
ক্ষতিপূরণের মামলা সম্পর্কে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী রুহুল কুদ্দুস কাজল সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “হাইকোর্টের আদেশের পরে স্বজন পরিবহন ৫ লাখ টাকা দেয়। এরপর তারা আর কোনও টাকা দেয়নি। মামলাটি শুনানির জন্য এখন আপিল বিভাগে আছে। আপিল বিভাগ সাল অনুসারে শুনানি করে। সে অনুসারে এই মামলা যখন তালিকায় আসবে, তখন আমরা শুনানি করব।”