জনদুর্ভোগ তৈরি না করে শিক্ষার্থীদের নিজ নিজ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ফিরে যেতে আহ্বান জানিয়েছেন শিক্ষা ও পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ।
ঢাকার সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি শিক্ষাসংশ্লিষ্ট আন্দোলনে পথে নামা শিক্ষার্থীদের প্রতি এ আহ্বান জানান তিনি।
বুধবার পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ তথ্য কর্মকর্তা মাহমুদুল হাসানের সই করা এক বিবৃতিতে উপদেষ্টা আরও বলেন, “অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর থেকেই বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্ররা এবং বিভিন্ন শিক্ষক সংগঠন নানা দাবি নিয়ে আন্দোলন করে যাচ্ছেন। একটি সম্পূর্ণ বিশৃঙ্খল অবস্থায় পাওয়া শিক্ষাখাতে শৃঙ্খলা ও স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনার জন্য সরকার যথাসাধ্য চেষ্টা করছে।
“এ সব দাবী-দাওয়ার মধ্যে ন্যায্য-অন্যায্য এবং কিছুক্ষেত্রে পরস্পরবিরোধী দাবি রয়েছে। একটি বৈষম্যবিরোধী দাবি মানলে অন্যান্য ক্ষেত্রে বৈষম্য তৈরি হতে পারে।”
স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবিতে গত দুদিন ধরে ঢাকার সায়েন্স ল্যাব মোড় অবরোধ করে আন্দোলন করছেন সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা। এই অবরোধের ফলে ধানমণ্ডি, নীলক্ষেত, শাহবাগসহ আশপাশের এলাকায় সৃষ্টি হয় তীব্র যানজট।
অবরোধে শনিবার পর্যন্ত বিরতি দিয়ে দাবি আদায় না হলে গণঅনশনের মতো কঠোর কর্মসূচির ঘোষণা দিয়ে বুধবার সড়ক ছাড়েন শিক্ষার্থীরা।
তাদের এ আন্দোলনের মধ্যেই শিক্ষা উপদেষ্টার বিবৃতি এল।
শিক্ষাখাতের যেকোনো গুরুত্বপূর্ণ সংস্কারের দাবি পূরণের সুদূর প্রসারী প্রভাব থাকে এবং এর জন্য তাৎক্ষণিক সমাধান দেওয়া কঠিন উল্লেখ করে বিবৃতিতে শিক্ষা উপদেষ্টা বলেন, “অথচ সব কয়টি দাবির পেছনের আন্দোলনকারীরা তাদের দাবিকেই সবচেয়ে অগ্রাধিকার হিসেবে দেখছেন এবং দাবিগুলোকে শুধু রাস্তায় আন্দোলন করে তাৎক্ষণিক সমাধানযোগ্য মনে করছেন। এতে একদিকে যেমন রাস্তা অবরোধের ফলে অপরিসীম জনদুর্ভোগ হচ্ছে; সরকারও দাবিগুলো যথাযথ বিবেচনার সুযোগ পাচ্ছে না।”
বিবৃতিতে সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যেও কথা বলেন ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ।
তিনি বলেন, “ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের দাবি বিবেচনার জন্য সরকার এরই মধ্যে সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের নিয়ে একটি কমিটি গঠন করেছে যা সাত সপ্তাহের মধ্যে দ্রুত একটি প্রতিবেদন তৈরি করবে।
“সমস্যাটির শুরু হয়েছে কয়েক বছর আগে ঢাকার সাতটি কলেজকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের আওতা থেকে বের করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অন্তর্ভুক্ত করার একটি অবিবেচনাপ্রসূত সিদ্ধান্তের মাধ্যমে। এর ফলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং সাত কলেজের উভয় পক্ষেরই সমস্যা তৈরি হয়েছে। যে কারণে ঐ সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের নানা অসুবিধা ও বৈষম্যের শিকার হতে হয়েছে।”
এ সংক্রান্ত সমস্যাগুলো জটিল, তাই এগুলোর সুষ্ঠু সমাধান কী হতে পারে তা বিবেচনায় ন্যূনতম কিছু সময়ের প্রয়োজন বলে মনে করেন উপদেষ্টা।
তিনি আরও বলেন, “এরই মধ্যে একটি কলেজের শিক্ষার্থীরা নিজেদের প্রতিষ্ঠানকে এককভাবে বিশ্ববিদ্যালয় করার দাবি নিয়ে রাস্তায় আন্দোলন করেছেন। এরই মধ্যে শিক্ষার্থী প্রতিনিধিদের সঙ্গে একাধিকবার আলোচনাও হয়েছে।
“দেশের সমস্যাসঙ্কুল শিক্ষাব্যবস্থায় শিক্ষার্থীদের ন্যায্য দাবির প্রতি একজন আজীবন শিক্ষক হিসাবে অবশ্যই ব্যক্তিগতভাবে আমার সকল সহানুভূতি আছে। কিন্তু মনে রাখতে হবে রাস্তায় শিক্ষার্থীদের অবরোধ, আন্দোলন ও আলটিমেটামের মাধ্যমে একটি নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ে গঠনের তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত দেওয়ার কোনও নজীর কোথাও নেই।”
এ অবস্থায় শিক্ষার্থীদের রাস্তায় জনদুর্ভোগ তৈরি না করে ধৈর্য ধরার ও নিজ নিজ শিক্ষাঙ্গনে ফিরে যাওয়ার অনুরোধ জানান উপদেষ্টা।