ঢাকার ওপর থেকে মানুষের চাপ সরাতে দেশের অন্যান্য সিটি করপোরেশন ও জেলা শহরে সুযোগ সুবিধা বাড়িয়ে বিকেন্দ্রীকরণের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।
এ জন্য ‘রিজিলিয়েন্ট আরবান অ্যান্ড টেরিটরিয়াল ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট (আরইউটিডিপি)’ শীর্ষক একটি প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে সরকার।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের অধীনে এ প্রকল্প বাস্তবায়য়েন ব্যয় হবে প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকা।
সোমবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় প্রকল্পটি অনুমোদন দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন শিক্ষা ও পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ।
এদিন সকালে রাজধানীর তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে এ সভা হয়। এরপর বিকালে শেরেবাংলা নগরের জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) সম্মেলন কেন্দ্রে একনেক সভা-পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে এ প্রকল্প অনুমোদনের কথা জানান শিক্ষা ও পরিকল্পনা উপদেষ্টা।
অন্তর্বর্তী সরকারের দ্বিতীয় ও চলতি অর্থবছরের তৃতীয় এই একনেক সভায় প্রায় ২৪ হাজার ৪১৩ কোটি টাকা ব্যয়ের চারটি প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
এরমধ্যে বৈদেশিক সহায়তা হিসেবে পাওয়া যাবে ১৬ হাজার ১২ কোটি টাকা। সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে প্রায় ৭ হাজার ৭৪৭ কোটি টাকা এবং প্রায় ৬৫৪ কোটি টাকা সংস্থার নিজস্ব তহবিল থেকে জোগান দেওয়া হবে।
এছাড়া রাস্তাঘাট নির্মাণের কয়েকটি প্রকল্পের ব্যয় বৃদ্ধি না করে মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে এই একনেক সভায়।
সংবাদ সম্মেলনে ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, “ঢাকাকে এতো আকর্ষণীয় সবাই মনে করে; আমাদের তো আসলে যেভাবে হোক ঢাকাভিত্তিক যে নগরায়ণ হয়েছে এর বিকেন্দ্রীকরণ আমাদের করতেই হবে। সেজন্য বিকেন্দ্রীকরণের দিক থেকে বাইরের যে বড় বড় সিটি করপোরেশন ও জেলাগুলো আছে, সেগুলোতে যদি সুযোগ সুবিধা বাড়ানো যায়—এ জন্য ‘রিজিলিয়েন্ট আরবান অ্যান্ড টেরিটরিয়াল ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট (আরইউটিডিপি)’ শীর্ষক প্রকল্পটি গ্রহণ করা হয়েছে।”
বৈদেশিক সহায়তা দিয়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, “আমরা বিদেশিদের সাথে আগেই বলে নিয়েছি যে প্রকল্প আমরা পাশ করছি। এগুলো নীতিগতভাবে ভালো প্রকল্প। নগরায়ণের বিকেন্দ্রীকরণ হওয়া দরকার। তাতে শিল্পেরও বিকেন্দ্রীকরণ হবে। এবং ঢাকার উপর চাপ কমবে। আমরা চাই যে সারাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের সিটি করপোরেশনগুলোতেও কিছু হোক।
“এই প্রকল্প অনুমোদন দেওয়ার আরেকটা যুক্তি হলো ঢাকার আশে পাশের যে শহরগুলো- এগুলোও যদি উন্নত হয় তাহলে ঢাকা সহজেই বিস্তৃতি লাভ করবে। একইভাবে দেশের অন্যান্য সিটি করপোরেশনগুলোর সঙ্গে তার পাশের জেলাশহরগুলোও যদি বাসযোগ্য হয় নাগরিক সুযোগ সুবিধা থাকে তাহলে ওখানেও অনেকে থাকতে চাইবে।”
“এই প্রকল্পে আমরা বড় বড় অট্টালিকা বা দালান বানানোর চেয়ে নাগরিক সুযোগ সুবিধা- পয়ঃনিষ্কাশন, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে যা করার প্রয়োজন করার- যেমন বন্যা নিয়ন্ত্রণ কারণ এখানে শিল্পায়ন হবে।”
এই প্রকল্পে স্থানীয় সরকার উপদেষ্টার আপত্তি ছিল উল্লেখ করে তিনি বলেন, “এগুলো যদি এখনই পাস করে না দেওয়া হয়, এগুলো যদি আমরা সংশোধন করতে যায়, তাহলে এ বছরের শেষ পর্যন্ত বৈদেশিক সাহায্যের যা বরাদ্দ আছে, সেটা আবার চলে যাবে। আবার নতুন করে তাদের সাথে নেগোশিয়েট করতে হবে।”
ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, খুলনা ও রংপুর- এই পাঁচ বিভাগের ৩৭টি জেলার ৬টি সিটি করপোরেশন ও ৮১টি পৌরসভায় এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে, যা এর প্রস্তাবনায় দেখা যায়।
নির্বাচিত তিনটি অর্থনৈতিক গ্রোথ করিডোরের অন্তর্ভুক্ত ৬টি সিটি করপোরেশন ও ৮১টি পৌরসভার জলবায়ু সহনশীল নগর অবকাঠামো উন্নয়ন ও পরিষেবাসমূহ বৃদ্ধি করা এবং বর্ণিত পৌরসভা ও সিটি করপোরেশনগুলোর বিভিন্ন পরিকল্পনা প্রণয়ন, বাস্তবায়ন ও রক্ষণাবেক্ষণ কাজের দক্ষতা বৃদ্ধি করা হবে।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের অধীনে বাস্তবায়ন হতে যাওয়া এ প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয়েছে ৫ হাজার ৯০১ কোটি টাকা। এরমধ্যে বিশ্বব্যাংক প্রায় ৪ হাজার ২৬০ কোটি টাকার প্রকল্প সহায়তা দিচ্ছে। বাকি অর্থ সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে জোগান দেওয়া হবে।
প্রকল্পটির আওতায় দেশের ছয় সিটি করপোরেশনের ৮৮০ কিলোমিটার নগর সড়ক উন্নয়ন, দুই হাজার মিটার সেতু-কালভার্ট নির্মাণ, ২০০ কিলোমিটার ওয়াকওয়ে-ফুটপাথ নির্মাণ, ৫৯৫ কিলোমিটার স্ট্রিট লাইট স্থাপন, ১০টি বাস টার্মিনাল নির্মাণ, ১০টি কিচেন মার্কেট নির্মাণ, ১০টি পৌর সুপার মার্কেট নির্মাণ, ড্রেন, প্রটেকটিভ রিটেইনিং ওয়াল নির্মাণ, ১০টি পার্ক-পাবলিক প্লেস উন্নয়ন, ১০টি মার্কেট কাম-কমিউনিটি সেন্টার, ২০টি পাবলিক টয়লেট ও দিনাজপুরে ১টি মিউনিসিপ্যাল ভবন নির্মাণ করা হবে।
বৈঠকে অনুমোদন পাওয়া অন্য প্রকল্পগুলো হচ্ছে-
>> ‘সাসেক সড়ক সংযোগ প্রকল্প- ২ : এলেঙ্গা-হাটিকামরুল-রংপুর মহাসড়ক চারলেনে উন্নীতকরণ (২য় সংশোধিত)’ প্রকল্প। এতে ব্যয় বাড়ছে প্রায় ৩৭৭ কোটি টাকা।
>> ‘কালুরঘাটে কর্ণফূলী নদীর উপর একটি রেল-কাম-রোড সেতু নির্মাণ’ প্রকল্প। ব্যয় প্রায় ১১ হাজার ৫৬১ কোটি টাকা।
>> ‘মাতারবাড়ী পোর্ট ডেভেলপমেন্ট (২য় সংশোধিত)’ প্রকল্প। এতে ব্যয় বাড়ছে প্রায় ৬ হাজার ৫৭৪ কোটি টাকা।