আবাহনী প্রাঙ্গনে যেন শোকের ছায়া। ধানমন্ডির ক্লাব চত্বরের এখানে সেখানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে আছে অফিসিয়াল কাগজ পত্র। ভাঙা চেয়ার, শোকেস, টি-টেবিল এলোমেলো হয়ে আছে। দেশের ঐতিহ্যবাহী ক্লাবের অফিস কক্ষ ভেঙে তছনছ করা হয়েছে। সবচেয়ে ক্ষতি হয়েছে ক্লাবের ট্রফি কক্ষ। ১৯৭২ সালে ক্লাব প্রতিষ্ঠা হওয়ার পর থেকে ক্রিকেট, ফুটবল, হকিসহ অন্যান্য বিভিন্ন খেলায় এ পর্যন্ত যত ট্রফি জিতেছে আবাহনী, এর সবগুলোই সোমবার লুট করে নিয়ে গেছে দুর্বৃত্তরা।
তীব্র ছাত্র-গণআন্দোলনের মুখে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব থেকে পদত্যাগ করে দেশ ছেড়েছেন শেখ হাসিনা। বোন শেখ রেহানাকে নিয়ে তিনি ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন। শেখ হাসিনার দেশ ছাড়ার পর থেকেই দেশের বিভিন্ন স্থানে শুরু হয়েছে নৃশংস হামলা ভাঙচুর। সেই ধারাবাহিকতায় বাদ যায়নি শেখ হাসিনার ছোট ভাই শেখ কামালের হাতে গড়া ক্লাব আবাহনীও।
ক্লাব চত্বরে রয়েছে শেখ কামালের মুর্যাল। দুর্বৃত্তরা সেই মুর্যালও খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে ভেঙেছে ও পুড়িয়ে দিয়েছে একাংশ।
ক্লাবের বিভিন্ন কক্ষের ফ্যান, এসি, কম্পিউটার, হার্ডডিস্ক, সিসি ক্যামেরা, বেসিনের কল, কমোড, জানালার পর্দা, টেবিল, চেয়ারসহ অন্যান্য অনেক আসবাবপত্র নিয়ে গেছে দুর্বৃত্তরা। শুধু ট্রফি কক্ষে পড়ে আছে শেখ হাসিনা ও শেখ কামালের কাচে বাঁধানো ছবিগুলো। যেগুলোর কাচ ভাঙা।
২৩ বছর ধরে আবাহনী ক্লাবের কর্মচারী হিসেবে কাজ করছেন নিশীথ হালদার। ভয়াবহ এই হামলার বর্ননা দিতে গিয়ে তিনি বলেন, “দুপুরে প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগের খবর ছড়িয়ে পড়তেই এক দফা বাইক নিয়ে ২০-২৫ জনের একটি দল এসে গেটের কাছে চীৎকার চেচামেচি করে। এরপর বিকেলে এসে গেট খোলার জন্য হুমকি ধামকি দিতে থাকে। এক পর্যায়ে প্রাণের ভয়ে সিকিউরিটি গার্ড গেট খুলে দৌড়ে ছাদে চলে যায়। এরপরই চলতে থাকে এসব তান্ডব, লুটতরাজ।”
ট্রফিগুলো হারিয়ে সবচেয়ে বেশি দুঃখ পেয়েছেন নিশীথ। কাঁদতে কাঁদতে বলছিলেন, “ প্রতি মাসে একবার করে ট্রফিগুলো নিজে হাতে পরিস্কার করতাম। কষ্টে আমার বুক ভেঙে যাচ্ছে।”
১৯৭৫ সালে স্বপরিবারে নিহত হয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু। ওই সময়েও ট্রফি লুট হয়নি। সেই কথা মনে করে বলেন, “১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের পরও আবাহনী ক্লাবে শুনেছি হামলা হয়েছিল। কিন্তু তখন তো কেউ ট্রফি নিয়ে যাইনি। এবার ওরা এসব নিয়ে গেছে। ভাঙাড়ির দোকানে বিক্রি করবে এগুলো। কিন্তু এত মূল্যবান ট্রফির মর্যাদা ওরা বুঝতে পারল না। খেলাধুলার সঙ্গে কেন শত্রুতা ওদের? খেলার সঙ্গে রাজনীতি মিশিয়ে কার লাভ?”
দুপুরে অবশ্য ক্লাবে এসেছিলেন প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হুমায়ুন আহমেদসহ আরও কয়েকজন। ক্লাবের কি কি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে প্রতিটা কক্ষ ঘুরে ঘুরে তারা দেখেছেন।
দুর্বৃত্তদের আক্রমণ থেকে রেহাই পায়নি শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাবটিও। এই ক্লাবেও ভাঙচুর চালানো হয়েছে। ক্লাব চত্বরে পড়ে আছে বিভিন্ন কাচের ভাঙা টুকরো। ট্রফি কক্ষে রয়েছে মাত্র ৪টি ট্রফি। বাকিগুলো লুট করে নিয়েছে। লুট করে নিয়েছে ক্লাবের জার্সি, ক্রিকেট প্যাড, হেলমেটসহ নানা খেলাধুলার সরঞ্জাম। এছাড়া অফিস কক্ষ থেকে কম্পিউটার, টেবিল, চেয়ার, ফ্যানসহ নানা প্রয়োজনীয় জিনিস নিয়ে গেছে।
ক্লাবটির তত্বাবধায়ক গিয়াস উদ্দিন ৪ বছর ধরে আছেন শেখ জামাল ক্লাবে। তিনি বলেন, “ দুপুর থেকেই এক দল লোক ক্লাবে ঢোকার চেষ্টা করছিল। এরপর বিকেলে এসে ক্লাবে ভাঙচুর চালায়। ক্লাবের ক্যান্টিও ভেঙেছে তারা।”