Beta
শনিবার, ১৫ মার্চ, ২০২৫
Beta
শনিবার, ১৫ মার্চ, ২০২৫

দশ মাসে এডিপি বাস্তবায়ন কমে ৪৯.২৬ শতাংশ

কৃষি মন্ত্রণালয় চলতি অর্থবছরে প্রায় অর্ধেক এডিপি বাস্তবায়ন করেছে।
কৃষি মন্ত্রণালয় চলতি অর্থবছরে প্রায় অর্ধেক এডিপি বাস্তবায়ন করেছে।
[publishpress_authors_box]

অর্থ সংকট ও বাস্তবায়নের ধীরগতির কারণে মূল বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) কাটছাঁট করা হলেও সেই সংশোধিত এডিপি সম্পন্নে তেমন এগোতে পারেনি সরকার।

এবার দশ মাসে মোট বরাদ্দের ৪৯ দশমিক ২৬ শতাংশ বাস্তবায়ন হয়েছে, যা আগের অর্থবছরের একই সময় হয় ৫০ দশমিক ৩৩ শতাংশ।

ফলে এডিপি পুরো বাস্তবায়ন করতে গেলে বাকি দুই মাসে সোয়া লাখ টাকার মতো খরচ করতে হবে, বাস্তবে যা অসম্ভব বলে মনে করা হচ্ছে।    

চলতি অর্থবছরে (২০২৩-২৪) সরকারের বিভিন্ন সংস্থার বরাদ্দসহ সব মিলিয়ে মূল এডিপির আকার ছিল ২ লাখ ৭৪ হাজার ৬৭৪ কোটি ২ লাখ টাকা।

গত ১২ মার্চ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) সভায় ওই এডিপি থেকে ২০ হাজার কোটি টাকার বেশি কমিয়ে ২ লাখ ৫৪ হাজার ৩৯১ কোটি ৬৪ লাখ টাকায় নামিয়ে আনা হয়।

অর্থবছরের দশ মাসে (জুলাই-এপ্রিল) সংশোধিত এই এডিপির (আরএডিপি) ১ লাখ ২৫ হাজার ৩১৫ কোটি ৬৮ লাখ টাকা খরচ করেছে সরকার। বাস্তবায়নের হার ৪৯ দশমিক ২৬ শতাংশ।

হিসাব বলছে, সংশোধিত এডিপির পুরোটা খরচ করতে হলে অর্থবছরের বাকি দুই মাসে (মে-জুন) ১ লাখ ২৯ হাজার ৭৬ কোটি টাকা ব্যয় করতে হবে।

দেশের বর্তমান সংকটের সময় যেটা ‘অসম্ভব’ বলে মন্তব্য করেছেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ ও পরিকল্পনা উপদেষ্টা এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম।

সকাল সন্ধ্যাকে তিনি বলেন, “দুই বছরের কোভিড মহামারীর ধাক্কা কাটতে না কাটতেই সোয়া দুই বছর ধরে চলা রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে আমাদের অর্থনীতি ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। রাজস্ব আদায়ে বড় ঘাটতি রয়েছে। সরকার কৃচ্ছ্রসাধনের পথ বেছে নিয়েছে। এ অবস্থায় দুই মাসে এক লাখ ২৯ হাজার কোটি টাকা খরচ করা খুবই কঠিন।  

“আর যদি তড়িঘড়ি করে এই টাকা ব্যয় করা হয়, প্রকল্পের কাজের মান ভালো হবে না। এ পরিস্থিতিতে দেশের বাস্তব অবস্থা বিবেচনায় নিয়ে প্রকল্প বাস্তবায়নে অর্থ খরচ করতে হবে। সেক্ষেত্রে এবার যদি বছর শেষে এডিপি বাস্তবায়নের হার অন্যান্য বছরের চেয়ে কমও হয়, তাতেও সমস্যা নেই।”

তিনি বলেন, “আমরা সবাই জানি, সরকার সংকটের মধ্যে আছে। এ অবস্থায় এবার এডিপি বাস্তবায়নের হার কম হলেও সমস্যা নেই। প্রতিবারের মতো ৮৫-৯০ শতাংশ বাস্তবায়ন হতে হবে—এটার কোনও কথা নেই। এবার বছর শেষে যদি সার্বিক বাস্তবায়ন ৬৫-৭০ শতাংশও হয় তাতেই যথেষ্ট বলে আমি মনে করি।”

১০ মাসে ৪৯.২৬ শতাংশ বাস্তবায়ন

পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি) সোমবার এডিপি বাস্তবায়নের যে হালনাগাদ তথ্য প্রকাশ করেছে, তাতে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের (২০২৩–২৪) প্রথম দশ মাসে অর্থাৎ জুলাই-এপ্রিল সময়ে সংশোধিত এডিপির ১ লাখ ২৫ হাজার ৩১৫ কোটি ৬৮ লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে, যা মোট বরাদ্দের ৪৯ দশমিক ২৬ শতাংশ।

গত অর্থবছরের (২০২২–২৩) এই দশ মাসে খরচ হয়েছিল ১ লাখ ১৯ হাজার ৬৪ কোটি ৩৯ লাখ টাকা। শতাংশ হিসাবে যা ছিল ওই বছরের আরএডিপির ৫০ দশমিক ৩৩ শতাংশ।

এর আগের তিন বছরে (২০২১-২২, ২০২০-২১ ও ২০১৯-২০) বাস্তবায়নের হার ছিল যথাক্রমে ৫৪ দশমিক ৫৭, ৪৯ দশমিক শূন্য ৯ ও ৪৯ দশমিক ১৩ শতাংশ।

সবশেষ চলতি অর্থবছরের এপ্রিল মাসে সংশোধিত এডিপির ১৭ হাজার ৭০৩ কোটি ২৪ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। শতাংশ হিসাবে যা ৬ দশমিক ৯৬ শতাংশ।

গত বছরের এপ্রিলে ব্যয় হয়েছিল ২০ হাজার ৫৪৩ কোটি ৩৫ লাখ টাকা। শতাংশ হিসাবে ওই বাস্তবায়নের হার ছিল ৮ দশমিক ৬৮ শতাংশ।

প্রতি বছরই সরকারের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি তথা এডিপিতে বরাদ্দ বাড়ে। সেই অনুযায়ী খরচও বাড়ে।

সেই ধারাবাহিকতায় চলতি অর্থবছরে সরকারের বিভিন্ন সংস্থার বরাদ্দসহ সব মিলিয়ে এডিপির মোট আকার ধরা হয়েছিল ২ লাখ ৭৪ হাজার ৬৭৪ কোটি ২ লাখ টাকা। এর মধ্যে মূল এডিপির আকার ছিল ২ লাখ ৬৩ হাজার কোটি টাকা।

বাকি অর্থ সরকারের বিভিন্ন সংস্থার নিজস্ব অর্থ থেকে জোগান দেওয়া হবে বলে লক্ষ্য ধরা হয়েছিল।

সবচেয়ে বেশি খরচ করেছে বিদ্যুৎ বিভাগ

আইএমইডির প্রতিবেদন অনুযায়ী, সর্বোচ্চ বরাদ্দ প্রাপ্ত ১৫ মন্ত্রণালয় ও বিভাগে গড় বাস্তবায়ন হয়েছে ৫৩ দশমিক ২৭ শতাংশ। জুলাই-এপ্রিল সময়ে এই ১৫ মন্ত্রণালয় ও বিভাগ সব মিলিয়ে এক লাখ ৪ হাজার ৫৯৯ কোটি খরচ করেছে।

সংশোধিত এডিপির ৭৭ দশমিক ১৯ শতাংশই বরাদ্দ আছে এসব মন্ত্রণালয় ও বিভাগের।

এর মধ্যে শতাংশ হিসাবে সবচেয়ে বেশি, ৬৮ দশমিক ২৯ শতাংশ বাস্তবায়ন করেছে বিদ্যুৎ বিভাগ। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৬০ দশমিক ১৪ শতাংশ খরচ করেছে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়। তৃতীয় সর্বোচ্চ ৫৯ দশমিক ৭৮ শতাংশ ব্যয় করেছে রেলপথ মন্ত্রণালয়।

এছাড়া ৫৮ দশমিক ৮১ শতাংশ বাস্তবায়ন করেছে কৃষি মন্ত্রণালয়। ৫৫ দশমিক ৩২ শতাংশ খরচ করেছে স্থানীয় সরকার বিভাগ। বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় ব্যয় করেছে ৫৪ দশমিক ৪৯ শতাংশ।।

সেতু বিভাগ বাস্তবায়ন করেছে ৪৭ দশমিক ৩৩ শতাংশ। পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় খরচ করেছে ৪৭ দশমিক শূন্য ২ শতাংশ; গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় ৪৫ দশমিক ৪৯ শতাংশ, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় ৫৩ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ ৪৬ দশমিক ৫৪ শতাংশ, স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ ৩৭ দশমিক ১৩ শতাংশ, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ ৪৯ দশমিক ২৫ শতাংশ, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় ৩৩ দশমিক ৫৮ শতাংশ এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের খরচ হয়েছে ৩৪ দশমিক ৪২ শতাংশ।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত