বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালে হামলা, ভাঙচুর ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগ এনে করা মামলায় আওয়ামী লীগ সমর্থক ৬৪ জন আইনজীবীর জামিনের আবেদন নামঞ্জুর করেছে আদালত। এদের মধ্যে ৩ জন পালিয়ে যাওয়ায় ৬১ জনকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
একই মামলায় আরও ১৯ আসামির জামিন মঞ্জুর করা হয়েছে।
রবিবার ঢাকা মহানগর দায়রা জজ জাকির হোসেন গালিবের আদালতে এই ৮৩ জন আইনজীবী আত্মসমর্পণ করে জামিন আবেদন করেন। শুনানি শেষে আদালত এ আদেশ দেয়।
সংশ্লিষ্ট আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর ওমর ফারুক ফারুকী এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, “বয়স বিবেচনায় একজন পুরুষ আইনজীবী ও নারী বিবেচনায় কয়েকজনকে জামিন দেওয়া হয়েছে। বাকিদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত।”
কারাগারে পাঠানো আসামিদের মধ্যে রয়েছেন ঢাকা বারের সাবেক সভাপতি সাইদুর রহমান মানিক, গাজী শাহ আলম, মাহবুবুর রহমান, আসাদুর রহমান রচি, সাইবার ট্রাইব্যুনালের পিপি নজরুল ইসলাম শামিম ও মোরশেদ হোসেন শাহীন।
জামিন পাওয়া আসামিদের মধ্যে রয়েছেন, আবু সাঈদ সাগর, শারমিন সুলতানা হ্যাপি, সালেহা আক্তার শিল্পী, জেসমিন আক্তার, তাসলিমা ইয়াসমিন নদী, শিখা ইসলাম, মিতা, শায়লা পারভীন পিয়া ও সালমা হাই টুনিসহ আরও কয়েকজন
আসামিপক্ষের আইনজীবী এস এম মাসুদ হোসেন দোলন জানিয়েছেন, হাই কোর্টের নির্দেশনা মোতাবেক ঢাকা বারের সাবেক সভাপতি ও সেক্রেটারিসহ ৮১ জন আইনজীবী রবিবার মহানগর আদালতে জামিন আবেদন করেন। তাদের মধ্যে বারের সাবেক সভাপতি আবু সাঈদ সাগর ও মহিলা আইনজীবীসহ ১৮ জনকে জামিন দেয় আদালত।
তিনি বলেন, “সাইদুর রহমান মানিক, শাহ আলমসহ অন্য আইনজীবীদের জামিন দেওয়া হয়নি। এটা আইনের শাসনের পরিপন্থী। এ ব্যাপারে মহামান্য হাই কোর্টে আমরা যাব। আশা করি, সেখানে ন্যায়বিচার পাব।”
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে আন্দোলনের এক পর্যায়ে গত বছরের ৫ আগস্ট ক্ষমতাচ্যুত হয় আওয়ামী লীগ সরকার।
এর আগের দিন ৪ আগস্ট আদালত প্রাঙ্গণে আইনজীবীদের ওপর হামলা, চেম্বার ভাঙচুর ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগ এনে আওয়ামী লীগ সমর্থক ১৪৪ জন আইনজীবীর বিরুদ্ধে মামলাটি করা হয়।
গত ৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকার মহানগর হাকিম আদালতে মামলাটি করেন ঢাকা আইনজীবী সমিতির কার্যনির্বাহী সদস্য মোহাম্মদ আলী বাবু। পরে হাই কোর্ট থেকে ৮ সপ্তাহের জামিন নেন ১১৫ জন। ৭ এপ্রিল তাদের জামিনের মেয়াদ শেষ হবে। এজন্য হাইকোর্ট থেকে জামিন পাওয়া ৮৩ জন আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন চেয়ে আবেদন করেন।
মামলার আসামিদের মধ্যে আরও আছেন আওয়ামী লীগের আইনবিষয়ক সম্পাদক কাজী নজিবুল্লাহ হিরু, ঢাকা মহানগর আদালতের সাবেক পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) মো. আব্দুল্লাহ আবু, আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি মোহাম্মদ মোখলেছুর রহমান বাদল, মো. সাইদুর রহমান মানিক, মো. মিজানুর রহমান মামুন, আব্দুর রহমান হাওলাদার, গাজী মো. শাহ আলম, আব্দুল বাতেন, মাহবুবুর রহমান, সাবেক সাধারণ সম্পাদক খন্দকার গোলাম কিবরিয়া জুবায়ের, মোহাম্মদ আনোয়ার শাহাদাৎ শাওন, মো. ফিরোজুর রহমান মন্টু, মো. আসাদুজ্জামান খান রচি ও সাবেক সংসদ সদস্য সানজিদা খানম।
মামলায় বলা হয়, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালে গত বছরের ৪ আগস্ট দুপুরে আসামিরা ঢাকা আইনজীবী সমিতির সামনে অস্ত্র, লাঠিসোঁটা নিয়ে আতংঙ্ক সৃষ্টি করেন। তারা বোমা বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ‘শেখ হাসিনার ভয় নাই, রাজপথ ছাড়ি নাই’ স্লোগান দিতে থাকেন। এ সময় ভুক্তভোগী আইনজীবী মামলার শুনানি শেষে করে ঢাকা আইনজীবী সমিতি ভবনের সামনে আসেন। তখন আসামি আনোয়ার শাহাদাৎ শাওন হেলমেট পরে পিস্তল দিয়ে হত্যার উদ্দেশে গুলি তাক করেন।