Beta
শুক্রবার, ১৬ মে, ২০২৫
Beta
শুক্রবার, ১৬ মে, ২০২৫

বিমানবন্দরে বিদেশি মুদ্রা সংগ্রহ-পাচারে জড়িত ব্যাংকাররা : দুদক

SS-DUDOK-ACC-060224
[publishpress_authors_box]

প্রবাসী কর্মজীবী ও ভ্রমণকারীরা দেশে এলে বিমানবন্দর থেকে তাদের কাছ থেকে বিদেশি মুদ্রা সংগ্রহ করে পাচার করছে একটি চক্র, যার সঙ্গে জড়িত বিভিন্ন ব্যাংক ও মানি এক্সচেঞ্জারের অসাধু কর্মকর্তারা। মঙ্গলবার দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সচিব মো. মাহবুব হোসেন সাংবাদিকদের এই তথ্য জানান।

সোমবার বিমানবন্দরে দুদকের অভিযানে এই চক্রের সন্ধান পাওয়া যায়। গোয়েন্দা সূত্রে তথ্য পেয়ে সুনির্দিষ্ট লিখিত অভিযোগের প্রেক্ষিতে দুদকের উপপরিচালক সৈয়দ নজরুল ইসলামের নেতৃত্বে এই অভিযান পরিচালনা করা হয় বলে জানান দুদক সচিব।

তিনি বলেন, প্রবাসী শ্রমিকরা হযরত শাহ জালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে মূল্যবান যে রেমিটেন্স নগদ ও বৈদেশিক মুদ্রায় আনেন, তা ব্যাংকিং চ্যানেলে রাষ্ট্রীয় রিজার্ভে জমা হওয়ার কথা। কিন্তু অসাধু ব্যাংকাররা ব্যাংকের টাকা ব্যবহার করে তা ব্যাংকিং চ্যানেলে সংগৃহীত না দেখিয়ে নিজেরাই ক্রয়পূর্বক মার্কেটে বিক্রি করে দেন, যা পরবর্তী সময়ে বিদেশে পাচার হয়ে যায়।

তিনি বলেন, এই অসাধু কর্মকর্তাদের কারণে প্রতিদিন শত কোটি টাকা সমমূল্যের বৈদেশিক মুদ্রা থেকে ব্যাংকিং খাত বঞ্চিত হচ্ছে। এই অনিয়মে জড়িত বিভিন্ন ব্যাংকের অসাধু কর্মকর্তা ও মানি এক্সচেঞ্জার প্রতিষ্ঠান।

সোমবারের অভিযান শেষে বিদেশি মুদ্রার কালোবাজারির সঙ্গে জড়িত ব্যাংক ও মানি এক্সচেঞ্জারের কর্মকর্তাদের একটি সংঘটিত চক্রের সন্ধান পেয়েছে দুদক।

এ বিষয়ে ব্যাখা তুলে ধরেন দুদক সচিব। তিনি বলেন, সাধারণত প্রতিদিন হাজার হাজার প্রবাসী কর্মজীবী ও বিদেশ থেকে আসা ভ্রমণকারীরা বিমানবন্দর হয়ে বাংলাদেশে আসেন। তারা তাদের সঙ্গে আনা বিদেশি মুদ্রা বিমানবন্দরে থাকা ব্যাংকের বুথ ও মানি এক্সচেঞ্জারে দেশীয় মুদ্রা বা বাংলাদেশি টাকায় এনকেশমেন্ট করে থাকেন। আইন, বিধি ও নিয়ম অনুযায়ী ফরেন কারেন্সি এনক্যাশমেন্ট ভাউচার এনক্যাশমেন্টকারীকে দিতে হয়। কিন্তু ব্যাংক ও মানি এক্সচেঞ্জার ভাউচার না দিয়ে বা জাল ভাউচার দিয়ে সরাসরি কারেন্সি গ্রহণ করে তার বিনিময়ে টাকা দিয়ে দেয়।  এছাড়া তারা স্বাক্ষরবিহীন, ভুয়া ভাউচার বা এনকেশমেন্ট স্লিপ দেয়। এই বিদেশি মুদ্রার ক্রয়কারী ব্যাংক ও মানি এক্সচেঞ্জার প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের মূল হিসাবে বা প্রতিষ্ঠানের অনুমোদিত অ্যাকাউন্টে অন্তর্ভূক্ত করে না। ফলে কেন্দ্রীয় রিজার্ভে এসব বিদেশি মুদ্রা যুক্ত হয় না। ফলে বাংলাদেশে বিদেশি মুদ্রার ঘাটতি বা সংকটের সৃষ্টি হয়।

দুদকের অভিযানে বিমানবন্দরে অবৈধভাবে বিদেশি মুদ্রায় ক্রয়-বিক্রয়ে ও মানিলন্ডারিংয়ে জনতা ব্যাংক, সোনালী ব্যাংক, অগ্রণী ব্যাংক, মিচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক, পূবালী ব্যাংক, প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক, যমুনা ব্যাংক প্রভৃতি এবং কিছু মানি এক্সচেঞ্জার প্রতিষ্ঠান- এভিয়া মানিএক্সচেঞ্জার ও ইমপ্রেরিয়াল মানি এক্সচেঞ্জার জড়িত থাকার বিষয়ে প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া যায় বলে জানান সচিব।

তিনি বলেন, এই অনিয়মের ফলের প্রতিদিন আনুমানিক ১০০ কোটি টাকা সমমূল্যের বৈদেশিক মুদ্রা থেকে ব্যাংকিং খাত বঞ্চিত হচ্ছে। অপরাধে জড়িতরা অবৈধভাবে ক্রয়কৃত ডলার, ইউরো, রিয়াল, রিঙ্গিত, পাউন্ড, দিনার ও অন্যান্য ফরেন কারেন্সি সংগ্রহ করার পর অর্থপাচারকারীদের সরবরাহ করে। অভিযানে এর সুস্টষ্ট তথ্য পাওয়া যায়।

দুদকের এনফোর্সমেন্ট টিম অভিযানকালে ব্যাংক ও মানি এক্সচেঞ্জারকর্তৃক এনক্যাশমেন্ট স্লিপ ব্যতীত কারেন্সি ক্রয়-বিক্রয় সংক্রান্ত প্রাথমিক তথ্য প্রমাণ, একাধিক ভুয়া ভাউচার ও স্বাক্ষরবিহীন ভাউচার সংগ্রহ করেছে। এছাড়া অবৈধভাবে কারেন্সি ক্রয়-বিক্রয়, পাচার ও কালোবাজারির সঙ্গে জড়িত প্রতিষ্ঠান ও সংশ্লিষ্ট অন্যান্য ব্যক্তিদের বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য-প্রমাণ অভিযান পরিচালনাকারী টিম সংগ্রহ করেছে।

দুদক সচিব বলেন, সন্দেহভাজন ও জড়িত ব্যাংক কর্মকর্তারা কমিশনের কর্মকর্তাদের নজরদারিতে রয়েছেন। তাদের মদদদাতা ও সহযোগীদের বিষয়েও কমিশনের নির্দেশে তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। এ বিষয়ে কমিশন আইন ও বিধি অনুযায়ী পরবর্তী আইনি ব্যব্যস্থা গ্রহণ করবে।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত