Beta
রবিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৫
Beta
রবিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৫

স্মার্ট ছেড়ে কেন বাটন ফোনে ফিরছে ঝোঁক

Dumb_Phone
[publishpress_authors_box]

ফিরে আসছে পুরনো বাটন বা ফিচার মোবাইল ফোন। তবে এটা নতুন কোনও ফ্যাশন নয়, বরং প্রয়োজনের তাগিদে এসব ফোনে ঝুঁকছে মানুষ।

ক্রমবর্ধমান এই প্রবণতা নিয়ে সম্প্রতি একটি বিশদ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে বিবিসি। সেখানে বলা হয়, স্মার্টফোনে বেশি সময় অপচয় হওয়া নিয়ে উদ্বিগ্ন অনেকে। তারা ফের ‘ডাম্বফোন’ বা পুরনো বাটন মোবাইলে ফোনে ঝুঁকছেন। এদের মধ্যে তরুণ ও প্রাপ্তবয়স্কদের সংখ্যাই বেশি।

একজন ব্যবহারকারী প্রতিদিন কতটা সময় স্মার্টফোন ব্যবহার করেন, তা তার ফোনের সেটিংসেই রেকর্ড থাকে। এ থেকে বোঝা যায়, মাস ও বছরে ওই ব্যক্তির জীবনের কতটা সময় স্মার্টফোনের পর্দায় কাটে।

এই রেকর্ড এক ধরনের অস্বস্তিতে ফেলছে ব্যবহারকারীদের। যে প্রযুক্তি মানুষের জীবনের একটি দরকারি ও উপকারী অংশ হতে পারত, সেটি এখন নেশায় পরিণত হয়েছে।

কানাডার তরুণ লুক মার্টিন বিবিসিকে বলেন, “সোশাল মিডিয়া আসক্তি তৈরি হয় মূলত কোনও কিছু মিস করার ভয় থেকে। আর আপডেট থাকার তাগিদে। তাই আমার মনে হয়েছিল, আমি এটা থেকে বেরিয়ে আসতে পারব না। এরপর ইনস্টাগ্রাম পাওয়ায় আমার অবস্থার আরও অবনতি ঘটে।”

তবে ১৬ বছর বয়সী লুক একা নন, বহু মানুষ আছেন যারা এমন আসক্ত।

হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটির এক গবেষণা বলছে, কোনও নেশাজাতীয় দ্রব সেবনে মানুষের মস্তিষ্কের যে অংশ উদ্দীপিত হয়, সোশাল নেটওয়ার্কিং সাইটগুলো ব্যবহারেও সেই অংশ উদ্দীপিত হয়। বিষয়টি তরুণদের মধ্যে স্মার্টফোনের অভ্যাস নিয়ে উদ্বেগ বাড়িয়েছে।

যুক্তরাজ্যের রেগুলেটরি অফিস অফকমের গবেষণায় বলা হয়, যুক্তরাজ্যের পাঁচ থেকে সাত বছর বয়সী শিশুদের এক-চতুর্থাংশের বেশির হাতে এখন স্মার্টফোন রয়েছে।

কিছু গবেষণায় মানসিক স্বাস্থ্যের উপর সোশাল মিডিয়া ব্যবহারের নেতিবাচক প্রভাবের প্রমাণ মিলেছে। বিশেষ করে শিশুদের মানসিক স্বাস্থ্যের উপর এর নেতিবাচক প্রভাব অনেক।

অনেকে স্মার্টফোন ব্যবহারে বয়সসীমা চালুর পরামর্শ দিয়েছেন। লুকের মতো অনেকে আবার স্মার্টফোন ছেড়ে বাটন ফোন ব্যবহারের দিকে ঝুঁকেছেন।

লুকের নতুন ফোনে শুধু টেক্সট, কল, ম্যাপসহ কিছু সীমিত টুলস রয়েছে।

লুক বলেন, “আমার বন্ধুরা দিনে প্রায় চার থেকে পাঁচ ঘণ্টার মতো স্মার্টফোন ব্যবহার করে। আমিও বাটন ফোন কেনার আগে স্মার্টফোনে একই রকম সময় অপচয় করতাম।

“এখন আমার প্রতিদিন মাত্র ২০ মিনিটের মতো সময় অপচয় হয়। কারণ, আমি এটি এখন শুধু আমার যা প্রয়োজন সেজন্য ব্যবহার করি।”

বাবা-মায়েরাও সন্তানদের পাশাপাশি পরিবারকে আরও বেশি সময় দিতে ডাম্বফোনে ঝুঁকছেন।

পাঁচ বছর বয়সী এক সন্তানের মা লিজি ব্রাউটোন। তিনি সম্প্রতি একটি সাবেকি নোকিয়া ‘ফ্লিপ’ ফোন কিনেছেন।

তিনি বলেন, “এটি আমাকে আমার নিজের ভালো অভ্যাসগুলো ফেরাতে সাহায্য করেছে। সন্তানের সঙ্গে আমি এখন আরও বেশি সময় কাটাতে পারছি।”

লিজি জানান, তার সন্তানেরও যখন নিজের ফোন পাওয়ার সময় হবে, তখন তাকেও তিনি তার মতোই ডাম্ব ফোন কিনে দেবেন।

তিনি বলেন, “বাচ্চাদের স্মার্টফোন দিয়ে শুরু করা ভালো না। এটা অনেকটা এমন যে, আমরা একটি শিশুর হাতে পুরো বিশ্বকে তুলে দিয়ে বলছি, কীভাবে তা পাড়ি দেওয়া যায় বের করার চেষ্টা কর।”

সম্প্রতি উত্তর আমেরিকায় ডাম্বফোনের বিক্রি বেড়েছে। লস অ্যাঞ্জেলসের ডাম্বওয়্যারলেস এলাকার দোকানদার ডেইজি ক্রিগবাউম ও উইল স্টাল্টস নিম্নতর প্রযুক্তির ডিভাইস খুঁজছেন এমন গ্রাহকদের চাহিদা পূরণ করেন।

উইল স্টাল্টস বলেন, “আমাদের অনেক অভিভাবক তাদের বাচ্চাকে প্রথমে সেই পুরোনো দিনের ফোনটিই দিতে চাইছেন। তারা চান না যে সন্তানরা প্রথমেই ইন্টারনেট ব্যবহার করুক।”

তবে স্মার্টফোন ছেড়ে দেওয়া অত সহজ নয়। স্টাল্টস বলেন, কিছু স্কুলে শিক্ষার্থীদের জন্য নির্দিষ্ট কিছু অ্যাপ ব্যবহার বাধ্যতামূলক থাকে। তাই না চাইলেও বাচ্চাদের স্মার্টফোন ব্যবহার করতে দিতে হয়।

ব্রাউটন বলেন, “এছাড়া শিশুরা যখন তাদের বন্ধুদের হাতে দামি স্মার্টফোন দেখে, তখন তাদের নিয়ন্ত্রণে রাখা কঠিন। আসলে এর জন্য সব বাচ্চাদের বাবা-মায়েদের একত্রে কাজ করতে হবে।”

বিকল্প সমাধান হতে পারে ‘আনপ্লাক’ নামক একটি ডিভাইস। এটি দিয়ে রিমোট কন্ট্রোলের মতোই দূর থেকে স্মার্টফোনে সোশাল মিডিয়াসহ কিছু অ্যাপ ব্লক করা যায়।

স্টাল্টস বলেন, “অভিভাবকরা ডিভাইসটি দিয়ে বাচ্চাদের স্মার্টফোন নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন। তাদের ফোন ব্যবহারের ওপর নজরও রাখতে পারেন।”

যারা অবিরাম স্ক্রলিংয়ের আসক্তি এড়াতে চান, তাদের জন্য বেশ কয়েকটি মডেলের ফোন তৈরি করা হয়েছে।

ক্রিস ক্যাসপার মসৃণ এবং দেখতে অনেকটা আইফোনের মতো ডিভাইস তৈরি করতে টেকলেস নামের একটি কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। কোম্পানিটির ওই ডিভাইসের সর্বশেষ সংস্করণটির নাম রাখা হয়েছে ‘ওয়াইজফোন টু”।

তিনি বলেন, “এটির কোনও আইকন নেই। শুধু শব্দ, দুটি রঙ ও দুটি ফন্ট।” তিনি এটিকে “খুব শান্তিপূর্ণ, খুব শান্ত” হিসেবে বর্ণনা করেছেন।

এতে কিছু সীমিত সংখ্যক থার্ড-পার্টি অ্যাপ থাকবে, যেমন উবার। তবে কোনও সোশাল মিডিয়া অ্যাপ থাকবে না।

ক্যাসপার প্রথমে তার সন্তানদের কথা মাথায় রেখে ফোনটি তৈরি করেন। তাদের বিক্রির ২৫ শতাংশ হয় শিশুদের জন্য। তবে ফোনটি পরে প্রাপ্তবয়স্কদের জন্যও তৈরি করা হয়।

তিনি বলেন, “বাচ্চাদের ফোন ব্যবহার করতে কারো হয়তো লজ্জা লাগতে পারে। তাই আমরা প্রাপ্তবয়স্কদের জন্যও আলাদাভাবে অত্যাধুনিক, আইফোনের মতো করে চমৎকার ডিভাইস তৈরি করেছি।”

অ্যাপস ও সোশাল মিডিয়া বিজ্ঞাপন থেকে বিলিয়ন ডলার আয় হওয়ায় বড় কোম্পানিগুলো স্মার্টফোনের ব্যবহার বন্ধের বদলে উৎসাহিত করে। বিকল্প কোনও অভ্যাসও গড়ে উঠতে দিতে চায় না।

তবে কানাডিয়ান কিশোর লুক বলছেন, তার বন্ধুরা তাকে সেকেলে বলে হাসাহাসি করলেও তিনি পুরনো বাটন ফোনই ব্যবহার করবেন। স্মার্টফোন আর ব্যবহার করবেন না।

লুক বলেন, “বন্ধুরা মনে করে ব্যাপারটা বেশ অদ্ভুত। কিন্তু এই মুহূর্তে আমি মনে করি, তারা কী ভাবল সেটা গুরুত্বপূর্ণ নয়। কারণ, এটি আমাকে আমার আসক্তি কাটাতে অনেক সাহায্য করেছে। এটি আমাকে ভালো রাখছে।”

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত