জামিনে মুক্ত আসামির তথ্যে প্রায় দুই বছর আগে নিখোঁজ এক যুবককে হত্যা ও গুমের ঘটনা উন্মোচিত হয়েছে বলে জানিয়েছে র্যাব।
নাটোরের গুরুদাসপুরের চাঁচকৈড় পুরানপাড়া মহল্লার একটি মহিলা মাদ্রাসার সেপটিক ট্যাংকের পাশ থেকে রবিবার বিকাল সোয়া ৩টার দিকে মফিজুল ইসলাম নামের ওই যুবকের মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
মফিজুল ইসলাম ২০২২ সালের ১৭ এপ্রিল নিখোঁজ হন। সেসময় তার বয়স ছিল ২৫।
মফিজুল গুরুদাসপুর পৌরসভার খলিফাপাড়া এলাকার আজাত মোল্লা ও মাইনুর বেগমের ছেলে। জামিনে মুক্ত ওই আসামির নাম জাকির মুন্সী। তিনিও খলিফাপাড়া এলাকার বাসিন্দা।
র্যাব-৫ এর নাটোর ক্যাম্পের কোম্পানি কমান্ডার সঞ্জয় কুমার সরকার জানিয়েছেন, প্রেমের সম্পর্কের জেরে মফিজুলকে হত্যা ও গুম করা হয়। এ ঘটনায় সিরাজগঞ্জের বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিম থানার গোলচত্বর এলাকায় অভিযান চালিয়ে শনিবার সকালে আশরাফুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মামলায় আরও তিন জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তারা হলেন আবু তাহের খলিফা, তার মেয়ে তানজিলা খাতুন ও জামাতা আল হাবিব সরকার।
গ্রেপ্তার আল হাবিব সরকার সিরাজগঞ্জের তাড়াশের তালোম কাচারিপাড়া এলাকার মো. ওজারত আলীর ছেলে। হাবিব সরকারের মামা শ্বশুর আশরাফুল ইসলাম গুরুদাসপুরের খামাড়নাচকৈড় এলাকার মো. আব্দুস সামাদের ছেলে।
সঞ্জয় কুমার সরকার জানান, হাবিবের স্ত্রী তানজিলা ও মফিজুল খলিফাপাড়ায় একটি বিস্কুট ফ্যাক্টরিতে কাজ করতেন। সে সময় তারা প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন। বিষয়টি জানাজানি হলে মফিজুলকে খুনের পরিকল্পনা করেন হাবিবের শ্বশুর আবু তাহের খলিফা। মফিজুলকে ফোনে খুন করার হুমকিও দেন আবু তাহের।
পরিকল্পনামাফিক ২০২২ সালের ১৭ এপ্রিল রাত ১১টার দিকে তানজিলাকে ‘চাপ দিয়ে’ মোবাইল ফোনের মাধ্যমে গুরুদাসপুরের চাঁচকৈড় পুরানপাড়া মহল্লার বাসায় মফিজুলকে ডেকে নেন অভিযুক্তরা।
মফিজুল যাওয়ার পর আশরাফুলসহ অন্য আসামিরা তার মুখ স্কচটেপ দিয়ে আটকে দেয়। একপর্যায়ে মফিজুলকে ধারালো শাবল দিয়ে আঘাত করেন আশরাফুল। এতে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। এরপর তারা মফিজুলের মরদেহ একটি প্লাস্টিকের বস্তায় ভরে বাড়ির পাশের মাদ্রাসার সেপটিক ট্যাংকের পাশে মাটিতে পুঁতে রাখে।
মফিজুলের খোঁজ না পেয়ে তার মা মাইনুরা বেগম গুরুদাসপুর থানায় ওই বছরের ৭ মে জিডি করেছিলেন।
র্যাব কর্মকর্তা সঞ্জয় কুমার আরও জানান, ঘটনার এক বছর পর ২০২৩ সালে হাবিবের সঙ্গে তানজিলা বেগমের দাম্পত্য কলহ বেড়ে যায়। পরে গত বছরের নভেম্বরে তানজিলা তার স্বামীর বিরুদ্ধে নারী নির্যাতন আইনে মামলা করলে কারাগারে যান হাবিব।
কারাগারে হাবিবের সঙ্গে পরিচয় হয় জাকির মুন্সীর। মফিজুলের সঙ্গে নিজের স্ত্রীর সম্পর্ক ও তাকে হত্যার পর লাশ গুমের কথা একদিন জাকিরকে বলে ফেলেন হাবিব।
গত সপ্তাহে কারাগার থেকে জামিনে মুক্তি পান জাকির। এরপর মফিজুলের মাসহ খলিফাপাড়ার আরও কয়েকজনকে হাবিবের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য জানান।
গুরুদাসপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) উজ্জল হোসেন বলেন, জাকিরের ফাঁস করা তথ্যের ভিত্তিতে শুক্রবার রাতে মফিজুলের মা গুরুদাসপুর থানায় তিনজনের নাম উল্লেখ করে ও অজ্ঞাতপরিচয় দুইজনকে আসামি করে হত্যা মামলা করেন। আদালত শনিবার মফিজুলের লাশ উদ্ধারের নির্দেশ দেয়। মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে।