এমন ঘটনা শুধু বাংলাদেশের ফুটবলেই সম্ভব। ঘরোয়া ফুটবলের অন্যতম বড় টুর্নামেন্ট ফেডারেশন কাপ এমন একটা স্টেডিয়ামে আয়োজন করা হয়েছে যেখানে নেই ফ্লাডলাইটের সুবিধা। অতিরিক্ত সময়ে খেলা নিষ্পত্তি না হলে এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে যদি ম্যাচটি সময় মতো শেষ করা না যায় তাহলে ম্যাচের ভাগ্য কী হতে পারে সেটা নিয়েও কোনও পরিকল্পনা নেই বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের।
ময়মনসিংহ রফিক উদ্দিন ভূঁইয়া স্টেডিয়ামে মঙ্গলবার ফেডারেশন কাপের ফাইনালের এমন একটা দৃশ্যই দেখেছে দর্শকেরা। যেখানে হঠাৎ করেই শেষ করে দেওয়া হয় ফাইনাল। অজুহাত হিসেবে বলা হচ্ছে স্টেডিয়ামে আলোকস্বল্পতা।
কিন্তু যেখানে আবাহনীর সঙ্গে ১-১ গোলে সমতায় ছিল বসুন্ধরা, সেখানে দুই দলেরই নিয়ম অনুসারে বাড়তি ৩০ মিনিট খেলার কথা। এরপরও সমতায় থাকলে টাইব্রেকারে শেষ হওয়ার কথা ম্যাচটি।
এরই মাঝে আবার ৯০ মিনিটের খানিক আগে লাল কার্ড খেয়ে বসে বসুন্ধরা কিংসের ফয়সাল আহমেদ ফাহিম। এরপর অতিরিক্ত সময়ের প্রথম ১৫ মিনিট বসুন্ধরা কিংস ১০ জন নিয়ে খেলে। পরের ১৫ মিনিট তারা খেলতে রাজি হয়নি। এই অবস্থায় রেফারি সায়মনও খেলা চালাতে অস্বীকৃতি জানান। এরপরই আসে সেই সিদ্ধান্ত।
টুর্নামেন্টের বাইলজ অনুযায়ী, ফাইনাল যেখানে শেষ হয়েছে, সেখান থেকেই শুরু হবে। তবে ম্যাচটি কবে হবে, সেটা এখনও নিশ্চিত করেনি বাফুফে। যদিও এসব নিয়ে আবাহনীর পক্ষ থেকে আপত্তি ছিল। কিন্তু রেফারি মাঠ ছেড়ে বেরিয়ে গেলে ম্যাচ স্থগিত হয়ে যায়।
দর্শকেরা কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে চেয়ার ভাঙচুরের চেষ্টা করেন এবং বোতল ছুড়ে প্রতিবাদ জানান। তাতে লাভ হয়নি। পুলিশ মাঠ থেকে বের করে দেয় দর্শকদের।
সমস্যার সূত্রপাত বিরতির পর কালবৈশাখী ঝড় শুরু হলে। প্রচণ্ড ঝড় ও বৃষ্টির কারণে মাঠ ভেজা থাকে। খেলা বন্ধ থাকে প্রায় ৪৫ মিনিট। এরপর ম্যাচ শুরু হলেও কোনও দল গোল করতে পারেনি।
বরং অহেতুক লাল কার্ড দেখে মাঠ ছাড়েন ফাহিম।
এপ্রিলের প্রচণ্ড গরমেও ময়মনসিংহের ফুটবলপ্রেমী দর্শকের আগ্রহ এতটুকু কমাতে পারেনি। শহরের কাঁচিঝুলি সড়ক থেকে একে একে মিছিল নিয়ে রফিক উদ্দিন ভূঁইয়া স্টেডিয়ামে ঢুকেছেন অগণিত দর্শক। কারও হাতে বসুন্ধরা কিংসের পতাকা। কারও হাতে আবাহনীর পতাকা। কিছু দর্শকের হাতে ছিল ফিলিস্তিনের পতাকাও।
ফেডারেশন কাপের ফাইনালে মঙ্গলবার মুখোমুখি হওয়া আবাহনী ও বসুন্ধরা কিংসের ম্যাচে প্রথমার্ধে এগিয়ে গিয়েও শেষ পর্যন্ত ১-১ গোলে সমতায় ছিল বসুন্ধরা কিংস।

প্রথমে আর্জেন্টাইন হুয়ান লেসকানোর গোলে এগিয়ে যায় বসুন্ধরা কিংস। পরে গোলটি সমতায় ফেরে মোহাম্মদ ইব্রাহিমের গোলে।
প্রিমিয়ার লিগে এবার ধুঁকছে বসুন্ধরা কিংস। টানা পাঁচবারের লিগ চ্যাম্পিয়নরা এবার ছন্দহীন ফুটবল খেলছে। তাই ফেডারেশন কাপেও কোনও রকমে ফাইনালে উঠেছে ঢাকার ফুটবল জায়ান্টরা। ১৫ এপ্রিল রহমতগঞ্জের বিপক্ষে দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ার জিতে ফেডারেশন কাপের ফাইনালে উঠেছে বসুন্ধরা কিংস।
কিন্তু ফাইনালে যেন স্বরুপে ফিরেছে বসুন্ধরা কিংস। ৫ মিনিটে বাম প্রান্ত থেকে বসুন্ধরা কিংসের প্রথম আক্রমণটা করেন সাদ উদ্দিন। কিন্তু সাদের শট পোস্টের কোলঘেঁষে বেরিয়ে যায়। এরপরই গোলের আনন্দে মেতে ওঠে বসুন্ধরা কিংস।
৭ মিনিটে বক্সের অল্প সামনে থেকে সাদ উদ্দিনের ফ্রি কিক। হেডে লাফিয়ে দুর্দান্ত এক গোল করলেন রিয়াল মাদ্রিদ ও লিভারপুলের বয়সভিত্তিক দলে খেলা আর্জেন্টাইন হুয়ান লেসকানো।
ম্যাচে ফিরতে বেশি সময় নেয়নি আবাহনী। ১৫ মিনিটে আবাহনীকে এগিয়ে নেন ইব্রাহিম। বাম প্রান্ত দিয়ে নাইজেরিয়ান ফরোয়ার্ড এমেকা বল নিয়ে বক্সে ঢোকেন। এরপর ইব্রাহিম আলতো টোকায় করেন ১-১।
অবশ্য ২২ মিনিটে সুমন রেজাকে বক্সের সামনে ফেলে দেন তপু বর্মণ। ফ্রি কিক নিলেন অগাস্তো। কিন্তু এবার আর গোল হলো না আবাহনীর।
৪০ মিনিটে উত্তেজনা ছড়ায় মাঠে। যে উত্তেজনা দেখে অনেকে ২০১৮ সালের ফাইনালের ভয়ঙ্কর মারামারির কথা স্মরণ করছিলেন। তবে তেমন কিছু হয়নি।
যদিও ঘটনা সূত্রপাত বসুন্ধরা কিংসের সোহেল রানা জুনিয়র ও শাকিলের সংঘর্ষকে কেন্দ্র করে। এই দুজনের মধ্যে শুরু হওয়া উত্তেজনায় জড়িয়ে পড়ে দুই দলের ফুটবলাররা। পরে কোচ ও অন্য সতীর্থরা পরিস্থিতি শান্ত করেন। রেফারি এরপর রিমন ও শাকিলকে হলুদ কার্ড দেখান।
বিরতির খানিক আগে সুমন রেজার নিচু ক্রস থেকে ইব্রাহিম চেষ্টা করেন বল জালে গড়ানোর। কিন্তু বলের কাছেই যেতে পারেননি।
বাকি সময়ে অবশ্য দুই দলই গোলের খোঁজে চেষ্টা করে গেছেন। কিন্তু প্রথমার্ধে সমতা নিয়ে ড্রেসিং রুমে গেছেন দুই দল।
দ্বিতীয়ার্ধে দুই দলই গোলের চেষ্টা করেছে। ৮২ মিনিটে বসুন্ধরা কিংসের সোহেল রানা পোস্টের ওপর দিয়ে বল মারে ওপরে। আর আবাহনীর অগাস্তোর ফ্রি কিকটাও দারুণ থাকলেও বক্সে ঢুকে কেউ শট নিতে পারেনি।
অবশ্য ৯০ মিনিটের অল্প আগে অগাস্তোর শট বাঁচিয়ে দেয় পানি। সুমন রেজার সামনে বল এলেও পানির কারণে তিনি মারতে পারেননি।
এরপরই ফাহিম পেলেন লাল কার্ড। সুমন রেজাকে অবৈধ ট্যাকল করে মাঠ ছাড়লেন ফাহিম। বাকি সময়ে তো কালক্ষেপণ করে বসুন্ধরা কিংস আর খেলেনি। আবাহনী কর্মকর্তারা ক্ষুব্ধ হয়ে এরপর মাঠ ছাড়েন।