Beta
সোমবার, ২ ডিসেম্বর, ২০২৪
Beta
সোমবার, ২ ডিসেম্বর, ২০২৪

পিসিটিতে বিদেশি বিনিয়োগের পক্ষে নৌ উপদেষ্টা

মঙ্গলবার চট্টগ্রাম বন্দরের এনসিটি পরিদর্শন শেষে গণমাধ্যকর্মীদের সঙ্গে কথা বলেন নৌপরিবহন উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন।
মঙ্গলবার চট্টগ্রাম বন্দরের এনসিটি পরিদর্শন শেষে গণমাধ্যকর্মীদের সঙ্গে কথা বলেন নৌপরিবহন উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন।
[publishpress_authors_box]

বিদেশি অপারেটর প্রতিষ্ঠান দিয়ে চট্টগ্রামের পতেঙ্গা কন্টেইনার টার্মিনাল (পিসিটি) পরিচালনার পক্ষে নৌপরিবহন উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন।

মঙ্গলবার চট্টগ্রাম বন্দরে ঢুকে বন্দরের নিউ মুরিং কন্টেইনার টার্মিনাল (এনসিটি) পরিদর্শন শেষে গণমাধ্যকর্মীদের প্রশ্নের জবাবে এ অবস্থানের কথা জানান তিনি।

এসময় কারও না কারও স্বার্থে বিদেশি বিনিয়োগ প্রশ্নবিদ্ধ হলে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা আর আসবে না বলে মন্তব্য করেন তিনি।

অন্তর্বর্তী সরকারের নৌপরিবহন এবং বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর এই প্রথম চট্টগ্রাম আসেন সাবেক সেনা কর্মকর্তা সাখাওয়াত হোসেন। চট্টগ্রামে নিজ মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন দপ্তর পরিদর্শন করেন তিনি।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সাখাওয়াত হোসেন বলেন, “জাতীয় স্বার্থ ছাড়া আমরা কোনও বিদেশি বিনিয়োগ নিচ্ছি না। পিসিটি বিদেশি অপারেটরের হাতে দেওয়া হলেও বন্দর রাজস্ব আয় করছে।

“কন্টেইনার প্রতি ১৮ ডলার আয় হচ্ছে বন্দরে, যেটা বন্দরের প্রত্যাশার চেয়ে বেশি। এখন কারও না কারও স্বার্থে এসব বিদেশি বিনিয়োগ প্রশ্নবিদ্ধ করলে বাইরের কেউ (বিনিয়োগকারী) আসবে না।”

এসময় গণমাধ্যমকর্মীদের প্রশ্নের জবাবে বন্দর চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এস এম মনিরুজ্জামান বলেন, “এই টার্মিনালে আড়াই হাজার কোটি টাকা বন্দর বিনিয়োগ করেনি। বিনিয়োগ করেছে এক হাজার ৩০০ কোটি টাকা। এই বিনিয়োগ করে টার্মিনাল থেকে বন্দরের ২২ বছরে সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকা আয় হবে।”

বন্দরের মূল টার্মিনাল এনসিটি এখন পরিচালনা করছে দেশীয় প্রতিষ্ঠান সাইফ পাওয়ারটেক লিমিটেড।

বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বিদেশি অপারেটর দিয়ে এনসিটি পরিচালনার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছিল নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়। সংযুক্ত আরব-আমিরাতভিত্তিক বন্দর পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান ‘ডিপি ওয়ার্ল্ড’ কে সামনে রেখে কার্যক্রম অনেক দূর এগিয়েও ছিল।

তখন বন্দর ব্যবহারকারীদের অনেকেই এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সোচ্চার থাকলেও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের একক আধিপত্যের কারণে সেই প্রতিবাদ হালে পানি পায়নি। এই অবস্থায় এনসিটি ‘ডিপি ওয়ার্ল্ড’ কে দিয়ে পরিচালনার কাজ এগোতে থাকে।

বাংলাদেশের মোট কন্টেইনার পণ্য উঠানামার ৫৫ শতাংশই হয় এনসিটিতে। পণ্য ওঠানামার সবচেয়ে আধুনিক সব যন্ত্রে সজ্জিত এই টার্মিনাল থেকে বছরে হাজার কোটি টাকার বেশি রাজস্ব আয় করে বন্দর কর্তৃপক্ষ।

গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর অন্তবর্তীকালীন সরকার ক্ষমতায় আসলে সেপ্টেম্বর মাসে নৌপরিবহন উপদেষ্টার সঙ্গে দেখা করে ডিপি ওয়ার্ল্ডেরে একটি প্রতিনিধি দল। পরে দলটি চট্টগ্রাম বন্দর পরিদর্শন করে।

সেই আলোচনায় বে টার্মিনাল, এনসিটি, জিসিবিতে (জেনারেল কার্গো বার্থ) বিনিয়োগের আগ্রহ প্রকাশ করে দলটি। এরপর থেকেই এনসিটি বিদেশি অপারেটর দেওয়া নিয়ে আবার আলোচনা শুরু হয়েছে।

এই অবস্থায় মঙ্গলবার ১২ দলীয় জোটের মুখপাত্র ও বাংলাদেশ এলডিপির মহাসচিব শাহাদাত হোসেন সেলিম গণমাধ্যমে বিবৃতি দিয়ে এর প্রতিবাদে সরব হয়েছেন।

তিনি বলেছেন, “চট্টগ্রাম বন্দরের এনসিটি টার্মিনালটি একটি আয়বর্ধক টার্মিনাল। এতে চট্টগ্রাম বন্দরের নিজস্ব অর্থায়নে যথেষ্ট বিনিয়োগ রয়েছে। টার্মিনালটি দেশীয় অপারেটর দ্বারা সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত হচ্ছে। এই মুহূর্তে বিদেশি বিনিয়োগের কোনও প্রয়োজন নাই এবং বিনিয়োগের কোনও সুযোগও নেই।

“গত সরকার আমলে টার্মিনালটি বিদেশি প্রতিষ্ঠানকে দেওয়ার পাঁয়তারা করেছিল। সরকার পরিবর্তনের পরও পূর্বের ফ্যাসিবাদী সরকারের দোসররা কোনও একটি নির্দিষ্ট মহলের ওপর ভর করে টার্মিনালটি বিদেশিদের হাতে তুলে দেওয়ার চক্রান্তে লিপ্ত আছে। এখান থেকে বর্তমান সরকারকে সরে আসতে হবে।”

শাহাদাত হোসেন সেলিম বলেন, “চট্টগ্রাম বন্দরের নিউ মুরিং কন্টেইনার টার্মিনাল পরিচালনার দায়িত্ব বিদেশি প্রতিষ্ঠানের হাতে তুলে দিলে বন্দরে কর্মরত শ্রমিক-কর্মচারীরা বেকার হয়ে পড়বে এবং শ্রমিক অসন্তোষসহ বিভিন্ন জটিলতা সৃষ্টি হবে।”

এই বিবৃতি আসার আগেই চট্টগ্রাম এসে এনসিটি নিয়ে কথা বলেছেন নৌ পরিবহন উপদেষ্টা সাখাওয়াত হোসেন। তবে এনসিটি নিয়ে বিদেশি বিনিয়োগ নিয়ে অবস্থান স্পষ্ট করেননি।

নতুন করে নিউ মুরিং কন্টেইনার টার্মিনালে বিদেশি বিনিয়োগ নিয়ে নৌ পরিবহন উপদেষ্টা বলেন, “যেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হোক খুব স্বচ্ছ হবে। আপনারা অপেক্ষা করেন। বন্দরের জন্য ভালো হলে এবং বন্দরের আয় বেশি হলে আমরা বিদেশি বিনিয়োগ নিয়ে চিন্তা করব।

“টার্মিনালের কর্মীদের সমস্যা যাতে না হয় সেটিও দেখা হবে। পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনালে আমাদের লোকজনই কাজ করছে।”

সাখাওয়াত হোসেন বলেন, “বিগত দিনে বন্দরে অনেক অনিয়ম হয়েছে। নানা জনের নামে লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে। সবই আমাদের নজরে আছে। অনিয়ম-দুর্নীতি দূর করতে এখন থেকে সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে (ডিপিএম মেথডে) কোনও দরপত্র আহ্বান করা হবে না।

“সব কাজই হবে উম্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতিতে। এ জন্য দরপত্রের শর্তগুলো আমরা পর্যালোচনা করব, যাতে নির্দিষ্ট কারও কাছে যাতে না যায়।”

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

ad

সর্বাধিক পঠিত