পুরোনো হয়ে যাওয়া লক্কড়-ঝক্কড় মার্কা গাড়ির শেষ গন্তব্য স্ক্র্যাপইয়ার্ড, তা কে না জানে। স্ক্র্যাপইয়ার্ডে গাড়ির যন্ত্রাংশ খুলে বিক্রি করা হয়। কখনও বা পুনরায় ব্যবহারের উপযোগীও করা হয়।
তবে এই গাাড়ি নিয়ে ভারতের গুজরাটে ঘটেছে এক বিরল ঘটনা। সেখানে এক পরিবার তাদের ব্যবহার অনুপযোগী গাড়িকে স্ক্র্যাপইয়ার্ডে না পাঠিয়ে সেটিকে মাটি খুঁড়ে সমাধিস্থ করেছে। বলা হচ্ছে, গাড়িটি যতদিন তাদের সঙ্গে ছিল, ততদিন সেটি সৌভাগ্য বয়ে আনে।
এজন্য ৪ লাখ রুপি খরচ করে ওই গাড়ির অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ারও আয়োজন করে ওই গুজরাটি পরিবার। তাতে আমন্ত্রণ জানানো হয় দুই হাজার মানুষকে। অনুষ্ঠানে অংশ নেন ধর্মীয় গুরুরাও।
টাইমস অব ইন্ডিয়া জানিয়েছে, গুজরাটের আমরেলি জেলার লাঠি তালুকা শহরের পদরশিঙ্গা গ্রামে গত বৃহস্পতিবার ২০০৬ সালে কেনা গাড়িটিকে এভাবেই বিদায় জানান মালিক সঞ্জয় পলরা।
তার ভাষ্য, গাড়িটি কেনার পর তাদের পরিবারের ভাগ্যের চাকা ঘুরে যায়। এর ফলে সমাজে তাদের কদর বাড়ে।
গুজরাটের এই ঘটনা সোশাল মিডিয়ায় আলোড়ন তৈরি করেছে। সেখানে ভাইরাল হওয়া এক ভিডিওতে দেখা যায়, ১৮ বছরের পুরনো মারুতি সুজুকি ওয়াগন আরের ছাদে গোলাপ ফুলের পাপড়ি বসানো। বাকি জায়গা গাঁদা ফুলের মালা দিয়ে সাজানো। এভাবেই সেটিকে আগে খুঁড়ে রাখা ১৫ ফুট গভীর গর্তে চালিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
গাড়িটিকে এরপর সবুজ কাপড় দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়। মাটি দেওয়ার আগে সঞ্জয় পলরার পরিবারের সদস্য ও শুভাকাঙ্ক্ষীরা ফুলের পাপড়ি ছিটিয়ে দেয় গাড়ির গায়ে। পুরো সময় মাইক থেকে ভেসে আসে হিন্দি সিনেমার গান।
টাইমস অব ইন্ডিয়ার প্রতিবেদনে বলা হয়, অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় সন্ন্যাসী ও আধ্যাত্মিক গুরুরা। গাড়িটির শেষ যাত্রার ছবি তুলতে ও ভিডিও করতে পেশাদার আলোকচিত্রী ও ভিডিওগ্রাফারদেরও আনা হয়। অতিথি আপ্যায়নে ছিল পুরি, চাপাতি, সবজি ও লাড্ডু।
অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার কয়েকদিন আগে গ্রামের প্রায় দুই হাজার মানুষের কাছে চার পৃষ্ঠার আমন্ত্রণপত্র পাঠান সঞ্জয় পলরা। এতে বলা হয়, “২০০৬ সাল থেকে এই গাড়ি আমাদের কাছে পরিবারের সদস্যের মতো ছিল। এর কল্যাণে আমরা ধনী হই। সমাজে আমাদের মান-সম্মান বাড়ে।
“এ কারণে বিক্রি না করে আমরা এটিকে আমাদের স্মৃতিতে চিরদিনের জন্য রেখে দিতে চাই। গাড়িটিকে তাই সমাধিস্থ করার সিদ্ধান্ত নিই আমরা।”
প্রতি বছর নভেম্বরের ৭ তারিখে গাড়ির সমাধিস্থল ফুল দিয়ে সাজানো হবে বলে জানান সঞ্জয় পলরা। তিনি বলেন, “সমাধিস্থলে একটি গাছ লাগাব বলে ভেবেছি, যাতে করে পরের প্রজন্ম ভুলে না যায় পরিবারের ভাগ্যবান গাড়িটির কথা।”
অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় যোগ দেওয়া বিপুল সজিত্র বলেন, “সঞ্জয় তাদের গাড়ির সমাধিস্থ করছে জেনে খুশি হই। পরিবারটি তাদের প্রাণপ্রিয় গাড়ির জন্য ভিন্নধর্মী কিছু করতে চেয়েছে।”