নতুন নির্বাচনে কমিশন গঠনে সার্চ কমিটিতে রাষ্ট্রপতির মনোনয়নে স্থান পেলেন অধ্যাপক চৌধুরী রফিকুল আবরার এবং অধ্যাপক জিন্নাতুন নেছা তাহমিদা বেগম।
আওয়ামী লীগ সরকার আমলে প্রণীত আইন অনুযায়ী এই দুজনসহ ছয় সদস্যের সার্চ বা অনুসন্ধান কমিটির গঠন করে বৃহস্পতিবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে প্রজ্ঞাপন হয়েছে।
এই সার্চ কমিটির নেতৃত্বে থাকছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারপতি জুবায়ের রহমান চৌধুরী। অন্য তিন সদস্য হলেন- হাইকোর্ট বিভাগের বিচারক বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান, মহা-হিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক এস এম রেজভী এবং বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মোবাশ্বের মোনেম।
বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী, সাংবিধািনক প্রতিষ্ঠান নির্বাচন কমিশনে সিইসি ও নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ দেন রাষ্ট্রপতি।
এই নিয়োগের জন্য ২০২২ সালে যে আইন হয়, তাতে রাষ্ট্রপতিকে সার্চ কমিটি গঠনের এখতিয়ার দেওয়া হয়।
আইন অনুযায়ী, সার্চ কমিটির সভাপতি হন আপিল বিভাগের একজন বিচারক এবং সদস্য থাকেন হাই কোর্ট বিভাগের একজন বিচারক। এই দুজনকে মনোনীত করেন প্রধান বিচারপতি।
সার্চ কমিটিতে কাজ করার জন্য বিচারপতি জুবায়ের রহমান চৌধুরী এবং বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামানকে দুদিন আগেই মনোনীত করেছিলেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ।
মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক এবং সরকারি কর্মকমিশনের চেয়ারম্যান পদাধিকার বলে সার্চ কমিটিতে সদস্য থাকেন।
বিশিষ্ট নাগরিকদের মধ্য থেকে বাকি দুই সদস্য মনোনীত করেন রাষ্ট্রপতি; তাদের মধ্যে একজন নারীকে নেওয়ার আইনি বাধ্যবাধকতা রয়েছে।
সর্বশেষ ইসি গঠনের সময় মো. আবদুল হামিদ রাষ্ট্রপতি থাকাকালে সার্চ কমিটিতে বিশিষ্ট নাগরিক হিসাবে মনোনীত করেছিলেন সাবেক নির্বাচন কমিশনার মুহাম্মদ ছহুল হোসাইন এবং লেখক ও মনোবিজ্ঞানী অধ্যাপক আনোয়ার সৈয়দ হককে।
অভ্যুত্থানে সরকার পরিবর্তনের পর নতুন বাস্তবতায় বর্তমান রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের মনোনয়নে এবার বিশিষ্ট নাগরিক হিসাবে সার্চ কমিটিতে ঠাঁই পেলেন অধ্যাপক রফিকুল আবরার এবং অধ্যাপক জিন্নাতুন নেছা।
রফিকুল আবরার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক। অধ্যাপক জিন্নাতুন নেছা ২০০২ থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত সরকারি কর্মকমিশনের চেয়ারম্যান ছিলেন। সঙ্গীত শিল্পী ও অভিনেতা তাহসান রহমান তার ছেলে।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব শেখ আব্দুর রশীদের স্বাক্ষরে আসা প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, এই সার্চ বা অনুসন্ধান কমিটি ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ আইন, ২০২২’ মোতাবেক দায়িত্ব ও কার্যাবলি সম্পন্ন করবে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ তাদের সাচিবিক সহায়তা দেবে।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর কাজী হাবিবুল আউয়াল নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিমশনের সদস্যরা সবাই পদত্যাগ করায় রাষ্ট্রপতিকে নতুন ইসি গঠন করতে হচ্ছে।
গঠিত এই সার্চ কমিটির দায়িত্ব হবে নির্বাচন কমিশনে দায়িত্ব পালনে সমর্থ ব্যক্তিদের খুঁজে বের করে তাদের নাম রাষ্ট্রপতির কাছে প্রস্তাব করা। এজন্য তারা রাজনৈতিক দল ও পেশাজীবী সংগঠনের কাছ থেকে নাম চাইতে পারে।
সংবিধান অনুযায়ী প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং অনধিক চারজন নির্বাচন কমিশনার নিয়ে বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশন গঠিত হয়।
সার্চ কমিটি এই প্রতিটি পদের জন্য দুজনের নাম রাষ্ট্রপতির কাছে সুপারিশ করবে; অর্থাৎ সিইসির জন্য দুজন এবং চার নির্বাচন কমিশনারের জন্য আটজনের নাম তারা প্রস্তাব করবে।
সার্চ কমিটি গঠনের পর ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে সুপারিশ চূড়ান্ত করতে হবে সার্চ কমিটিকে। সেই নামের প্রস্তাব থেকে একজনকে সিইসি করে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করবেন রাষ্ট্রপতি।
এই নির্বাচন কমিশনই ত্রয়োদশ অর্থাৎ পরবর্তী সংসদ নির্বাচন আয়োজন করবে।
সাংবিধানিক শূন্যতার মধ্যে কবে পরবর্তী নির্বাচন হবে, সে বিষয়ে সুস্পষ্ট করে কিছু এখনও জানায়নি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।