তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মো. মাহফুজ আলম বলেছেন, আবরার ফাহাদের শাহাদত জুলাই গণঅভ্যুত্থানে বড় প্রেরণা হিসেবে কাজ করেছে। তার আত্মত্যাগ বৃথা যায়নি। তার শাহাদতের ফলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভিন্ন মত প্রকাশের সুযোগ তৈরি হয়েছে, যা শিক্ষার্থীরা কাজে লাগিয়েছে।
বাসস জানিয়েছে, মঙ্গলবার শাহবাগের জাতীয় জাদুঘরের প্রধান মিলনায়তনে শহীদ আবরার ফাহাদের ষষ্ঠ শাহাদতবার্ষিকী উপলক্ষ্যে জুলাই গণঅভ্যুত্থানভিত্তিক প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শনীর উদ্বোধনী পর্বে তিনি এসব কথা বলেন। তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় এই প্রদর্শনীর আয়োজন করে।
বিগত সরকারের ১৬ বছরের দুঃশাসনের সমালোচনা করে উপদেষ্টা বলেন, ওই সময় আবরার ফাহাদের মতো হাজারো শিক্ষার্থী নিপীড়নের শিকার হয়েছেন। অনেকে মৃতপ্রায় অবস্থায় বেঁচে গেছেন। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কিছু সদস্য নিজেই শিক্ষার্থীদের পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছেন। কারাগারে ভিন্ন মতাবলম্বী শিক্ষার্থীদের চিকিৎসা দেওয়া হয়নি। হলগুলো থেকে শিবিরের নামে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মারধর করে বের করে দেওয়া হতো।
তিনি বলেন, আবরার ফাহাদের শাহাদতের গভীর তাৎপর্য রয়েছে, যা অনুধাবন করা জরুরি।
উপদেষ্টা বলেন, “শেখ হাসিনা যে ভুল করেছেন, আমরা সেই ভুল করতে চাই না। ফ্যাসিজম যে প্রক্রিয়ায় তৈরি হয়, আমরা সেই পথে যেতে চাই না।”
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের শক্তির মধ্যে বিভাজনকে অপ্রত্যাশিত ও দুঃখজনক আখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, বিভাজন এড়িয়ে নাগরিকদের জন্য নিরাপদ রাষ্ট্র ও সরকারব্যবস্থা প্রতিষ্ঠায় কাজ করতে হবে।
নিজেকে রাষ্ট্র গড়ার পক্ষের লোক হিসেবে উল্লেখ করে উপদেষ্টা মাহফুজ আলম বলেন, ফ্যাসিবাদী সাংস্কৃতিক ব্যবস্থার বিপরীতে জনগণের সামনে একটি ভালো বিকল্প উপস্থাপন করতে হবে। তা না হলে জনগণ আবার পুরাতন ব্যবস্থায় ফিরে যাবে।
তিনি বলেন, “আমাদের দীর্ঘ সাংস্কৃতিক লড়াই চালিয়ে যেতে হবে।”
এসময় বহু ভাষা, বহু সংস্কৃতি ও বহু ঐতিহ্যের বাংলাদেশ গড়ে তুলতে সংশ্লিষ্ট সকলের সহযোগিতা কামনা করেন তিনি।
অনুষ্ঠানে সংস্কৃতি বিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী বলেন, “২০১৯ সালে বুয়েটে ছাত্রলীগের গুণ্ডারা আবরার ফাহাদকে হত্যা করেছে। তারা ভেবেছিল, তাকে হত্যা করে আধিপত্যবিরোধী কণ্ঠ স্তব্ধ করা যাবে। কিন্তু ইতিহাস বলে, এমন কণ্ঠ কখনও স্তব্ধ হয় না।”
তিনি বলেন, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে অংশগ্রহণকারী প্রত্যেকে আবরার ফাহাদের হৃৎস্পন্দন ধারণ করেছেন। তিনি তার আত্মত্যাগকে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন।
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ন্যারেটিভ তৈরির প্রসঙ্গে তিনি বলেন, গণঅভ্যুত্থানপরবর্তী সময়ের অন্যতম কাজ হলো জুলাইয়ের ন্যারেটিভ তৈরি করা। পাশাপাশি বিগত সরকারের ১৬ বছরের দুঃশাসনের ন্যারেটিভও তৈরি করতে হবে।
সাংস্কৃতিক বৈষম্যকে ফ্যাসিবাদের অন্যতম কারণ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ধর্ম ও রাজনৈতিক বিশ্বাসের কারণে কাউকে আলাদা করা যাবে না। সকল জাতিগোষ্ঠীকে একত্রিত করতে হবে।
মোস্তফা সরয়ার ফারুকী বলেন, “আমাদের এমন এক বাংলাদেশ গড়ে তুলতে হবে, যা ইতিহাসের সব অধ্যায়কে ধারণ করবে।”
এসময় তিনি ‘বাংলাদেশ’ ও ‘বাংলাদেশপন্থা’য় এক থাকার আহ্বান জানান।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সচিব মাহবুবা ফারজানা।
উদ্বোধনী পর্ব শেষে জুলাই গণঅভ্যুত্থানভিত্তিক প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শিত হয়। সন্ধ্যায় একই স্থানে ‘চলচ্চিত্রে জুলাই’ শীর্ষক প্যানেল আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়, এতে অংশ নেন জুলাই গণঅভ্যুত্থান নিয়ে নির্মিত ও নির্মিতব্য চলচ্চিত্রের নির্মাতা ও কলাকুশলীরা।
অনুষ্ঠানে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় এবং এর অধীনস্থ দপ্তর-সংস্থার কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ উপস্থিত ছিলেন।



