আগুনে পুড়ে ছাই হয়েছে বেইলি রোডের গ্রিন কোজি কটেজ শপিং মল। আগুনে সব শেষ হওয়ার পর জানা গেছে ভবনটিতে ছিল না অগ্নি সুরক্ষার ব্যবস্থা, ছিল না ফায়ার এক্সিট।
তবে কেবল এই একটি ভবন নয়, আশপাশের কোন ভবনটি পুরোপুরি সুরক্ষিত; সেটি খুঁজতে যাওয়া হবে খড়ের গাদায় সুঁচ খোঁজার মতো বিষয়।
গ্রিন কোজি কটেজের কঙ্কালের পাশেই দাঁড়িয়েছে গোল্ড প্যালেস। ভবনটিতে রয়েছে কেএফসি, ক্যাফে থার্টি থ্রির মতো রেস্তোরাঁ। স্থানীয়ভাবে এ দুটি রেস্তোরাঁর নামেই পরিচিত ভবনটি।
গোল্ড প্যালেসের প্রথম চার তলা বাণিজ্যিক কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে। এর উপরের তলাগুলো আবাসিক। এক্ষেত্রে বাণিজ্যিক অংশে ওঠার সিঁড়ি এবং আবাসিক অংশে ওঠার সিঁড়ি আলাদা।
সেখানে গিয়ে দেখা গেল, বাণিজ্যিক ভবনের জন্য সংরক্ষিত সিঁড়িটিও উন্মুক্ত নয়। সেটি রয়েছে মুভ এন পিক নামে একটি আইসক্রিমের দোকানের ভেতরে। অর্থাৎ, কোনও কারণে যদি আইসক্রিমের দোকানটি বন্ধ থাকে তাহলে ওই সিঁড়ি ব্যবহার করে ওপর থেকে কেউ নিচে বের হতে পারবেন না।
ভবনটির বাণিজ্যিক অংশ ঘুরে কোথাও আগুন নেভানোর ব্যবস্থা চোখে পড়েনি। সকাল সন্ধ্যার সঙ্গে কথা হয় ভবনটির নিরাপত্তাকর্মীদের।
তারা জানালেন, ভবনটিতে কোনও ফায়ার এক্সিট নেই। একমাত্র সিঁড়িটিও একটি দোকানের ভেতরে হওয়ায় মানুষ সেটা ব্যবহার করে না। ওঠানামার জন্য লিফটই ব্যবহার হয়।
বিষয়টি সম্পর্কে জানতে যোগাযোগ করা হয় গোল্ড প্যালেস ভবনের ম্যানেজার সোহরাবের সঙ্গে। তিনি বলছেন, নকশা ও পরিকল্পনা অনুযায়ী সব ঠিক আছে ভবনটিতে। সব ধরনের কাগজপত্রও তাদের কাছে আছে।
বাণিজ্যিক ভবনের জন্য সংরক্ষিত সিঁড়িটিই (মুভ এন পিক আইসক্রিম দোকানের ভেতর) ফায়ার এক্সিট বলে জানালেন তিনি।
ভবনটিতে অগ্নি নির্বাপক যন্ত্রের ঘাটতি বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আমাদের সব আছে। জায়গা মতোই আছে। প্রয়োজন হলেই এগুলো ব্যবহার করা হবে।”
এরপর আর কোনও প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে টেলিফোন সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেন তিনি।
পাশের ভবন বেইলি ফিয়েস্তার অবস্থাও একই।
এই ভবনের একদিকে বাণিজ্যিক অংশে প্রবেশের পথ, আরেকদিকে আবাসিক অংশে প্রবেশের। ভবনটিতে কয়েকটি অগ্নি নির্বাপন কাজে ব্যবহৃত সিলিন্ডার দেখা গেছে। তবে নিরাপত্তারক্ষীরা জানালেন, এসবের ব্যবহার তারা জানেন না।
বেইলি ফিয়েস্তার পাশের ভবনটিতে রীতিমতো খাবারের দোকানের সমাহার। ১০টির বেশি ছোট-বড় খাবারের দোকান ও রেস্টুরেন্ট রয়েছে সেখানে।
চারতলা ভবনটির কোনও নাম নেই। এসব তলায় ওঠা-নামার জন্য রয়েছে কেবল একটি তিন থেকে সাড়ে তিন ফুট চওড়া সিঁড়ি। অর্থাৎ ফায়ার এক্সিট নেই সেখানে।
ভবনে আগুন লাগলে মানুষ কোন পথ দিয়ে নামবে জানতে চাইলে দায়িত্বরত নিরাপত্তাকর্মী বলেন, “এসব আমি কীভাবে বলব। আমি তো জানি না। মালিকরা বলতে পারবেন।”
স্থানীয়রা বলছেন, বেইলি রোডের বেশিরভাগ বহুতল ভবনেই ফায়ার এক্সিটের কোনও ব্যবস্থা নেই। ওঠানামা আর জরুরি নির্গমনের জন্য সব ভবনেরই রয়েছে কেবল একটি মাত্র সিঁড়ি।
সাংবাদিক পরিচয় জেনে কথা বলতে এগিয়ে আসেন স্থানীয়দের অনেকে। তাদের দাবি, শুরুতে ভবনের নকশায় ফায়ার এক্সিট দেখানো হয়। কিন্তু পরে দেখা যায় সেই অংশও কোনও না কোনও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে ভাড়া দেওয়া হয়েছে।
বহু বছর ধরে সিদ্ধেশ্বরী এলাকায় থাকেন ক্ষিরোদ রায়। তিনি এসেছিলেন গ্রিন কোজি কটেজের পরিস্থিতি দেখতে।
সকাল সন্ধ্যাকে তিনি বলেন, “এগুলো তো সব আবাসিক ভবন ছিল। ধীরে ধীরে সব ভবনেই রেস্টুরেন্ট হলো। আমিও বেশ কয়েকবার এসব জায়গায় এসেছি। এগুলোর লিফট ছোট। লিফটগুলো দেখলেই বোঝা যায় কোনোভাবে এই জায়গায় বসানো হয়েছে। সিঁড়ি থাকলেও সেখানে বেশি মানুষ একসঙ্গে ওঠানামা করতে পারে না।”
সকাল সন্ধ্যার সঙ্গে কথা হয় সাবেক কাউন্সিলর কামরুজ্জামান কাজলের।
তিনি বলেন, “আবাসিক ভবনগুলোকে বাণিজ্যিক ভবণে পরিণত করা ঠিক হয়নি। ভবন মালিকদের এদিকে নজর দেওয়া দরকার ছিল।”
এ ধরনের ভবনের অনুমতি পাওয়া প্রসঙ্গে কিছুটা হতাশার সুরেই তিনি বললেন, “বাংলাদেশে অর্থ দিলে সব হয়। আপনি অর্থ দেবেন না, আপনার কাজ ছয় মাসেও হবে না। অর্থ দেবেন, নগদে কাজ হবে। মানুষের অতিরিক্ত লোভের কারণেই এই দুর্ঘটনা।”
যথাযথ তদন্তের মাধ্যমে এসব ঘটনার বিচার হওয়ার উচিত বলেও মনে করেন সাবেক এই জনপ্রতিনিধি।