Beta
বৃহস্পতিবার, ১ মে, ২০২৫
Beta
বৃহস্পতিবার, ১ মে, ২০২৫

দণ্ডিতদের বাবা-মার কষ্টের কথাও বললেন আবরারের বাবা

আবরার ফাহাদের বাবা বরকত উল্লাহ রায়ের সময় উপস্থিত ছিলেন হাই কোর্টে, জানিয়েছিলেন প্রতিক্রিয়া।
আবরার ফাহাদের বাবা বরকত উল্লাহ রায়ের সময় উপস্থিত ছিলেন হাই কোর্টে, জানিয়েছিলেন প্রতিক্রিয়া।
[publishpress_authors_box]

এক হামলায় ঝরে গিয়েছিলের আবরার ফাহাদ। বুয়েটের শিক্ষার্থী ছিলেন তিনি। তাকে নিয়ে তার পরিবারের স্বপ্ন ভেঙে গিয়েছিল সেখানেই। তার ওপর হামলাকারী যারা ছিলেন, তারাও একই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী।

বিচারিক আদালতের রায়ের পর হাই কোর্টেরও তাদের ২০ জনের মৃত্যুদণ্ড ও ৫ জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের সাজা বহাল থাকছে। ফলে তাদের নিয়েও তাদের পরিবারগুলোর স্বপ্ন ভেঙে গেল।

রবিবার হাই কোর্টের রায়ের পর নিহত আবরারের বাবা বরকত উল্লাহ প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে এই বিষয়টিই সামনে আনলেন। তিনি চাইলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে আসা শিক্ষার্থীদের অপরাজনীতির বলি যেন আর হতে না হয়।

ব্যাংককর্মী বরকত উল্লাহ বলেন, “ছাত্রদেরকে বাবা-মা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করতে পাঠিয়েছে। এঘটনায় কোনও বাবা-মায়ের দোষ নেই। ছেলেরা এসে যদি এভাবে নির্মমতার সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে, তাহলে তো বাবা-মায়ের কষ্ট লাগে।”

সন্তান হারানো এই অভিভাবক শিক্ষার্থীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন, “ছাত্রদের প্রতি আমরা আহ্বান থাকবে, তারা যেন এ সমস্ত অপরাজনীতির সঙ্গে জড়িত না হয়।”

কুষ্টিয়ার ছেলে আবরার ফাহাদ ভর্তি হয়েছিলেন ঢাকার বুয়েটে, যে উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সন্তানদের ভর্তি করাতে মুখিয়ে থাকেন বাংলাদেশের অভিভাবকরা।

আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ডের পর ক্ষোভে ফেটে পড়েছিল বুয়েট শিক্ষার্থীরা।

আবরার তড়িৎ কৌশলে পড়তেন, থাকতেন বুয়েটের শেরেবাংলা হলেন ১০১১ নম্বর কক্ষে। আওয়ামী লীগের শাসনকালে তখন সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই ছিল এই দলটি সমর্থিত ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের দাপট। হলগুলো ছিল তাদেরই দখলে।

ফেইসবুকে লেখালেখিকে কেন্দ্র করে আবরারকে ইসলামী ছাত্রশিবিরের সমর্থক হিসাবে চিহ্নিত করে বুয়েট ছাত্রলীগের একদল নেতা-কর্মী ২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর রাতে শেরেবাংলা হলে ব্যাপক মারধর করে আববরাকে। তাতে প্রাণ হারান এই তরুণ।

বুয়েটে আবরারের সেই হত্যাকাণ্ডে প্রতিবাদের ঢল নেমেছিল বাংলাদেশে। বুয়েট শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভে অচল হয়ে পড়েছিল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি। হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের বহিষ্কার এবং বুয়েটে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের পর শিক্ষার্থীরা ক্লাসে ফেরে।

আবরারের বাবা ব্যাংকার বরকত উল্লাহ কুষ্টিয়া থেকে এসে ছেলের লাশ গ্রহণ করে ২০১৯ সালের ৭ অক্টোবর ঢাকার চকবাজার থানায় হত্যা মামলা করেন।

আলোচিত মামলাটি দ্রুত তদন্ত শেষে পরের মাসের ১৩ নভেম্বর আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) পরিদর্শক মো. ওয়াহিদুজ্জামান। এতে আসামিদের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ২৫ জনে।

সেই অভিযোগপত্র আমলে নিয়ে ২০২০ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচারিক আদালতে বিচার শুরু হয়। আওয়ামী লীগের শাসনকালেই দুই বছরের মাথায় মামলার রায় হয়।

আবরার ফাহাদ কুষ্টিয়া থেকে পড়তে এসেছিলেন বুয়েটে, তবে ফেরেন লাশ হয়ে।

রায়টি দিয়েছিলেন ঢাকার ১ নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক আবু জাফর কামরুজ্জামান। ২০২১ সালের ৮ ডিসেম্বর দেওয়া রায়ে ২৫ আসামিদের মধ্যে ২০ জনকে মৃত্যুদণ্ড ও ৫ জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন তিনি।

রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি হিসাবে আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তির আবেদন জানালেও সেদিন ট্রাইব্যুনালের পিপি মোশাররফ হোসেন কাজল প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে অনেকটা আবরারের বাবার মতোই বলেছিলেন, “প্রতিক্রিয়ার কিছু নাই। অনেকগুলো মেধাবী ছাত্রের ফাঁসির আদেশ হলো, তাতে সন্তষ্টির কিছু নাই। তবে এটা একটি নজির হিসেবে থাকবে।”

নিয়ম অনুযায়ী আসামিদের ডেথ রেফারেন্স (মৃত্যুদণ্ড অনুমোদন) ও আপিল এবং জেল আপিল শুনানির জন্য আসে হাই কোর্টে। তার শুনানি নিয়ে বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান এবং বিচারপতি সৈয়দ এনায়েত হোসেনের বেঞ্চ রবিবার রায় দেয়। তাতে বিচারিক আদালতের রায়ই বহাল রাখা হয়।

হাই কোর্টের পর্যবেক্ষণ নিয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান সাংবাদিকদের বলেন, “উচ্চ আদালতের পর্যবেক্ষণ হচ্ছে, নিম্ন আদালত তার রায়ে যে ফাইন্ডিং দিয়েছে, যে ভিত্তি স্থাপন করেছে, সেখানে কোনও হস্তক্ষেপের সুযোগ নেই।”

এই রায়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করে আবরার ফাহাদের বাবা বরকত উল্লাহ সাংবাদিকদের বলেন, “আমরা এ রায়ে আপাতত সন্তুষ্ট। এই রায়ের পরে পরবর্তী যে প্রক্রিয়া আছে, সেগুলো দ্রুত সম্পন্ন করে রায় যেন কার্যকর করা হয়, এটি আমাদের প্রত্যাশা।”

আবরার ফাহাদের ছোট ভাই  আবরার ফাইয়াজ রায়ের সময় উপস্থিত ছিলেন হাই কোর্টে, জানিয়েছিলেন প্রতিক্রিয়া।
আবরার ফাহাদের ছোট ভাই আবরার ফাইয়াজ রায়ের সময় উপস্থিত ছিলেন হাই কোর্টে, জানিয়েছিলেন প্রতিক্রিয়া।

সন্তান হত্যাকাণ্ডের পর বরকত উল্লাহ মামলাটি করেছিলেন। রায়ের সময় তার সঙ্গে ছোট ছেলে আবরার ফাইয়াজও হাই কোর্টে উপস্থিত ছিলেন। বুয়েটে ভর্তির সুযোগ পেয়েও ভাইয়ের কথা স্মরণ করে সেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়েননি ফাইয়াজ।

রায়ের প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেন, “সত্যি কথা বলতে কী হাই কোর্ট থেকে এত বড় একটা রায় আসবে, তা আমরা ৫ আগস্টের আগে চিন্তাও করিনি। এটা অবশ্য পরিবর্তিত পরিস্থিতির কারণে সম্ভবপর হয়েছে।”

তবে রায় কার্যকরের জন্য এখনও অনেকগুলো পদক্ষেপ বাকি থাকার বিষয়টি দেখিয়ে এই বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী বলেন, “সেসব যেন দ্রুত সম্পন্ন করে রায় কার্যকর করা হয়। সেটা আমাদের চাওয়া থাকবে।”

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত