Beta
শুক্রবার, ১৭ জানুয়ারি, ২০২৫
Beta
শুক্রবার, ১৭ জানুয়ারি, ২০২৫

আবু সাঈদের মৃত্যুকে ভিন্ন খাতে প্রবাহের পাঁয়তারা, অভিযোগ শিক্ষকদের

পুলিশের সামনে বুক চিতিয়ে দাঁড়ানো আবু সাঈদের ছবি এখন ব্যাপক আলোচিত।
পুলিশের সামনে বুক চিতিয়ে দাঁড়ানো আবু সাঈদের ছবি এখন ব্যাপক আলোচিত।
[publishpress_authors_box]

রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদের মৃত্যুকে ভিন্ন খাতে প্রবাহের পাঁয়তারা করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

বৃহস্পতিবার বিকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের শেখ রাসেল মিডিয়া চত্বরে আবু সাঈদসহ সবে হত্যাকাণ্ডের বিচার, শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা ও শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশের দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি থেকে এ অভিযোগ তোলেন শিক্ষকরা।

বাংলা বিভাগের শিক্ষক তুহিন ওয়াদুদ বলেন, “১৬ জুলাই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও কয়েকটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলে ছড়িয়ে যাওয়া ভিডিওতে দেখা গেছে পুলিশ গুলি করে আবু সাঈদকে হত্যা করেছে। এখন সেটাকে ভিন্নখাতে প্রবাহের পাঁয়তারা চলছে। ভিডিওতে স্পষ্ট যে কাছ থেকে গুলি করা হয়েছে, এখন বিভিন্ন গণমাধ্যমে শুনি ৫০-৬০ মিটার দূর থেকে গুলি করেছে।”

আবু সাঈদের মৃত্যুর পর তাকে হাসপাতালে নিতে দেরি করার প্রসঙ্গও তোলেন তিনি। বলেন, “জীবিত আবু সাঈদকে সহ্য করতে পারল না, অথচ মৃত আবু সাঈদের ভয়ে বিশাল গাড়ির বহর তার লাশ নিয়ে গেল গ্রামের বাড়ি।”

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহতরা ন্যায়বিচার পাবে কিনা তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেন শিক্ষকরা। তারা বলেন, এ রকম অবিচার বিচারহীনতার সংস্কৃতি ছিল পাকিস্তান আমলে।

সহিংসতার দিন পুলিশের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তারা।

অবস্থান কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে বক্তব্য দেন ব্যবস্থাপনা বিভাগের প্রধান মতিউর রহমান, মার্কেটিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক শেখ মাজেদুল হক, অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ওমর ফারুক, শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও লোকপ্রশাসন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আসাদুজ্জামান মন্ডল আসাদ, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষ মাহবুবুর রহমান, একই বিভাগের শিক্ষক ফারজানা জান্নাত তুশিসহ অন্যরা।

১৪ দিনেও হয়নি হত্যা মামলা

কোটা সংস্কার আন্দোলনে অংশ নিয়ে আবু সাঈদের নিহত হওয়ার ১৪ দিন পেরিয়ে গেলেও এখনও এ ঘটনায় কোনও মামলা হয়নি। পরিবার থেকে করা হয়নি, এমনকি সেদিনের ঘটনায় করা বিশ্ববিদ্যালয়ের মামলায়ও নেই আবু সাঈদের নাম।

নিহত সাঈদের বড় ভাই রমজান মিয়া জানিয়েছেন, তার ভাইয়ের মৃত্যুর পর থেকে বিভিন্ন কর্মকর্তারা তাদের বাড়িতে আসছেন, রাজনৈতিক নেতারাও আসছেন। এছাড়া প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে এর মধ্যে তাদের ঢাকাতেও যেতে হয়েছিল। সব মিলিয়ে মামলা করার সুযোগ হয়ে ওঠে নি।

তিনি বলেন, “এখন পরিবারের সবার সঙ্গে পরামর্শ করছি, খুব শিগগিরই মামলা করা হবে।”

অন্যদিকে, গত ২৮ জুলাই বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাজহাট থানায় একটি মামলা হয়। যার বিবরণে লেখা হয়েছে, সরকারি চাকরিতে কোটা বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একপর্যায়ে বহিরাগত অজ্ঞাত আনুমানিক ৫০০-৬০০ বেআইনি জনতা দলবদ্ধ হয়ে লাঠি-সোটা নিয়ে মিছিলসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের ফটক ভাঙচুর করে ভেতরে প্রবেশ করে। তারা পুলিশ সদস্যের সঙ্গে মারমুখী আচরণ করে এবং সরকারি কাজে বাধা দেয়। পুলিশ সদস্যদের উপর হত্যার উদ্দেশ্যে হামলা করে জখমও করে।

এদের ‘উচ্ছৃংখল বহিরাগত’ আখ্যা দিয়ে এজাহারে বলা হয়েছে, তারা ভিসির বাসভবনের ভেতরে থাকা গাড়িসহ অন্যান্য সামগ্রী পুড়িয়ে দেয়।

ওই দিনের ঘটনায় কোথাও আবু সাঈদের মৃত্যুর কথা কেন উল্লেখ করা হয়নি তা জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার আলমগীর চৌধুরী বলেন, “ঘটনাটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনের রাস্তায় ঘটনাটি ঘটেছে। সেটি বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার মধ্যে পড়ে না। তাই এজাহারে তার নাম উল্লেখ করা হয়নি। এছাড়া মামলা করা হবে কিনা সেটা কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তের উপর নির্ভর করছে।”

এর আগে ১৮ জুলাই বেরোবির ম্যানেজমেন্ট স্ট্যাডিজ বিভাগের প্রফেসর মতিউর রহমানকে আহ্বায়ক করে তিন সদস্যের একটি তথ্য অনুসন্ধান কমিটি গঠন করা হয়। কমিটি গঠন করা হলেও বেধে দেওয়া হয়নি কোনও সময়। কমিটির রেজুলেশনে আবু সাঈদের নাম নয় বরং একজন শিক্ষার্থী নিহত হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

জানতে চাইলে মতিউর রহমান বলেন, “ছাত্ররা হলে না ফিরলে আসলে সঠিক তদন্ত করা সম্ভব নয়। সেই সময়ে যারা স্পটে ছিল, সাঈদের বন্ধু-বান্ধব সবার সাথে কথা বলতে হবে। তারপরই প্রকৃত ঘটনা সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা পাওয়া যাবে।”

জমা পড়েছে ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন

গত ২৯ জুলাই আদালতে আবু সাঈদের ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন রংপুর মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের প্রধান রাজিবুল ইসলাম।

তিনি বলেন, “পোস্টমর্টেম রিপোর্ট কোর্টে জমা দিয়েছি। এরপর যা সত্য তা কোর্টেই বলব।”

আবু সাঈদের হত্যার ঘটনায় কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার (গোয়েন্দা) মারুফ হোসেন জানান, “আমরা মূলত নাশকতা, জ্বালাও-পোড়াও, ভাঙচুর, সরকারি সম্পদের ক্ষতি নিয়ে অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার করছি। মামলার একটি অংশ হচ্ছে আবু সাঈদ নামে এক শিক্ষার্থী নিহতের ঘটনা। এ বিষয়ে আলাদা করে কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি। তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমিটির পর্যালোচনা শেষে একটা সমাধানে আসা যাবে।”

১৭ জুলাই অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (প্রশাসন ও অর্থ) সায়কুজ্জামান ফারুকীর নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটিকে সাত কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হলেও তদন্তের জন্য আরও সাত দিন সময় বাড়ানো হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো. মনিরুজ্জামান।

আবু সাঈদ নিহতের ঘটনা তদন্তের অগ্রগতি নিয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “বিষয়টি খুবই সেনসিটিভ। প্রাথমিকভাবে ম্যাজিস্ট্রেট সুরতহাল রিপোর্ট করেছেন, এছাড়াও পোস্টমর্টেম রিপোর্ট হাতে পেলে মৃত্যুর কারণ নিশ্চিত করা সহজ হবে। এছাড়াও অনেক সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তদন্তের স্বার্থে আমরা এসব এখন ওপেন করতে পারব না।”

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত