Beta
মঙ্গলবার, ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫
Beta
মঙ্গলবার, ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫

‘আদালত রাগ দেখানোর জায়গা না’

হট্টগোলরত আইনজীবীদের উদ্দেশে বিচারক
সাবেক মুখ্য সচিব আবুল কালাম আজাদকে হত্যামামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে রবিবার ঢাকার আদালতে নেওয়া হয়।
সাবেক মুখ্য সচিব আবুল কালাম আজাদকে হত্যামামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে রবিবার ঢাকার আদালতে নেওয়া হয়।
[publishpress_authors_box]

সাবেক মুখ্য সচিব ও সংসদ সদস্য আবুল কালাম আজাদের জামিন আবেদনের বিরোধিতা করে আদালতে আইনজীবীদের হট্টগোলে উষ্মা প্রকাশ করেছেন ঢাকার এক বিচারক।

তিনি বলেছেন, “কোর্ট রাগ দেখানোর জায়গা না, যতক্ষণ গাউন পরে থাকবেন।”

এই বিচারক কয়েকজন আইনজীবীকে ডেকে চিৎকার, হট্টগোল করতে বারণও করেন।

রবিবার ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে আবুল কালাম আজাদকে তোলা হলে মূলত বিএনপি সমর্থক আইনজীবীরা তার জামিনের আবেদনের বিরোধিতা করে হৈ চৈ করেন।

তখন উষ্মা প্রকাশের পাশাপাশি শুনানি শেষে আবুল কালামকে একটি হত্যামামলায় সাত দিন রিমান্ডের আদেশ দেন অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম জিয়াদুর রহমান।

সাবেক মুখ্য সচিব আজাদ গত জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে জামালপুরে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন।

ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকারের পতন হওয়ার পর সংসদ বিলুপ্ত হলে আজাদের সংসদ সদস্যপদও যায় চলে।

এর দুই মাস পর শনিবার ঢাকার গুলশান থেকে আজাদকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তাকে যুবদল নেতা শামীম হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে রবিবার আদালতে নেয় পুলিশ। শামীম গত বছর নিহত হয়েছিলেন।

আজাদের আগে আওয়ামী লীগের আরও নেতা গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। তাদের কেউ কেউ আদালত প্রাঙ্গণে আক্রান্তও হয়েছিলেন। এখন আক্রমণ তেমন না হলেও আইনজীবীদের হৈ চৈ চলছে।

আজাদকে আদালতে নেওয়ার পর মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পল্টন মডেল থানার এসআই তন্ময় কুমার বিশ্বাস ১০ দিন রিমান্ডের আবেদন জানান।

রিমান্ডের পক্ষে প্রথমে শুনানি করেন বিএনপি সমর্থক আইনজীবী ওমর ফারুক ফারুকী।

তিনি বলেন, “এই আসামি ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার মুখ্য সচিব। অন্যায় অপকর্মে সাহায্য করায় তাকে নমিনেশন দেয়। জোর করে সিল মেরে সংসদ সদস্য হন।

“গত ১৪ বছর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অবস্থান করে মানুষের ওপর স্বৈরাচার কায়েম করেছে। বিরোধীদের হত্যা, গুমে তার ভূমিকা ছিল। গত বছর ২৮ অক্টোবর বিএনপির মহাসমাবেশে হামলা চালাতে তার ভূমিকা ছিল। সেখানে যুবদলের নেতা শামীম মারা যায়।”

আবুল কালাম আজাদ।

আজাদের পক্ষে তার আইনজীবী রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিনের আবেদন করেন। তিনি বলেন, “তিনি একজন সফল সচিব।”

এসময় এজলাসে উপস্থিত আইনজীবীরা হৈ চৈ শুরু করেন। ওমর ফারুক বলেন, “তিনি যে সফল সচিব, সেটা কীভাবে প্রমাণ করবেন?”

তখন বিচারক বলেন, “ভুলে যাবেন না আইনজীবীদের আচরণ আইনজীবীদের মতো হতে হবে। উনি একজন সিনিয়র আইনজীবী।”

এরপর আসামিপক্ষের আইনজীবী আজাদের পক্ষে আরও কিছু বললে বিএনপি সমর্থক আইনজীবীরা আবার চৈ চৈ করে ওঠেন।

তখন বিচারক বলেন, “আপনারা শোনেন, ফ্যাসিবাদ মানে ইনটলারেন্স টু আদারস। এরকম হট্টগোল আগে দেখিনি। বড় বড় মামলা করেছি। উনাদের (আসামিপক্ষ) সুযোগ দিতে হবে।”

এরপর আসামিপক্ষের আইনজীবী বলেন, “৭০৪ জন আসামির মধ্যে তার (আজাদ) নাম নাই। বাদী ভুলেও উচ্চারণ করেননি। একজন সচিব হিসেবে জাপানের মতো দেশে রাষ্ট্রীয় খেতাবে ভূষিত করা হয়েছে। তিনি ২০১৮ সালে রিটায়ায় করেন। মামলার বিষয়ে জানেন না। এমপি হিসাবে এলাকায় অনেক কাজ করেছেন। এলাকাকে আলোকিত করেছেন।”

তখন বিএনপি সমর্থক আইনজীবীরা বলতে থাকেন- এত টাকা কই পেল? ভোট চাইতে হয়নি, চুরি করেছে।

হৈ চৈয়ের এক পর্যায়ে বিচারক আইনজীবীদের উদ্দেশে বলেন, “আদালতে হট্টগোল করলে নিউজ হয়। বিষয়টা এমন যেন না হয় যে কোর্টকে প্রেশার দিচ্ছেন। প্রেশার নেওয়া মানুষ আমি না। এজন্য এতদিন এখানে (ঢাকায়) আসিনি।

“আর আপনারা যে হট্টগোল করছেন, আপনাদের তো নাম আসছে না। কারণ আদালতের ভেতরে কোনও টেলিভিশন নেই। বাইরে গিয়ে যত বক্তব্য দেওয়ার দেবেন। এমন করলে মানুষ বলবে এটা ক্যাঙ্গারু কোর্ট।”

এরপর তিনি কয়েকজন আইনজীবীকে ডেকে ডেকে হট্টগোল করতে বারণ করে বলেন, আদালত রাগ দেখানোর স্থান নয়।

এরপর বিচারক যুবদল নেতা শামীম হত্যামামলায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আজাদকে সাত দিন পুলিশ হেফাজতে রাখার আদেশ দেন।

শুনানি চলাকালে জলভরা চোখে কাঠগড়ায় দাঁড়িয়েছিলেন আবুল কালাম আজাদ।

তিনি আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব, বিদ্যুৎ বিভাগের সচিব এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিবের দায়িত্ব পালনের পর মুখ্য সচিবের পদ পেয়েছিলেন। ২০১৮ সালে অবসর নেওয়ার পর তাকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়কের দায়িত্ব তাকে দিয়েছিলেন শেখ হাসিনা।

গত ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত সংসদ নির্বাচনে আজাদ জামালপুর-৫ আসন থেকে নৌকার প্রার্থী হয়ে সংসদ সদস্য হন।

তার বিরুদ্ধে মামলায় অভিযোগে বলা হয়, ২০২৩ সালের ২৮ অক্টোবর বিএনপির মহাসমাবেশ পণ্ড করার জন্য আওয়ামী লীগও সমাবেশ ডেকেছিল। বিএনপি নেতা-কর্মীদের হত্যা ও গুম করার উদ্দেশ্যে পুলিশের সহায়তায় সেই মহাসমাবেশে হামলা চালানো হয়। এতে বিএনপির অনেকে আহত হন। তাদের মধ্যে যুবদল নেতা শামীম পরে মারা যান।

গত বছরের ঘটনায় গত ২৪ সেপ্টেম্বর পল্টন থানায় মামলাটি করা হয়।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত