নতুন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার বিভিন্ন পেশার মানুষের দাবি-দাওয়ার ফিরিস্তি দেখে দৃশ্যত হতাশা প্রকাশ করেছেন উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান।
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকা এই উপদেষ্টা বলেছেন, “ধান কাটার মৌসুমের মতো এখন দাবি আদায়ের মৌসুম শুরু হয়েছে।”
সচিবালয়ের সামনে আন্দোলনরত আনসার সদস্যদের সঙ্গে সংঘর্ষে আহত শিক্ষার্থীদের সোমবার ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে দেখতে গিয়ে তিনি একথা বলেন বলে মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।
ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ড. মুহাম্মদ ইউনূস নেতৃত্বাধীন সরকার দায়িত্ব নিয়েই বিভিন্ন পেশাজীবীদের দাবি-দাওয়ার মুখোমুখি হচ্ছে।
জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে প্রতিদিনই বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠন বিক্ষোভ করছে। চাকরি জাতীয়করণের দাবিতে আন্দোলনে নামা আনসার সদস্যরা রবিবার রাতে সচিবালয়ে উপদেষ্টাদের অবরুদ্ধ করলে তাদের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ বাধে।
তাতে বেশ কয়েকজন হয়। এর মধ্যে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহও রয়েছেন। তিনি এখন ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি।
দাবির বহর মেনে নিতে সরকারের সমস্যার দিকটি তুলে ধরে উপদেষ্টা ফাওজুল বলেন, “প্রত্যেক দাবির একটা আর্থিক সংশ্লেষ আছে। এতে সরকারের ব্যয় বাড়বে। সরকারের রাজস্ব হঠাৎ করে রাতারাতি বাড়বে না। ফলে সরকার কীভাবে এসব দাবি স্বল্প সময়ে পূরণ করবে?”
এই দাবি পূরণ করতে গেলে চড়তে থাকা মূল্যস্ফীতি আরও বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করে তিনি বলেন, “এসব দাবি পূরণ করতে হলে সরকারের টাকা ছাপাতে হবে। এতে মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাবে। মূল্যস্ফীতি হলে জনসাধারণ সাফার করবে।
“মূল্যস্ফীতি বাড়লে বাজারে আলুর দাম ৪০ টাকা থেকে ৮০ টাকা হবে,পটলের দাম বেড়ে যাবে, তেলের দাম ২০০ টাকা ছোঁবে, পেঁয়াজের দাম ১৫০ টাকা হবে।”
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস রবিবার জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে দাবি-দাওয়া নিয়ে অবস্থান-সমাবেশ না করে লিখিতভাবে দাবিনামা দেওয়ার আহ্বান জানান।
উপদেষ্টা ফাওজুল বলেন, “নিয়মতান্ত্রিক পন্থায় আসলে আমরা আলাপ করতে রাজি। এমন হয়নি যে কোনও উপদেষ্টার সাথে দেখা করতে তারা ব্যর্থ হয়েছে।
“আমরা ন্যায্য দাবি ও বৈষম্য সম্পর্কে ওয়াকিবহাল। তবে বৈষম্য বিলোপের জন্য আমাদের সময় দিতে হবে।”
চাপ দিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার নত করা যাবে না বলেও সবাইকে হুঁশিয়ার করেন সাবেক সচিব ফাওজুল।
তিনি বলেন, “এই সরকারের ম্যান্ডেট খুব স্ট্রং। ছাত্র-জনতা রাজপথে রক্ত দিয়ে এই সরকারকে ক্ষমতায় এনেছে। সুতরাং কেউ যাতে মনে না করে যে এই সরকার বানের জলে ভেসে আসা সরকার।
“এই সরকার জনপ্রত্যাশার সরকার এবং এই জনপ্রত্যাশাকে পূরণ করতে যত কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন, সরকার তা নেবে।”