চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিতে প্রশাসক নিয়োগ দিয়েছে সরকার। চট্টগ্রামের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (সার্বিক) মুহাম্মদ আনোয়ার পাশা এই দায়িত্ব পেয়েছেন।
সোমবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বাণিজ্য সংগঠন বিভাগের মহাপরিচালক ড. নাজনীন কাউসার চৌধুরীর সই করা আদেশে এই নিয়োগের কথা জানানো হয়।
নিয়ম অনুযায়ী, দায়িত্ব নেওয়ার ১২০ দিনের মধ্যে প্রশাসক একটি সুষ্ঠু ও নিরপক্ষে নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচিত কমিটির কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর করবেন। অর্থাৎ ২০২৫ সালের জানুয়ারির মধ্যেই তাকে নির্বাচন সম্পন্ন করতে হবে।
তীব্র ছাত্র-গণআন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট পদত্যাগ করে দেশ ছাড়েন শেখ হাসিনা। রাজনৈতিক এই পট পরিবর্তনের পর দেশের নানা পর্যায়ে আসে পরিবর্তন। চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীদের প্রতিবাদ-বিক্ষোভের মুখে গত ৩ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রাম চেম্বারের ২৪ পরিচালক এবং নির্বাহী কমিটির সদস্যরা পদত্যাগ করেন।
এরপর নতুন প্রশাসক নিয়োগের লিখিত আবেদন জানানো হয় চট্টগ্রাম চেম্বার থেকেই। আবেদনের ছয় দিন পর প্রশাসক নিয়োগের সিদ্ধান্ত এল সরকারের তরফ থেকে।
চট্টগ্রাম চেম্বারের নতুন এই প্রশাসককে এক সঙ্গে তিনটি পদে দায়িত্ব পালন করতে হবে। তার মূল দায়িত্ব চট্টগ্রামের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (সার্বিক)। এর বাইরে জেলা পরিষদ প্রশাসকের নিয়োগ বাতিল করায় সেই শুন্যপদে তিনি দায়িত্ব পালন করছেন। এখন চট্টগ্রাম চেম্বারে প্রশাসক হিসেবেও তিনি দায়িত্ব পালন করবেন।
সব কাজ সামলে ১২০ দিনের মধ্যে নির্বাচন করা চ্যালেঞ্জের কিনা, জানতে চাইলে মুহাম্মদ আনোয়ার পাশা সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “ধরতে পারেন আজ থেকেই আমার যোগদান এবং কাউন্টডাউন শুরু। তাই এই কাজকে আমি চ্যালেঞ্জ মনে করছি না। ১২০ দিনের মধ্যে নির্বাচন করতে সরকার আমাকে দায়িত্ব দিয়েছে, না পারলে সেটি সরকারই দেখবে।”
চট্টগ্রাম চেম্বারে পূর্ণকালীন নয় বরং বাড়তি দায়িত্ব হিসেবে প্রশাসকের কাজ করবেন বলেও জানান তিনি। বলেন, “নিয়মিত কাজের পর বাড়তি হিসেবে এই দায়িত্ব পালন করতে হবে আমাকে।”
তবে চেম্বারের ব্যবসায়ীরা বলছেন, পরিপূর্ণভাবে সময় না দিলে ১২০ দিনের মধ্যে চট্টগ্রাম চেম্বারে একটি ভালো নির্বাচন করা সম্ভব নয়। ক্রটিপূর্ণ ভোটার তালিকা রেখে নির্বাচন করলে সঠিক নেতৃত্ব নির্বাচিত হয়ে আসার সুযোগ কম। কারণ নতুন প্রশাসককে ভোটার তালিকা সংশোধন, বিদ্যমান ভোটার তালিকা থেকে ভুয়া ভোটার বাতিল করা, নতুন ভোটার তালিকায় অন্তর্ভূক্তসহ বিভিন্ন জটিল কাজ করতে হবে।
আন্দোলন-বিক্ষোভের কারণে অফিস করতে পারছেন না চেম্বার সচিব প্রকৌশলী ফারুকও। এ অবস্থায় চেম্বারের দৈনন্দিন কাজে তৈরি হয়েছে এক ধরনের অচলাবস্থা। ফলে নির্বাচনের কাজ গোছানো নিয়েও তৈরি হয়েছে সংশয়। কারণ নির্বাচন সংক্রান্ত কাজ এবং সমন্বয়ের কাজটি করেন মূলত চেম্বার সচিব।
চট্টগ্রাম চেম্বারকে পরিবারতন্ত্র এবং স্বৈরতন্ত্রমুক্ত করতে আন্দোলনকারী ব্যবসায়ীদের একজন হাবিবুর রহমান। গাড়ি ব্যবসায়ীদের সংগঠন বারভিডার সাবেক এই সেক্রেটারি জেনারেল সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “একটি ভালো উৎসবমুখর পরিবেশে নির্বাচনের জন্য আমরা যারা আন্দোলনে ছিলাম তারা সবাই নতুন প্রশাসককে সহযোগিতা দিতে আগ্রহী।”
১২০ দিনের মধ্যে নির্বাচন আয়োজন কিছুটা চ্যালেঞ্জিং হবে উল্লেখ করে হাবিবুর রহমান বলেন, “অনেক বছর ধরেই চট্টগ্রাম চেম্বারে ভোট হয় না; ফলে সদস্যরা ভোটার হতে একেবারে বিমুখ ছিলেন। এখন তাদেরকে ভোটার তালিকায় আনতে গেলে ১২০ দিনের সময় দেওয়ার নিয়ম আছে। কিন্তু আমাদের নির্বাচন করতে হবে আবার ১২০ দিনের মধ্যে। ফলে নির্বাচন কমিশন বা প্রশাসক চাইলে নতুন ভোটারদের তালিকায় আনতে কিছুটা সময় বাড়াতে পারেন; বাণিজ্য সংগঠন আইনে সেটি বলা আছে। প্রশাসক দায়িত্ব নেওয়ার পর আমরা আলোচনা করেই সেগুলো জানাবো।”
চট্টগ্রাম চেম্বারে বর্তমানে ভোটার সংখ্যা সাত হাজারের বেশি। কিন্তু তৃণমুল ব্যবসায়ীদের ভোটার করা হলে এই সংখ্যা দ্বিগুণ হবে।
নিয়ম অনুযায়ী, চট্টগ্রাম চেম্বারে অর্ডিনারি, অ্যাসোসিয়েটস, টাউন এবং ট্রেড গ্রুপ-এই চার শ্রেণিতে ২৪ পরিচালক নির্বাচিত হন। আর তাদের ভোটেই নির্বাচিত হন সভাপতি, সিনিয়র সহ-সভাপিত এবং সহ-সভাপতি।
এই চারটি শ্রেণিতেই প্রচুর ভুয়া ভোটার আছেন বলে দীর্ঘদিন ধরেই অভিযোগ করে আসছেন অনেক ব্যবসায়ী নেতা।
চট্টগ্রাম চেম্বারের সাবেক সিনিয়র সহ-সভাপতি এস এম নুরুল হক বলেন, “বিদ্যমান ভোটারদের জমা দেওয়া টিআইএনরে সঠিকতা যাচাই করলেই অনেক ভুয়া ভোটার বেরিয়ে আসবে। ফলে সাত হাজার ভোটারের তথ্য যাচাইয়ের সেই কাজটি নিষ্ঠার সঙ্গে সময় নিয়েই করতে হবে। তাহলেই একটি নির্ভুল ভোটার তালিকা করা সম্ভব। আর এর মাধ্যমেই একটি ভালো গ্রহনযোগ্য নির্বাচন সম্ভব।”
চট্টগ্রাম চেম্বারের ইতিহাস ১১৮ বছরের। ঐতিহ্যবাহী এই সংগঠনে ২০০৮ সালে প্রথম মেয়াদে এম এ লতিফ চট্টগ্রাম চেম্বারের সভাপতি হন। এরপর দ্বিতীয় মেয়াদেও ২০১২ সাল পর্যন্ত তিনি সভাপতি ছিলেন। এরপর ২০১৩ সাল থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত টানা পাঁচবার মাহবুবুল আলম সভাপতি ছিলেন।
২০২৪ সালে এফবিসিসিআই সভাপতি নির্বাচিত হলে চট্টগ্রাম চেম্বার ছেড়ে দেন মাহবুবুল আলম। সেই থেকে এই দুই নেতার বলয়ের বাইরের কারও পরিচালক পদে নির্বাচিত হওয়ার সুযোগ ছিল না।