Beta
শনিবার, ১২ জুলাই, ২০২৫
Beta
শনিবার, ১২ জুলাই, ২০২৫

হামাস মারছে তাদের, এই ফিলিস্তিনি গ্রুপ কারা

ফিলিস্তিনের একটি দলের নেতা ইয়াসির আবু শাবাব।
ফিলিস্তিনের একটি দলের নেতা ইয়াসির আবু শাবাব।
[publishpress_authors_box]

ইসরায়েলি বাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধরত হামাস গাজায় স্বদেশী আরেকটি দলের সঙ্গেও চালাচ্ছে যুদ্ধ; আর এরই মধ্যে সশস্ত্র ওই ফিলিস্তিনি দলটির ৫০ সদস্যকে হত্যাও করেছে।

ইসরায়েলের বিভিন্ন সূত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে যুক্তরাজ্যের সংবাদপত্র গার্ডিয়ান বুধবার এই খবর দিয়েছে।

তাদের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গাজায় যে ফিলিস্তিনি গোষ্ঠীটির বিরুদ্ধে হামাস যুদ্ধ করছে, তাদের অস্ত্র দিয়ে সহায়তা করছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী। ইয়াসির আবু সাবাব নামে এক বেদুইন নেতৃত্বাধীন এই গ্রুপটি গাজায় ত্রাণ লুটেও জড়িত।

ফিলিস্তিনিদের স্বাধীনতার সংগ্রাম এগিয়ে নিতে ১৯৫৯ সালে ইয়াসির আরাফাতের নেতৃত্বে গঠিত হয় পিএলও, যার চালিকা শক্তি ছিল ফাতাহ গ্রুপ।

শুরুর দিকে ফাতাহ সশস্ত্র সংগ্রামের পথে থাকলেও পরে তারা কূটনৈতিক পন্থাকে লক্ষ্য অর্জনের প্রধান হাতিয়ার করলে গত শতকের ৮০ এর দশকে গাজায় গড়ে ওঠে সশস্ত্র দল হামাস। মিশরের মুসলিম ব্রাদারহুডের অনুসারী এই দলটি অসলো চুক্তির বিরোধিতা করে সশস্ত্র লড়াইকেই মুক্তির পথ হিসাবে বেছে নেয়।

২০০৬ সালে ফিলিস্তিনের পার্লামেন্ট নির্বাচনে ফাতাহ হেরে যাওয়ার পরের বছর হামাস যোদ্ধারা গাজার নিয়ন্ত্রণ নেয়। তখন ফাতাহ-হামাস লড়াইয়ে বহু ফিলিস্তিনি প্রাণ হারায়।

তারপর থেকে ফিলিস্তিনের দুই অংশের একটি গাজার নিয়ন্ত্রণ হামাসের হাতে, যারা ইসরায়েল রাষ্ট্রের অস্তিত্ব স্বীকার করতে চায় না। অন্য অংশ পশ্চিম তীরের নিয়ন্ত্রণ ফাতাহর হাতে, যাদের রাষ্ট্র হিসাবে ইসরায়েলকে মেনে নিতে আপত্তি নেই।

ফাতাহ ও হামাসের বাইরেও ফিলিস্তিনিদের কয়েকটি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দল রয়েছে। তা মধ্যেই এখন আলোচনায় আবু সাবাব নেতৃত্বাধীন দলটি।

হামাসবিরোধী শক্তি, পাচ্ছে ইসরায়েলি সহায়তা

২০২৩ সালের অক্টোবরে ইসরায়েলি ভূখণ্ডে এক নজিরবিহীন হামলার পর গাজায় শুরু হয় যুদ্ধ। ইসরায়েলি বাহিনী ও হামাসের প্রায় দৃুই বছর ধরে চলা এই যুদ্ধে এরই মধ্যে অর্ধ লক্ষ মানুষ প্রাণ হারিয়েছে, যাদের অধিকাংশই নিরীহ ফিলিস্তিনি।

এই যুদ্ধ চলার মধ্যেই মঙ্গলবার ভোরে রাফায় হামাস এবং আবু শাবাবের বাহিনীর সংঘর্ষ বাধে। তখন আবু শাবাবকে বাঁচাতে ইসরায়েলি সেনারাও সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েছিল বলে ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যমে খবর এসেছে।

ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর কর্মকর্তারা গত সপ্তাহে স্বীকার করেন যে হামাসকে দুর্বল করার লক্ষ্যে তারা আবু শাবাব গোষ্ঠীকে অস্ত্র সরবরাহ করেছিলেন।

ফিলিস্তিনি সশস্ত্র দল হামাস গাজা নিয়ন্ত্রণ করছে।

ইসরায়েলি অবরোধের কারণে গাজায় ‍দুর্ভিক্ষের মতো পরিস্থিতি চলছে এখন। জাতিসংঘের অধীনে ত্রাণ সামগ্রী পাঠানোর নিরাপত্তায় আবু শাবাবের বাহিনীকে কাজে লাগানো হচ্ছে বলে ইসরায়েলি কর্মকর্তারা দাবি করলেও এই দলটি ত্রাণ লুট করেছে বলে অভিযোগ হামাসের।

মঙ্গলবার এক দীর্ঘ বিবৃতিতে ‘পপুলার সার্ভিস’/‘অ্যান্টি-টেরর সার্ভিস’ (আবু শাবাবের বাহিনী এই নামে পরিচয় দেয়) বলেছে, “আমরা ত্রাণের গাড়িবহর পাহারা দিচ্ছিলাম, তখন হামাস আমাদের ৫০ জনেরও বেশি স্বেচ্ছাসেবীকে হত্যা করে, যার মধ্যে আমাদের নেতা ইয়াসিরের আত্মীয়রাও ছিল।”

এই সপ্তাহে ইসরায়েলি বিমানবাহিনী হামাসকে লক্ষ্য করে ড্রোন হামলা চালায়। এর মূল উদ্দেশ্য ছিল

আবু শাবাব বাহিনীকে সহায়তা করা।

ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, আবু শাবাবের বাহিনী হামাসের ‘অ্যারো’ ইউনিটের সদস্যদের ওপর অতর্কিত হামলা চালিয়ে ছয়জনকে হত্যা করে।

কে এই আবু শাবাব

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর গাজা যুদ্ধ শুরুর সময় আবু শাবাব মাদক পাচারের অভিযোগে হামাস নিয়ন্ত্রিত একটি কারাগারে বন্দি ছিলেন। সংঘাত শুরুর পর রাফার ওই কারাগার থেকে পালিয়ে যান তিনি।

তার দলে এখন ১০০ জনেরও বেশি সশস্ত্র সদস্য রয়েছে এবং তারা পূর্ব রাফায় সক্রিয়।

গাজায় সোশাল মিডিয়ায় আবু শাবাবকে ‘ইসরায়েলি এজেন্ট’ বলে আখ্যায়িত করা হয়ে থাকে। হামাস তাকে গ্রেপ্তারের সক্রিয় রয়েছে।

এক বিবৃতিতে হামাস বলেছে, “যদি বিশ্বাসঘাতক ইয়াসির আবু শাবাবকে রক্ষা করার জন্য জায়নবাদী বিমানবাহিনীর হস্তক্ষেপ না থাকত, তবে সে আজ বন্দি থাকত।

“আমরা বিশ্বাসঘাতকদের পিছু ছাড়ব না। যত সময়ই লাগুক না কেন এবং আমরা তাকে ধরবই।”

৩০ বছর বয়সী আবু শাবাবের জন্ম গাজার দক্ষিণাঞ্চলে একটি বেদুইন পরিবারে। এখন ওই অঞ্চলের ত্রাণের রুট তার বাহিনী নিয়ন্ত্রণ করছে।

আবু শাবাব সিএনএনকে বলেছেন, তিনি একটি স্বেচ্ছাসেবী দলকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন, যারা গাজায় ত্রাণ সামগ্রী যাতে নির্বিঘ্নে ঢুকতে পারে, তাতে সহায়তা করছে।

গাজার ত্রাণ ঢোকার রুট নিয়ন্ত্রণ করছে আবু শাবাবের দল।

গাজা-ইসরায়েলের কারেম শালুম সীমান্ত এখন আবু শাবাবের বাহিনী নিয়ন্ত্রণে, যেখান দিয়ে ত্রাণ ঢুকছে।

যুদ্ধের মধ্যে গাজায় হামাসের নিয়ন্ত্রণ শিথিল হয়ে উঠেছে, পুলিশ বাহিনীও অনেকটা নিষ্ক্রিয়, এর মধ্যেই আবু শাহাবের দল শক্তিশালী হয়ে উঠছে ইসরায়েলি বাহিনীর মদদ পেয়ে।

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু সম্প্রতি হামাসকে দুর্বল করতে ফিলিস্তিনি গোত্রকে সহায়তার পক্ষে বললেও আবু শাবাবের নাম নেননি।

আবু শাবাব অবশ্য ইসরায়েলি সহায়তা পাওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করছেন।

এদিকে ইসরায়েলের সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ভিগদোর লিবারম্যান ফিলিস্তিনের আবু শাবাবের দলকে ইসলামী স্টেট বা আইএসের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বলে দাবি করছেন।

সিএনএন বলছে, আবু শাবাবের সঙ্গে আইএসের সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ এখনও পাওয়া যায়নি। তবে দলটি মিশরীয় জিহাদি গোষ্ঠীর সঙ্গে যুক্ত এবং সীমান্তে মাদকসহ নানা কিছু পাচারের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।

আবু শাবাব ফেইসবুক পোস্টে নিজেকে হামাস ও ফাতাহ উভয়ের বিরোধী হিসাবে তুলে ধরছেন।

তথ্যসূত্র : দ্য গার্ডিয়ান

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত