তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের মামলায় দণ্ড থেকে মুক্ত হলেন শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান শুভ্র।
আওয়ামী লীগের শাসনামলে বিচারিক আদালতের রায়ে তার দুই বছরের সাজা হয়েছিল। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আসার পর হাইকোর্ট বিচারিক আদালতের সেই রায় বাতিল করে দিল।
১১ বছর আগের মামলাটিতে সাইবার ট্রাইব্যুনালের গত বছরের দেওয়া দণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে করা আপিল মঞ্জুর করে বৃহস্পতিবার এ রায় দেয় বিচারপতি আবদুর রবের একক হাইকোর্ট বেঞ্চ।
ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের তিন দিন পর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়েছে, তার উপদেষ্টা হিসাবে শপথ নিয়েছেন আদিলুর।
বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার আমলে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেলের দায়িত্বে থাকা আদিলুর ‘অধিকার’ নামে একটি মানবাধিকার সংগঠনের সম্পাদক।
আদিলুরের সঙ্গে এই সংগঠনটির পরিচালক নাসিরউদ্দিন এলানও দণ্ডিত ছিলেন। তারা সাজাও বাতিল হয়ে গেছে হাইকোর্টের রায়ে।
২০১৩ সালের ৫ মে মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযান নিয়ে অসত্য তথ্য প্রচারের অভিযোগে আদিলুর ও এলানের বিরুদ্ধে মামলাটি হয়েছিল।
সরকারের ভাষ্য অনুযায়ী, সেই দিন ১৩ জন নিহত হয়েছিল। অন্যদিকে অধিকারের প্রতিবেদনে নিহতের সংখ্যা ৬১ বলা হয়েছিল।
আদিলুরকে ২০১৩ সালের ১০ আগস্ট গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তাকে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদও করে পুলিশ। সেই দফায় ৬১ দিন কারাগারে থেকে জামিনে ছাড়া পেয়েছিলেন তিনি।
গ্রেপ্তারের পর ওই বছরের ১১ আগস্ট আদালতের অনুমতি নিয়ে অধিকারের কার্যালয়ে তল্লাশি চালিয়ে দুটি কম্পিউটার ও দুটি ল্যাপটপ জব্দ করা হয়।
এরপর ওই বছরের ৪ সেপ্টেম্বর আদিল ও এলানের বিরুদ্ধে আদালতে প্রতিবেদন জমা দেয় ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি)।
পুলিশের সেই প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, আদিলুর রহমান ও নাসির উদ্দিন এলান ৬১ জনের মৃত্যুর ‘বানোয়াট, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও মিথ্যা’ তথ্যসংবলিত প্রতিবেদন তৈরি ও প্রচার করে জনমনে ক্ষোভের সৃষ্টি করেন। আইনশৃঙ্খলা বিঘ্নের অপচেষ্টা চালান। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, সরকার ও রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি দেশে-বিদেশে চরমভাবে ক্ষুণ্ন করেন।
তথ্য প্রযুক্তি আইনের বহুল আলোচিত ও বিতর্কিত ৫৭ (২) ধারার সেই মামলায় ২০১৪ সালের ৮ জানুয়ারি আদিলুর ও এলানের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন হয়েছিল।
সেই মামলার রায়ে গত বছরের ১৪ সেপ্টেম্বর দুজনকে দুই বছর করে কারাদণ্ড দেয় ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনাল। একই সঙ্গে তাদের ১০ হাজার টাকা করে জরিমানা, অনাদায়ে আরও এক মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
সাইবার ট্রাইব্যুনালের সেই রায়ের বিরুদ্ধে ওই বছরের ২৫ সেপ্টেম্বর হাইকোর্টে আপিল করেন আদিলুর ও এলান। রায়ের পর কারাগারে থেকে দুজনে সেই আবেদন করেছিলেন। এরপর গত বছরের ১৫ অক্টোবর তারা জামিনে মুক্তি পান।
সেই আপিলের শুনানি শেষে হাইকোর্ট বৃহস্পতিবার এই রায় দেয়।
তাদের আইনজীবী মো. রুহুল আমিন ভূইয়া সাংবাদিকদের বলেন, “আদিলুর রহমান ও নাসির উদ্দিন এলানের আপিল হাইকোর্ট মঞ্জুর করেছেন। নিম্ন আদালতের দেওয়া সাজার রায় বাতিল করেছেন। এ রায়ের ফলে ওই মামলা থেকে তারা খালাস পেলেন।”
অন্যদিকে হাইকোর্টের আরেকটি বেঞ্চ থেকে বৃহস্পতিবারই ‘অধিকার’র নিবন্ধন নবায়নের প্রশ্নে জারি করা রুল যথাযথ ঘোষণা করে রায় এসেছে। এর ফলে অধিকারের কার্যক্রম চালানোর বাধাও কাটল।
বিচারপতি নাইমা হায়দার ও বিচারপতি শশাঙ্ক শেখর সরকারের বেঞ্চে সেই রুলের শুনানিতেও ছিলেন রুহুল আমিন।
তিনি বলেন, “অধিকারের নিবন্ধন নবায়নের জন্য জারি করা রুল যথাযথ ঘোষণা করেছেন। রুলে অধিকারের নিবন্ধন নবায়ন না করার সিদ্ধান্ত কেন আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না, তা জানাতে বলা হয়েছিল।”
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের বিরুদ্ধেও আওয়ামী লীগ শাসনামলে শ্রম আইন লঙ্ঘনের এক মামলায় সাজার রায় হয়েছিল। তবে গত ৮ আগস্ট তিনি শপথ নেওয়ার আগে সেই মামলা থেকে তিনি অব্যাহতি পান।