Beta
বৃহস্পতিবার, ১৬ জানুয়ারি, ২০২৫
Beta
বৃহস্পতিবার, ১৬ জানুয়ারি, ২০২৫

সাদপন্থীদের নিষিদ্ধসহ ৯ দাবি ইসলামি মহাসম্মেলনে

ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মঙ্গলবার সমাবেশের আয়োজন করেন আলেম-উলেমারা। ছবি : সকাল সন্ধ্যা
ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মঙ্গলবার সমাবেশের আয়োজন করেন আলেম-উলেমারা। ছবি : সকাল সন্ধ্যা
[publishpress_authors_box]

বাংলাদেশে তাবলিগ জামাতের দিল্লির মাওলানা সাদ কান্ধলভির অনুসারীদের নিষিদ্ধসহ ৯ দফা দাবি জানানো হয়েছে ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আয়োজিত ‘ওলামা-মাশায়েখদের ইসলামি মহাসম্মেলন’ থেকে।

তাদের ৯ দফার মধ্যে বিশ্ব ইজতেমার দুই পর্বের জন্যই টঙ্গীর ময়দান বাংলাদেশের কাকরাইল মারকাজের মাওলানা জুবায়ের আহমদপন্থীদের দেওয়ার দাবি রয়েছে। আছে দিল্লির মাওলানা সাদ কান্ধলভিকে বাংলাদেশে আসতে না দেওয়ার দাবিও।

‘কওমী মাদ্রাসা, তাবলিগ ও দ্বীন রক্ষার লক্ষ্যে’ মঙ্গলবারের এ মহাসমাবেশ ঘিরে সকাল থেকেই ওলামা মাশায়েখদের ভিড় বাড়তে থাকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে। এ কারণে আশপাশের এলাকায় ব্যাপক যানজট সৃষ্টি হয়, যা এক সময়ে পুরো রাজধানীতে ছড়িয়ে পড়ে।

মহাসমাবেশের পুরো সময়েই সাদপন্থীদের সমালোচনায় মুখর ছিলেন বক্তারা। এ সময় এক এস্তেমা ও এক কাকরাইলের দাবি জানান তারা।

মাওলানা জুবায়ের ও মাওলানা সাদপন্থীরা বিভেদে জড়ানোর এক পর্যায়ে ২০১৯ সালে দুই পক্ষ বিশ্ব ইজতেমা দুইবারে করার সিদ্ধান্ত নেয়। সেভাবেই দুই পর্বে হচ্ছে বিশ্ব ইজতেমা। তবে দুই পক্ষেরই চলতি সপ্তাহের শুরুতে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে পাল্টাপাল্টি সমাবেশের ঘোষণায় উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। পরে সরকারের ‘মধ্যস্থতায়’ সাদপন্থীরা কর্মসূচি প্রত্যাহার করেন।

গতকাল সোমবার দুই পক্ষকে নিয়ে সভার উদ্যোগ নেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা। সভায় সাদপন্থীরা এলেও অন্যরা আসেননি। ওই বৈঠকে ২০২৫ সালেও দুই পর্বে বিশ্ব ইজতেমা আয়োজনের সিদ্ধান্ত হয়। প্রথম পর্ব ৩১ জানুয়ারি শুরু হয়ে শেষ হবে ২ ফেব্রুয়ারি। আর দ্বিতীয় পর্বের ইজতেমা হবে ৭, ৮ ও ৯ ফেব্রুয়ারি। এর মধ্যেই মঙ্গলবারের মহাসম্মেলন থেকে সাদপন্থীদের নিষিদ্ধের দাবি জানানো হয়েছে।

লোকে লোকারণ্য সোহরাওয়ার্দী উদ্যান। ছবি : সকাল সন্ধ্যা

মহাসমাবেশে মাওলানা সাদকে ইঙ্গিত করে মাওলানা আবদুল হামিদ পীর সাহেব মধুপুর বলেন, “সাদের ফ্যাতনা দিন দিন বাড়তেছে।”

সাদপন্থীদের কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধের দাবি জানিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, “আপনাদেরকে বলছি, তাবলিগের নামে সাদিয়ানীদের যেন কোনও কর্মকাণ্ড না থাকে। বাংলাদেশে যেমন করে কাদিয়ানীদের (আহ্‌মদীয়া সম্প্রদায়) ইসলামের নামে সব ধরনের কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ করতে হবে, তেমন করে তাবলিগের নামে সাদিয়ানীদের কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ করতে হবে। কাদায়ানী ও সাদিয়ানী গ্রুপকে অবাঞ্চিত ঘোষণা করেন।”

উম্মুল মাদানী হাটহাজারী মাদ্রাসার মাওলানা মুফতী জসিমউদ্দীন বলেন, “উনি (মাওলানা সাদ) সঠিক রাস্তার মধ্যে নাই। উনি বাতেল। ওনার তবলিগও বাতেল। টঙ্গীর মাঠ আসল তাবলিগ জামাতকে দেওয়ার জন্য সরকারের কাছে অনুরোধ করব; ওলামায়ে একরামের সঙ্গে বসে সেই ব্যবস্থা করেন।”

জামিয়া ইসলামিয়া পটিয়া মাদ্রাসার মহাপরিচালক মাওলানা আবু কাহের নদভী বলেন, “সাদ এবং তার অনুসারী এরা বাতেল জামায়াতের অংশ। বাতেল ব্যক্তি জামায়াতের তবলিগের নেতৃত্ব দেবে- এটা হতে পারে না।”

মাওলানা সাদকে তাবলিগের স্বঘোষিত আমির উল্লেখ করে মাওলানা নুরুল ইসলাম ওলীপুরী বলেন, “সাদ কোরআন-হাদিস, আলেম-ওলামা, আল্লাহর অলি, নবী ও স্বয়ং আল্লাহর বিরুদ্ধে কুফরি বক্তব্য দিতে থাকে। তাই সারা বিশ্বে তাবলিগের মূলধারা থেকে তাকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়।

“সাদের অনুসারীরা হচ্ছে কাদিয়ানী গ্রুপ। তারা ইসলামের মূলধারায় বিভক্তি সৃষ্টি করছে। এই সরকারকে তাবলিগের নামে কাদিয়ানীদের সব কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ ঘোষণা করতে হবে। কাদিয়ানীরা বাংলাদেশে অবাঞ্ছিত।”

ঢাকার আশপাশ থেকে বিপুল সংখ্যক মানুষ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের দিকে যাওয়ায় আশপাশের এলাকায় সৃষ্টি হয় তীব্র যানজট। ছবি : সকাল সন্ধ্যা
বিপুল সংখ্যক মানুষ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের সম্মেলনে যাওয়ায় আশপাশের এলাকায় সৃষ্টি হয় তীব্র যানজট। ছবি : সকাল সন্ধ্যা

ইসলামি মহাসম্মেলন থেকে শায়খুল হাদিস পরিষদের প্রধান পৃষ্ঠপোষক ও বেফাক মহাসচিব মাওলানা মাহফুজুল হক তাদের ৯ দফা দাবি তুলে ধরেন।

সেগুলো হলো-

১. দেশের কওমী মাদ্রাসা দারুল উলুম দেওবন্দের অনুসরণে শতাব্দীকাল ধরে দ্বীনি শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। বিগত ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকারের সময়ে এ কাজে হয়রানি ও হস্তক্ষেপ করা হতো। এ হয়রানি বন্ধ করতে হবে।

২. সাধারণ শিক্ষার সব স্তরে ধর্মশিক্ষা বাধ্যতামূলক করতে হবে।

৩.আলেম-ওলামাদের বিরুদ্ধে দেওয়া মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করতে হবে।

৪. ২০১৩ সালে শাপলা চত্ত্বরে যারা গণহত্যার দায়ে দোষী তাদের বিচার করতে হবে।

৫. ২০১৮ সালে ১ ডিসেম্বর টঙ্গীতে সাদপন্থীদের পুলিশের সহযোগিতায় যে হামলা চালায় তাদের বিচার করতে হবে।

৬. মাওলানা সাদকে বাংলাদেশে আসতে দেওয়া যাবে না।

৭. দুই পর্বের ইজতেমা অনুষ্ঠান ৩১ জানুয়ারি থেকে ২ ফেব্রুয়ারি ও দ্বিতীয় পর্ব ৭ থেকে ৯ ফেব্রুয়ারি। এ ব্যাপারে সরকারের সার্বিক সহযোগিতা চাই।

৮. কাকরাইল মসজিদ ও টঙ্গী ইজতেমা ওলামা একারামের ‘শুরায়ে নিজাম’ দ্বারা পরিচালিত হবে। সাদপন্থীদের কোনও কাজ চালাতে দেওয়া যাবে না।

৯. ইসলাম ও মুসলমাদের দুশমন কাদিয়ানীদের অমুসলিম ঘোষণা করতে হবে।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত