Beta
শুক্রবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২৫
Beta
শুক্রবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২৫

রিজার্ভ চুরির ৮ বছর : অর্থ উদ্ধার নিয়ে যা বলল বাংলাদেশ ব্যাংক

বাংলাদেশ ব্যাংক। ছবি : সকাল সন্ধ্যা
বাংলাদেশ ব্যাংক। ছবি : সকাল সন্ধ্যা
[publishpress_authors_box]

২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে সুইফট সিস্টেমে ভুয়া বার্তা পাঠিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউ ইয়র্ক (ফেড) থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার চুরি হয়েছিল, সেই অর্থ এখনও উদ্ধার করা যায়নি।

এ ঘটনায় ফিলিপাইনের রিজাল কমার্সিয়াল ব্যাংকিং করপোরেশনের (আরসিবিসি) বিরুদ্ধে করা মামলা চালিয়ে নেওয়ার বিষয়ে গত ২৯ ফেব্রুয়ারি নিউইয়র্ক স্টেট কোর্ট, ফার্স্ট অ্যাপিলেট ডিপার্টমেন্ট বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষে রায় দিয়েছে। ফার্স্ট ডিপার্টমেন্টের রায়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের জয় হয়েছে।  

সোমবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এমনটাই দাবি করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এই রায়ে আরসিবিসি যে শুরু থেকেই বাংলাদেশ ব্যাংকের অর্থ চুরির ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিল- এটি প্রমাণের সুযোগ তৈরি হয়েছে, যাকে স্বাগত জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত। কারণ, এর মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংকের চুরি যাওয়া অর্থ উদ্ধারের প্রক্রিয়া আরও একধাপ এগিয়েছে।

আদালত নিশ্চিত করেছে আরসিবিসির কর্মকর্তা ও ক্যাসিনো অপারেটর কিম অং-এর বিরুদ্ধে দায়ের করা রিজার্ভের অর্থ চুরির মামলাটি নিউইয়র্কেই পরিচালিত হবে।

বাংলাদেশ ব্যাংক আরও বলছে, ফার্স্ট ডিপার্টমেন্ট স্টেট কোর্টের রায় বহাল রেখেছে।

চুরি যাওয়া অর্থ উদ্ধারে ২০১৯ সালের ২ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের আদালতে আরসিবিসির বিরুদ্ধে মামলা করে বাংলাদেশ ব্যাংক।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলছে, যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকে পরিচালিত বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব থেকে ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার চুরির সঙ্গে আরসিবিসির উচ্চপদস্থ নির্বাহী লরেঞ্জো তান ও রাউল ভিক্টর বি. তান এবং ক্যাসিনো অপারেটর কিম অং-এর সংশ্লিষ্টতা বিষয়ক স্টেট কোর্টের রায়কে ফার্স্ট কোর্ট নিশ্চিত করেছে।

২০১৬ সালের ৪ ও ৫ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যপ্রযুক্তির ফাঁক গলে (হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে) ওই চুরির ঘটনাটি ঘটানো হয়। সুইফট সিস্টেম ব্যবহার করে ৩৫টি ভুয়া বার্তা পাঠিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডে রাখা বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব থেকে ১০ কোটি ১০ লাখ ডলার চুরি হয়।

তবে একটি বার্তার মাধ্যমে শ্রীলঙ্কায় একটি ‘এনজিও’র নামে ২ কোটি ডলার সরিয়ে নেওয়া হলেও বানান ভুলের কারণে সন্দেহ হওয়ায় শেষ মুহূর্তে তা আটকে যায়।

বাকি চারটি বার্তার মাধ্যমে ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার সরিয়ে নেওয়া হয় ফিলিপিন্সের মাকাতি শহরে জুপিটার স্ট্রিটে আরসিবিসির শাখায়। সেখানে খোলা চারটি অ্যাকাউন্টে ওই অর্থ যায়।

ওই অর্থ আরসিবিসি থেকে তুলে নেওয়া হয় খুব কম সময়েই। এরপর তা ফিলরেম মানি রেমিটেন্স কোম্পানির মাধ্যমে স্থানীয় মুদ্রা পেসোয় রুপান্তর হয়ে চলে যায় তিনটি ক্যাসিনোয়। এর একটি ক্যাসিনোর মালিকের কাছ থেকে দেড় কোটি ডলার উদ্ধারের পর বাংলাদেশ সরকারকে বুঝিয়ে দেওয়া হয়। তবে বাকি অর্থ উদ্ধারে নেই তেমন অগ্রগতি। জুয়ার টেবিলে হাতবদল হয়ে ওই অর্থ কোথায় গেছে, তারও হদিস পাওয়া যায়নি।

ফার্স্ট ডিপার্টমেন্টের রায়ে আরও নিশ্চিত করেছে, প্রতারণার মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংকে চুরির ঘটনায় আরসিবিসি ও এর ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ লরেঞ্জো তান ও রাউল ভিক্টর বি. তান এবং কিম অং-কে দায়ী করা যেতে পারে।

এই বিবাদীরা বাংলাদেশ ব্যাংকের চুরিকৃত অর্থ সম্পর্কে সম্পূর্ণ ওয়াকিবহাল ছিল। বাংলাদেশ ব্যাংকের ‘স্টপ পেমেন্ট’ অনুরোধ পাওয়া সত্ত্বেও সেই অর্থ বৈদেশিক মুদ্রা ও আরসিবিসির ট্রেজারির মাধ্যমে লন্ডারিং করার সুযোগ করে দিয়েছে। একারণে এ বিবাদীদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ ব্যাংক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে।

বাংলাদেশ ব্যাংক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, “আমরা অভিযোগে আরও উল্লেখ করেছি ‘স্টপ পেমেন্ট’ অনুরোধ পাওয়া সত্ত্বেও আরসিবিসির বেনামি ব্যাংক হিসাব থেকে প্রায় ৫ কোটি ৮২ লাখ ডলার স্থানান্তর করা হয়েছে। এই অর্থ বাংলাদেশ ব্যাংকের চুরি যাওয়া অর্থ, সে বিষয়ে সন্দেহাতীতভাবে আরসিবিসির সকলেই অবহিত ছিল।”

আরসিবিসিতে বেনামী হিসাব খোলা, চুরি সংঘটনের জন্য নিউইয়র্কের করেসপন্ডেন্ট হিসাবের ব্যবহার, বাংলাদেশ ব্যাংকের চুরি যাওয়া তহবিল দিয়ে লাভজনক বৈদেশিক বাণিজ্য সংঘটন, হ্যাকাররা আরসিবিসির পক্ষে বা নির্দেশনায় কাজ করেছে প্রভৃতি অভিযোগের বিষয়ে আদালত প্রভাবিত হয়েছে বলে দাবি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

কিম অং-এর বিষয়ে আদালত তার আদেশে উল্লেখ করেছে, বাংলাদেশ ব্যাংক যথোপযুক্তভাবে তার বিরুদ্ধে চুরি ও মানি লন্ডারিংসহ ষড়যন্ত্রে জড়িত থাকার অভিযোগ করেছে। লরেঞ্জো তান কিম অং-এর দীর্ঘ দিনের বন্ধু এবং তিনি আরসিবিসির কর্মকর্তাদের কিম অংয়ের দিকে খেয়াল রাখার নির্দেশনা দিয়েছেন বলে আদালত উল্লেখ করেছে। অতএব লরেঞ্জো তান বেনামী হিসাব সম্পর্কে অবগত ছিলেন এবং আরসিবিসির বেনামী হিসাবগুলোতে জমা হওয়া বাংলাদেশ ব্যাংকের চুরি যাওয়া ৮ কোটি ডলার ফেরত প্রদানে কোনও উদ্যোগ নেয়নি।

আদালত আরও উল্লেখ করেছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের চুরি যাওয়া অর্থ অবিলম্বে ফেরত চাওয়ার প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করতে রাউল তান বিভ্রান্তিকর বার্তা প্রেরণের সঙ্গে জড়িত ছিলেন।

আরসিবিসির কয়েকজন কর্মকর্তাকে চুরি পরবর্তী মানি লন্ডারিংয়ের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ থেকে আদালত অব্যাহতি দিয়েছে। আদালত বাংলাদেশ ব্যাংকের ‘কনভার্শন ক্লেইম’ ছাড়া অন্যান্য অভিযোগগুলো অব্যাহত রাখার অনুমতি দিয়েছে।

ফার্স্ট কোর্টের সিদ্ধান্ত বাংলাদেশ ব্যাংককে বিবাদীদের বিরুদ্ধে জালিয়াতিসহ অন্যান্য অভিযোগে নিউইয়র্কে অর্থাৎ যেখান থেকে অর্থ চুরি হয়েছিলো, সেখানে মামলা পরিচালনার সুযোগ করে দিয়েছে।

আদালতের ওই রায়ের প্রেক্ষিতে পরবর্তী পদক্ষেপের বিষয়ে পর্যালোচনা করছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এসব পদক্ষেপ শুধু আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ ব্যাংকের আপিল বা আরসিবিসি ও কিম অং-এর আপিল (যদি করে) এর জবাব প্রদানের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে না, বরং বিচারিক আদালতে চলমান অর্থ-উদ্ধার প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করার বিষয়টিও অন্তর্ভুক্ত থাকবে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।  

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত