ঘুষ কেলেঙ্কারির পর বিনিয়োগকারীরা মুখ ফিরিয়ে নেওয়ায় এক বছরে মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে এসেছে ভারতীয় ধনকুবের গৌতম আদানির ডলার বন্ডের দাম।
গত বুধবার (২০ নভেম্বর) ঘুষ ও প্রতারণার অভিযোগে যুক্তরাষ্ট্রে মামলা ও প্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয় ভারতের আদানি গ্রুপের চেয়ারম্যান গৌতম আদানির বিরুদ্ধে।
ওই মামলার পর থেকেই শেয়ারবাজারে বড় ধসের পাশাপাশি আদানির ডলার বন্ডের মূল্য কমতে থাকে। এর মধ্যে ডলার বন্ডের দাম আরও কমে সোমবার এক বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন স্তরে নেমে আসে।
বিনিয়োগকারীরা মুখ ফিরিয়ে নেওয়ায় এবং কিছু ব্যাংক ঋণ স্থগিত করা আদানি বন্ডের এই দরপতনের কারণ বলে মনে করা হচ্ছে।
সোমবার এশিয়ার বাজারে আদানি পোর্টস অ্যান্ড স্পেশাল ইকোনমিক জোন-এর সবচেয়ে তরল কয়েকটি বন্ডের দাম ১ থেকে ২ সেন্ট কমেছে। একই পরিমাণে কমেছে আদানি ট্রান্সমিশন ডেবট-এর দামও।
২০২৭ সালে পরিপক্ক হতে যাওয়া পোর্টস বন্ডের দাম ১.৬ সেন্ট কমে ৮৮.৯৮ সেন্টে নেমে এসেছে। অভিযোগ দায়ের করার পর থেকে এ বন্ডের দাম প্রায় ৭ সেন্ট কমেছে।
সোমবার দীর্ঘমেয়াদি পোর্ট বন্ডের দামও ৮ থেকে ১০ সেন্ট কমে গেছে।
২০৩৬ সালের মে মাসের মধ্যে পরিপক্ক হতে যাওয়া আদানি ট্রান্সমিশন ডেবট বন্ডের দাম কমে গেছে ১.৮ সেন্ট। এ বন্ডের মোট দাম কমেছে ৭ সেন্টেরও বেশি।
গৌতম আদানি ও তার কয়েকজন সহযোগীর বিরুদ্ধে গত বুধবার যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের ফেডারেল আদালতের কৌঁসুলিরা ঘুষ ও প্রতারণার অভিযোগ আনেন।
তাদের বিরুদ্ধে বিদ্যুৎ প্রকল্পের কাজ পেতে ভারতের সরকারি কর্মকর্তাদের ঘুষ দেওয়া এবং এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রে বিনিয়োগকারীদের কাছে তথ্য গোপনের অভিযোগ আনা হয়েছে।
নিউ ইয়র্কের প্রসিকিউটররা দাবি করেছেন, ভারতের শীর্ষস্থানীয় শিল্পপতি আদানি ও তার অন্য শীর্ষ নির্বাহীরা তার নবায়নযোগ্য জ্বালানি কোম্পানির জন্য কাজ পেতে চুক্তির জন্য রাজি করাতে ভারতীয় কর্মকর্তাদের ২৬ কোটি ডলার ঘুষ দিতে সম্মত হয়েছিল।
চুক্তিটি করা গেলে আদানির কোম্পানি ভারতের সবচেয়ে বড় সৌর বিদ্যুৎ প্রকল্প নির্মাণের কাজ পেত, যা থেকে ২০ বছরে তাদের ২০০ কোটি ডলার লাভ হত।
আদানি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ঘনিষ্ট মিত্র। সমালোচকরা দীর্ঘ দিন ধরে মোদির কাছ থেকে অনৈতিকভাবে লাভবান হওয়ার জন্য আদানিকে দোষারোপ করে আসছিলেন।
অভিযোগের পর গত চারদিনে আদানি গ্রুপের ১০টি কোম্পানি প্রায় ৫০ বিলিয়ন ডলার বাজারমূল্য হারিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের আদালতের এই পদক্ষেপ ৬২ বছর বয়সী ধনকুবের আদানির জন্য নতুন এক ধাক্কা। বিশ্বজুড়ে বন্দর ব্যবস্থাপনা থেকে শুরু করে নবায়নযোগ্য জ্বালানি পর্যন্ত বিভিন্ন খাতে থাকা তার ১৬৯ বিলিয়ন ডলারের ব্যবসায়িক সাম্রাজ্য মুখ থুবড়ে পড়তে শুরু করেছে।