Beta
মঙ্গলবার, ১১ নভেম্বর, ২০২৫
Beta
মঙ্গলবার, ১১ নভেম্বর, ২০২৫

দীর্ঘতম ম্যাচের বিশ্বরেকর্ডে আবাহনী-কিংস, কি বলছে বাফুফে

ফেডারেশন কাপে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে বসুন্ধরা কিংস। ছবি: বাফুফে
ফেডারেশন কাপে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে বসুন্ধরা কিংস। ছবি: বাফুফে
[publishpress_authors_box]

আবাহনীর জালে টাইব্রেকারের শেষ শটটি নিলেন বসুন্ধরা কিংসের ডিফেন্ডার ড্যাসিয়েল। বল জালে জড়াতেই উল্লাসে ফেটে পড়লেন বসুন্ধরা কিংসের ফুটবলাররা। ওই গোলেই ফেডারেশন কাপের ফাইনালে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে বসুন্ধরা কিংস। সাদা চোখে দেখলে এটা আর আট দশটা ম্যাচের মতোই মনে হতে পারে। কিন্তু এই ম্যাচটি গড়ে ফেলেছে একটি অনন্য বিশ্ব রেকর্ড।

ফুটবল ইতিহাসের দীর্ঘতম ম্যাচের বিশ্ব রেকর্ড গড়েছে বাংলাদেশ। আরও পরিস্কার করে বললে বিশ্ব ফুটবল ইতিহাসে সবচেয়ে দীর্ঘ সময় ধরে চলা অফিসিয়াল ম্যাচের নতুন রেকর্ড গড়ল বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন।

দেশীয় ফুটবলের ঐতিহ্যবাহী আসর ফেডারেশন কাপের ফাইনাল ৯০ মিনিটের বদলে শেষ হলো ৭ দিন পর! সময়ের হিসাবে প্রায় ১৬৬ ঘন্টা পর।

বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) বাইলজের এক অনন্য ধারার সুবাদেই এই ঐতিহাসিক ঘটনার জন্ম।

আসলে বিভিন্ন দেশের ঘরোয়া টুর্নামেন্টে নিজেদের মতো করে বাইলজ তৈরি করে সেই দেশের আয়োজকরা। যেমন আইপিএলে রয়েছে ইমপ্যাক্ট খেলোয়াড়। আবার অস্ট্রেলিয়ার বিগ ব্যাশে ক্রিকেট ব্যাট দিয়ে টস করা হয়। ঠিক তেমনি বাফুফেও নিজেদের মতো করে একটা বাইলজ তৈরি করেছে ঘরোয়া ফুটবল পরিচালনার জন্য। যেখানে লেখা আছে যদি প্রাকৃতিক বিপর্যয় বা অন্য কোনও কারণে আলোকস্বল্পতায় খেলা স্থগিত হয় সেই ম্যাচ পুনরায় পরে যে কোনও সময় শুরু হতে পারে।

ঝড় বৃষ্টির কারণে আলোকস্বল্পতায় ২২ এপ্রিল স্থগিত করা হয় ফেডারেশন কাপের ফাইনাল। ছবি: বদিউজ্জামান মিলন

 এবারের ঘটনার শুরু ২২ এপ্রিল। ময়মনসিংহ জেলা স্টেডিয়ামে  মুখোমুখি হয় বসুন্ধরা কিংস ও আবাহনী। ম্যাচে বেশ কয়েকবার গন্ডগোলে খেলা বন্ধ থাকে। তবে কালবৈশাখী ঝড় এবং পরে আলোকস্বল্পতার কারণে ম্যাচটি বন্ধ হয়ে যায় অতিরিক্ত সময়ে গিয়েও। খেলা তখনও ১৫ মিনিট বাকি। ঠিক যেখান থেকে ম্যাচটি শেষ হয়েছিল সেই জায়গা থেকেই বাকি অংশ মাঠে গড়ায় মঙ্গলবার  দুপুর সাড়ে ৩টায়।

এই বিরল ঘটনার মধ্য দিয়ে ফেডারেশন কাপের এই ফাইনাল ফুটবল ইতিহাসে সবচেয়ে দীর্ঘ সময়জুড়ে চলা অফিসিয়াল স্বীকৃত ম্যাচ। সময়ের হিসেবে ম্যাচটি স্থায়ী হয়েছে প্রায় ৭ দিন। এই রেকর্ড ভেঙে দিয়েছে ২০২৩ সালে ইউক্রেনের দিনপ্রো-১ ও এফসি অলেক্সান্দ্রিয়ার ম্যাচের ৪ ঘণ্টা ৩৬ মিনিটের রেকর্ডকে।

ইউক্রেনের সেই ম্যাচে রাশিয়ান বিমান হামলার আশঙ্কায় খেলা বন্ধ হয়েছিল, বাজানো হয় ‘এয়ার সাইরেন’। খেলোয়াড়রা আশ্রয় নেন ড্রেসিংরুমে। তবে ম্যাচটি একদিনেই শেষ হয়েছিল, যদিও সময় লেগেছিল ৪ ঘন্টা ৩৬ মিনিট।

দিনপ্রো-১ ইউক্রেন প্রিমিয়ার ফুটবল লিগের দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে। ছবি: সংগৃহীত

অন্যদিকে বাংলাদেশের এই ম্যাচে সময়ের পরিসংখ্যান গুনলে তা চলে গেছে প্রায় ১৬৬ ঘণ্টায়, যদিও টানা খেলা চলেনি। তবে নিয়মিত অফিসিয়াল সূচীর অংশ হিসেবে এবং খেলার একই পর্ব থেকে পুনরায় শুরু হওয়ায় এটি আনুষ্ঠানিকভাবেই ইতিহাসে জায়গা করে নিচ্ছে।

ফুটবল বিশ্লেষকরা বলছেন, এ এক বিরল ঘটনা, যেখানে স্থানীয় একটি বাইলজ বদলে দিয়েছে ফুটবল ইতিহাসের রেকর্ড বই। বাফুফের নিয়ম অনুযায়ী, প্রাকৃতিক বা অন্যান্য কারণে খেলা বন্ধ হলে তা পুনরায় শুরু হবে সেখান থেকেই, পুরো ম্যাচ নতুন করে শুরু হবে না।

ফুটবলে এমন দীর্ঘ বিরতি নিয়ে খেলা হওয়ার নজির খুব কমই আছে। ১৯৪৬ সালে স্টকপোর্ট কাউন্টি ও ডনকাস্টার রোভার্সের মাঝে হওয়া এক ম্যাচে অতিরিক্ত সময়ে ‘সাডেন ডেথ’ পদ্ধতিতে খেলা চলেছিল ৩ ঘণ্টা ২৩ মিনিট, যেখান থেকে গোল্ডেন গোল নিয়মের ধারণা আসে।

সেসময় পেনাল্টি শ্যুটআউটের নিয়ম ছিল না। তাই ২-২ গোলে ড্র হওয়া ম্যাচে পরবর্তীতে গোল না হওয়া পর্যন্ত খেলা চলে। সেটা ছিল ১৯৪৬ সালে। তাই ১২০ মিনিটের পর ‘পরের গোল না হওয়া’ পর্যন্ত খেলা চলতো।

তবে অনানুষ্ঠানিক খেলার কথা বিবেচনায় আনলে সবচেয়ে দীর্ঘ ম্যাচটি হয়েছিল ২০১৯ সালে, ওয়েলসের এক চ্যারিটি ম্যাচে, যা চলেছিল ১৬৯ ঘণ্টা। তবে সেটি ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন ধাঁচের এক আয়োজন (ওই ম্যাচে খেলোয়াড়দের মাঝপথে ঘুমানোর ব্যবস্থাও ছিল)।

বাফুফের কম্পিটিশন কমিটির চেয়ারম্যান জাবের বিন তাহের আনসারী দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন বাইলজ ও সূচী তৈরি করে আসছেন। কম্পিটিশন কমিটিতে কাজ করার সুবাদে তার অভিজ্ঞতা অনেক। কিন্তু এবারের ফেডারেশন কাপ যে এমন একটা রেকর্ডের জন্ম দেবে সেটা নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে রাজি হননি।

তবে বাফুফের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য ও জাতীয় দলের সাবেক ফুটবলার গোলাম গাউস বলেন, “বাফুফের পেশাদার লিগ কমিটি যেটা ভালো মনে করেছে সেটাই করেছে। তারাই আসলে এ ব্যাপারে ভালো মন্তব্য করতে পারবেন। তবে আমি বলব অভিজ্ঞতটা অন্য রকম ছিল। যদিও আমাদের সময়ে একবার আবাহনী ও মোহামেডানের একটি ম্যাচ পরিত্যক্ত হয়ে পরে অন্য সময় অনুষ্ঠিত হয়েছিল। আর্মি স্টেডিয়ামে দর্শকবিহীন ম্যাচটি সেবার আয়োজন করে বাফুফে। কারণ গন্ডগোলে ম্যাচটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়েছিল।”  

আরও পড়ুন

সর্বাধিক পঠিত