Beta
শনিবার, ১৭ মে, ২০২৫
Beta
শনিবার, ১৭ মে, ২০২৫

দুদকের নজরে জি এম কাদের

জিএম কাদের
জাতীয় পার্টির এক সংবাদ সম্মেলনে জি এম কাদের। ফাইল ছবি
[publishpress_authors_box]

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ‘গৃহপালিত’ বিরোধী দল জাতীয় পার্টিও রয়েছে চাপে; সেই চাপ আরও বাড়িয়ে দিল দুর্নীতি দমন কমিশন।

দলটির চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের বিরুদ্ধে সংরক্ষিত নারী সংসদ সদস্য মনোনয়নে ঘুষ গ্রহণ, দলীয় পদ ও মনোনয়ন বাণিজ্যসহ নানা অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধানে নেমেছে দুর্নীতি দমন সংস্থাটি।

বৃহস্পতিবার কমিশন এই সিদ্ধান্ত নেয় বলে দুদকের মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) মো. আক্তার হোসেন সাংবাদিকদের জানিয়েছেন।

২০১৪ সালে বিএনপিবিহীন নির্বাচনের পর সংসদে প্রধান বিরোধী দলের ভূমিকা নেওয়ার পাশাপাশি সরকারেও যোগ দেয় জাতীয় পার্টি।

তাদের এই দ্বিমুখিতা রাজনৈতিক অঙ্গনে বেশ আলোচনার সৃষ্টি করেছিল। বিএনপি নেতারা তখন থেকে জাতীয় পার্টিতে ‘গৃহপালিত বিরোধী দল’ বলে আসছিলেন।  

২০১৮ সালের নির্বাচনে বিএনপি আসার পর জাতীয় পার্টি আবার আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোটে ভেড়ে। এরপর ২০২৪ সালের জানুয়ারি নির্বাচনে বিএনপি না আসায় তারা আবার আলাদাভাবে অংশ নিয়েছিল।

ওই নির্বাচনের আট মাসের মাথায় ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর আওয়ামী লীগ যখন ছন্নছাড়া, তখন তাদের মিত্র দল জাতীয় পার্টিও পড়ে চাপে।

অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের চাপে অন্তর্বর্তী সরকারের কোনও বৈঠকে ডাক পাচ্ছে না জাতীয় পার্টি। বিভিন্ন স্থানে কর্মসূচি পালন করতে গিয়েও বাধার মুখে পড়তে হচ্ছে দলটিকে।

বুধবার ঢাকার কাফরুলে জাতীয় পার্টির এক ইফতার অনুষ্ঠানে হামলার পর যখন জি এম কাদের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে সরানোর আওয়াজ তুললেন, তার পরদিনই তার বিরুদ্ধে অনুসন্ধানে নামার কথা জানাল দুদক।

জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা এইচ এম এরশাদ ২০১৯ সালে মারা যাওয়ার পর দলটির চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নেন তার ভাই জি এম কাদের। তিনি ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকারে মন্ত্রী হয়েছিলেন।

এরশাদ জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান থাকার সময়ও দলটির নারী সংসদ মনোনয়নের ক্ষেত্রে অর্ লেনদেনের অভিযোগ ছিল। জি এম কাদের দায়িত্ব নেওয়ার পরও একই অভিযোগ ওঠে।

দুদকের জনসংযোগ দপ্তর থেকে পাঠানো এক বিবৃতিতে বলা হয়, ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর জাতীয় পার্টির সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য মনোনয়নে ১৮ কোটি ১০ লাখ টাকা ঘুষ নেওয়া হয়।

এই অর্থ গ্রহণের মূল সুবিধাভোগী তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জি এম কাদের বলে দুদকের দাবি।

বিবৃতিতে বলা হয়, চুক্তি অনুযায়ী অর্থ পরিশোধ না করায় মাসুদা এম রশীদ চৌধুরীকে দলীয় পদ থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয় এবং তার স্থলে জি এম কাদেরের স্ত্রী শরীফা কাদের সংসদ সদস্য হয়েছিলেন তখন।

দুদকে আসা অভিযোগে আরও বলা হয়, জি এম কাদের জালিয়াতির মাধ্যমে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হন এবং দলীয় পদবাণিজ্য ও মনোনয়ন বাণিজ্যের মাধ্যমে বিপুল অর্থ সংগ্রহ করেন, যা পরে বিদেশে পাচার করা হয়।

গঠনতন্ত্র অনুসারে জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটি ৩০১ সদস্যের হওয়ার কথা হলেও বর্তমানে ৬০০ থেকে ৬৫০ জনকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, যা পদবাণিজ্যের প্রমাণ হিসাবে দেখছে দুদক।

২০২৪ সালের দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে দাখিলকৃত হলফনামা অনুযায়ী জি এম কাদেরের নামে নগদ ৪৯ লাখ ৮৮ হাজার টাকা, ব্যাংকে ৩৫ লাখ ৯৫ হাজার টাকা এবং ৮৪ লাখ ৯৮ হাজার টাকা মূল্যের একটি জিপ গাড়ি রয়েছে।

আর তার স্ত্রী শরীফা কাদেরের নামে নগদ ৫৯ লাখ ৫৯ হাজার টাকা, ব্যাংকে ২৮ লাখ ৯ হাজার টাকা এবং ৮০ লাখ টাকা মূল্যের তারও একটি জিপ গাড়ি রয়েছে। তার স্থাবর সম্পদের মধ্যে লালমনিরহাট ও ঢাকায় জমি ও ফ্ল্যাট রয়েছে।

দুদকের জনসংযোগ দপ্তর দাবি করছে, জি এম কাদের সিঙ্গাপুর, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়াসহ বিভিন্ন দেশে নামে-বেনামে সম্পদ পাচার করেছেন। দুদকের গোপন অনুসন্ধানে তার প্রমাণ মিলেছে।

দুদকে আসা অভিযোগ এবং অনুসন্ধানের বিষয়ে বক্তব্য জানতে জি এম কাদেরের ব্যক্তিগত মোবাইল নম্বরে বৃহস্পতিবার কল দিলে সেটি বন্ধ পাওয়া যায়। যে কারণে অভিযোগের বিষয়ে তাৎক্ষণিকভাবে তার বক্তব্য জানা সম্ভবপর হয়নি।

বুধবার কাফরুলে জাতীয় পার্টির ইফতার অনুষ্ঠানে হামলার পর এক ভিডিও বার্তায় জি এম কাতের বলেন, “ওনারা (অন্তর্বর্তী সরকার) যখন পারছেন না, তখন ওনাদের ছেড়ে দিয়ে যাওয়া উচিৎ। ওনারা যত তাড়াতাড়ি চলে যান, দেশ ও জাতির জন্য ততই মঙ্গল।”

অন্তর্বর্তী সরকার দেশকে বিভক্ত করে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাচ্ছে বলে দাবি করেন তিনি। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে নির্বাচন নিরপেক্ষ হবে না বলেও তিনি দাবি করেন।  

এরশাদের ভাই জি এম কাদের ১৯৯৬ সালে প্রথম সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০০৯ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত তিনি বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ছিলেন।

এরশাদের মৃত্যুর পর জাতীয় পার্টির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ভাবি রওশন এরশাদের সঙ্গে বিরোধে জড়িয়ে পড়েন জি এম কাদের। পরে দলটির জ্যেষ্ঠ নেতাদের মধ্যস্ততায় সুরাহা হয়। তাতে জি এম কাদের দলের নেতৃত্ব নেন, রওশন হন সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত