এই তো কিছুদিন আগে মেট গালায় রূপকথার বাগানের মতো শাড়ির আঁচল ছড়িয়ে মন কেড়েছিলেন আলিয়া ভাট। সেই মুগ্ধতার রেশ ছাপিয়ে এখন ক্যামেরায় ধরা পড়ছে কান উৎসবে ভাবনার একেক দিনে একেক বৈচিত্রের পোশাক।
আগে কানে বলিউডের ঐশ্বরিয়া কী পরেছেন তা নিয়ে শিরোনাম করার ধুম পড়ে গেলেও এবার যেন ঢাকার ভাবনার খবরই পত্রিকা, ইউটিউব আর ফেইসবুকে চোখে পড়ছে বেশি বেশি।
কান উৎসবের ৭৭তম আসরে নিজে থেকে যোগ দিয়ে অভিনেত্রী আশনা হাবিব ভাবনা এখন আছেন দক্ষিণ ফ্রান্সের কান সমুদ্র সৈকতের কাছেপিঠেই।
১৪ মে শুরু হয়েছে সারা বিশ্বের তারকাদের এই মিলনমেলা। ২৫ মে পুরস্কার বিতরণী আয়োজন দিয়ে পর্দা নামবে উৎসবের।
প্রথমবারের মতো কানে হাজির হয়েই ক্যামেরার চোখ কেড়েছেন ভাবনা। তিনি নিজেই প্রতিদিন ছবি পোস্ট করছেন ফেইসবুক টাইমলাইনে।
ছোট পর্দার অভিনেত্রী এবং পুরস্কার পাওয়া নৃত্যশিল্পী আশনা হাবিব ভাবনা আজকাল ওটিটি এবং সিনেমা নিয়েও ব্যস্ত আছেন। এসবের ফাঁকে লেখক হিসাবেও আত্মপ্রকাশ ঘটেছে তার; মলাটবদ্ধ করেছেন নিজের লেখা উপন্যাস এবং কাব্যগ্রন্থ।
কান উৎসবে ভাবনা বেশ প্রস্তুতি নিয়েই গেছেন। একেকদিনের পোশাকের নকশা বলে দিচ্ছে পোশাক পরে শুধু দেখতে সুন্দর লাগাই নয়, আরও অনেক কিছু বলতে চান ২৯ বছর বয়সী এই মডেল ও নায়িকা।
কানে প্রিয় কাক নিয়ে ভাবনা
ভাবনার ভক্তরা জানেন কাকের প্রতি এই তারকার দুর্বলতার কথা। শিল্পী ভাবনা রঙ-তুলিতে কাক এঁকেছেনও। এবার এই কাক নিয়েই কানের লাল গালিচায় হাঁটলেন তিনি।
কানের ছবি ফেইসবুকে পোস্ট করে ভাবনা লিখেছেন, “আমার সঙ্গে আমার কাকটিকেও কানে নিয়ে এসেছি।”
সোনালী রঙের লম্বা ঝুলের পোশাকে উপরে কালো কাক নকশা করা আছে। এর সঙ্গে মিল রেখে হাতে কনুই পর্যন্ত কালো গ্লাভস পরেছেন তিনি। পায়ে কালো হিল জুতা, কানে কালো গোল দুল পরেছেন। চুল রেখেছেন খোলা। নুড লিপস্টিক ও নুড মেকআপে গালে গোলাপি আভা সেদিন একটু বেশিই ছড়িয়েছিলেন ভাবনা।
জংলি ফুলের কালো গাউনে ভাবনা
এরপর ভাবনা পরেছিলেন লাল-সোনালী কাজ করা কালো গাউন। কান উৎসবে থাকা দেশীয় সংবাদমাধ্যমের কাছে এদিন ভাবনা অকপটেই জানান, প্রস্তুতিতে কোনো কার্পণ্য না করে সুটকেস ভরে পোশাক নিয়ে এসেছেন তিনি।
ভাবনার পরা বেনা পোশাকের নকশা করেছেন বাংলাদেশি ডিজাইনার আসমা সুলতানার ব্র্যান্ড জোয়ান অ্যাশ। পুরো পোশাকে ছিল জংলি ফুলের কারুকাজ করা। গাউনের হুডি কাঁধ ছাড়িয়ে মেঝেতে ছড়িয়ে ছিল।
বেনারসি, তবে শাড়ি নয়
আগেই জানিয়েছিলেন বেনারসিও পরবেন কানে; তারপর লাল বেনারসি পরে আবারও চমক দিলেন ভাবনা। শাড়ি নয়; দেশীয় ঐতিহ্যের লাল-সোনালী বেনারসি দিয়ে বানানো পাশ্চাত্যের পোশাকে ভাবনা আরও উজ্জ্বল হয়ে উঠলেন লাল গালিচায়।
কানে পরেছিলেন ড্যাজল বাই সোনিয়ার ডিজাইনে লম্বা ঝুলের দুল। এক পায়ের গোড়ালিতে পরেছিলেন ক্যানভাস ব্র্যান্ডের খাড়ু। পায়ের লাল স্যান্ডেলে খুব একটা হিল বসানো ছিল না। চুল ছিল বাঁধা। আর এবারও ভাবনার মুখে প্রসাধনীর বাড়াবাড়ি ছিল না এতটুকু।
কালো গাউনে লেখা ববিতা-সুবর্ণার নাম
১৮ মে আবারও কালো গাউনে নিজের একাধিক ছবি ফেইসবুকে পোস্ট করেন ‘ভয়ংকর সুন্দর‘ সিনেমার নায়িকা ভাবনা। মিশমিশে কালো রঙের গাউন দিনের আলোয় চকচক করছিল। গাউনের নিচের অংশে রঙিন বড় বড় ফুল-পাতার নকশা; এরই ফাঁকে ফাঁকে ঝকমকে কারুকাজে লেখা হয়েছে ভাবনার প্রিয় অভিনেত্রীদের নাম – ববিতা, সুবর্ণা মোস্তফা, অড্রে হেপবার্ন, মেরিল স্ট্রিপ। ভাবনার এই পোশাক বানিয়েছে অনন্যা অদিতি ব্র্যান্ড। কালো পোশাকের সঙ্গে ড্যাজল বাই সোনিয়ার নকশায় সাদা ও সবুজ দ্যুতি ছড়ানো গহনা পরেছেন কান, গলা, হাত আর আঙুলে।
মায়ের শাড়িতে কানে গালিচায়
ভাবনার কান প্রস্তুতিতে দেশীয় শাড়ি একেবারেই বাদ পড়েনি।
এর আগে কানে নায়িকা আজমেরী হক বাঁধনের জামদানি সাড়া ফেলেছিল। ভাবনাও এবার কানে ধরা দিলেন জামদানিতে। নিয়ন গ্রিন ঢাকাই জামদানির সঙ্গে পরেছিলেন ইমাম হাসানের নকশায় রিকশা পেইন্টের ব্লাউজ। স্লিভলেস ব্লাউজের পিঠে নুড রঙের স্বচ্ছ ফেব্রিকের উপরে রিকশা আর্টে দুটো ময়ূর, পাখা ও ফুলের মোটিফ করা হয়েছে। ব্লাউজের সামনে বসেছে রাজশাহী সিল্কের ফেব্রিক। ব্লাউজের কোমরে পেছনে সবুজ টাসেল ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে। বড় করে খোঁপার সঙ্গে কান, গলা, মাথায় গহনা পরেছিলেন ভাবনা।
সবুজের পর আবার লাল শাড়ি পরে আসেন ভাবনা। ১৯ মে নিজের একাধিক ছবি পোস্ট করলেন ফেইসবুকে; কোনোটিতে হাওয়ায় চুমু ছুড়ে দিচ্ছেন, কোনোটিতে হাত নাড়ছেন তিনি। লাল গালিচায় ভাবনার লাল শাড়িতে চারিদিকেও যেন লালিমা ছড়িয়ে ওঠে। এই শাড়ি ভাবনার কাছে একটু বিশেষ সে কথাও ভক্তদের জন্য লিখে জানিয়েছেন ভাবনা।
“মায়ের শাড়ি পরে লাল গালিচায় হেঁটেছি। এ যেন খুব সম্মান আর গর্বের মুহূর্ত আমার কাছে। আমি শুধু নিজেকেই তুলে ধরছি না এখানে; আমার সঙ্গে তুলে ধরছি আমার মা, পরিবার এবং আমার গোটা জীবনে তাদের দেওয়া ভালোবাসাকেও। আমাকে ঘিরে থাকা এই শাড়ি যেন আমাকে ভরসা দিচ্ছে, আমাকে মনে করিয়ে দিচ্ছে আমি কোথা থেকে এসেছি, আমার মূল্যবোধ কী – সেসব কিছু যা আজকের আমাকে গড়ে তুলেছে।”