Beta
মঙ্গলবার, ৮ অক্টোবর, ২০২৪
Beta
মঙ্গলবার, ৮ অক্টোবর, ২০২৪
অন্তর্বর্তী সরকারের সিদ্ধান্ত

সংলাপে মতৈক্যের ভিত্তিতে সংস্কার

rizwana-press-breiffing-120924
Picture of সকাল সন্ধ্যা প্রতিবেদন

সকাল সন্ধ্যা প্রতিবেদন

গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ বিনির্মাণে যে সংস্কারের উদ্যোগ অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নিয়েছে, তা করা হবে রাজনৈতিক মতৈক্যের ভিত্তিতে।

বৃহস্পতিবার উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকের পর সংবাদ সম্মেলনে সরকারের এই পরিকল্পনা জানিয়েছেন উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।

সংলাপ করে মতৈক্যের ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় সংস্কারের পরই নির্বাচনের আয়োজন করা হবে জানিয়ে সেই পর্যন্ত সময় দিতে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর গঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের এক মাস পূর্তিতে বুধবার প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ভাষণে সংস্কারের একটি পরিকল্পনা তুলে ধরা হয়েছিল।

তার একদিন পরই উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকের পর হেয়ার রোডের ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে সংবাদ সম্মেলনে এসে নিজেদের পরিকল্পনার আরও বিশদভাবে তুলে ধরেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু উপদেষ্টা রিজওয়ানা। সংবাদ সম্মেলনে তার সঙ্গে ছিলেন শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া।

রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপের প্রসঙ্গ টেনে রিজওয়ানা বলেন, “সংলাপের মাধ্যমে রাজনৈতিক মতৈক্য গড়ে সংষ্কার বিষয়ে সুনির্দিষ্ট অঙ্গীকার …. কোন কোন ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট সংশোধনী এনে তারপরেই আমরা নির্বাচনের কথা ভাবছি।

“দেশের রাজনৈতিক দলগুলো যে সংস্কার চায়, তা তারা ইতিমধ্যে স্পষ্ট করেছে। কোনও রাজনৈতিক দল নিশ্চয় চাইবে না তারাও অজনপ্রিয় হয়ে একই ফলাফল ভোগ করতে। এজন্য প্রথম থেকে আমরা মতবিনিময়ে তাদের অন্তর্ভুক্ত করেছি। এক পর্যায়ে আমরা সংলাপে যাব।”

এর আগে বিভিন্ন সময় সংস্কারের উদ্যোগ ব্যর্থ হওয়ার বিষয়ে রিজওয়ানা বলেন, “এ সরকার হলো গণঅভ্যুত্থানের আউটকাম। সেখানে দুইটা মূল শব্দ ছিল। একটা হচ্ছে বৈষম্যবিরোধী, আরেকটা হচ্ছে সংস্কার। এটার উদ্দেশ্য হচ্ছে একটা প্রকৃত গণতন্ত্রের দিকে দেশটাকে নিয়ে যাওয়া।”

সংস্কারের জন্য গঠিত ছয়টি কমিশন প্রাথমিকভাবে তিন মাসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে পারবে বলে আশা প্রকাশ করেন রিজওয়ানা।

“এগুলো আদৌ বাস্তবায়িত হবে কি না, তা সম্পূর্ণ নির্ভর করবে এগুলোর সপক্ষে আমরা রাজনৈতিক ঐক্য গড়ে তুলতে পারি কি না? এজন্য সংষ্কারের বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত চাচ্ছি।”

সংস্কারে গঠিত ৬ কমিশন যেভাবে কাজ করবে, তার একটি ব্যাখ্যাও তুলে ধরেন উপদেষ্টা রিজওয়ানা।

“কমিশন প্রধানেরাই আমাদের সঙ্গে আলোচনা করে ঠিক করবেন সদস্য কারা হবেন। সংস্কার প্রস্তাবের কিছু কিছু বিষয় আছে, পত্র-পত্রিকায় আছে, জনগণের মতামত হিসেবে আছে, কারও কারও গবেষণায় হিসেবে আছে। ওইগুলো নিয়ে ওনারা হয়ত কাজ শুরু করে দেবেন। এর মধ্যে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে কংক্রিট যে প্রস্তাবগুলো আহ্বান করেছি, সেগুলো চলে আসবে।”

দুই থেকে তিন সপ্তাহের মধ্যে কমিশনের কর্মপরিধি ঠিক হয়ে যাওয়ার আশা রেখে তিনি বলেন, “তবে আমরা মনে করেছি এ সময় বসে না থেকে আমাদের হাতে যা আছে, তা নিয়ে কাজ শুরু করুক।

“ওনারা কোথায় বসবেন, তা মোটামুটি ধারণা আমরা করছি। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সাচিবিক দিক দেখবেন, তা ঠিক হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টা মহোদয় কয়েকটা দিনের জন্য জাতিসংঘে যাচ্ছেন। ওনি আসার পর কর্মপরিধি ও কারা কারা থাকবেন, সেগুলো ঠিক হবে।”

‘বিচারের স্বার্থে’ শেখ হাসিনাকে ফেরত চায় সরকার

আন্দোলনে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দেশে এনে বিচারের মুখোমুখি করতে চায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।

রিজওয়ানা বলেন, “শেখ হাসিনার প্রত্যাবর্তনের বিষয়ে আমাদের অবস্থান স্পষ্ট। বিচারের স্বার্থে গণহত্যার যে অভিযোগটা আছে, সেটা বিচারের স্বার্থে, সর্বোপরি একটা ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার মুখপাত্র হিসাবে বিচারের প্রক্রিয়ায় তাকে থাকতে হবে। কারণ দায়-দায়িত্বের এখানে একটা ব্যাপার আছে।

“সেই প্রত্যাবর্তনটা কোন প্রক্রিয়ায় হবে, দুই দেশের মধ্যে কোনও প্রক্রিয়ায় কথা হবে। সেগুলো প্রক্রিয়া পরের ব্যাপার। যখন আইনি প্রক্রিয়ার প্রসেসটা শুরু হবে, তখন আমরা দেখব।”

শেখ হাসিনা গত ৫ আগস্ট দেশ ছেড়ে ভারতে গিয়ে আশ্রয় নেন। এখনও সেখানেই রয়েছেন তিনি। দেশে এরই মধ্যে তার বিরুদ্ধে গণহত্যাসহ নানা অভিযোগে বেশ কয়েকটি মামলা হয়েছে।

শেখ হাসিনাকে ফেরত পাঠানো নিয়ে ভারতের অনেক ‘নেতিবাচক’ বক্তব্য চোখে পড়েছে বলে সাংবাদিকদের প্রশ্নে জানান রিজওয়ানা।

তিনি বলেন, “আমরা তো গত ১৫ বছর এই দেশে ছিলাম, বাস্তবতাটা আমরা জানি। আমাদের চেষ্টা হবে, আমাদের পাশের দেশ ও সকল দেশের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখা। তবে সেটা হতে হবে নায্যতা ও সমতার ভিত্তিতে। এটা বার বার ক্লিয়ার করা হচ্ছে।

“যেটা আমাদের অধিকার, যেটা আমাদের প্রাপ্য, সেই কথাগুলো যে যে চ্যানেলে বলা দরকার, সেটা কূটনৈতিক হোক, রাজনৈতিক হোক বা সেটা ব্যক্তিগত বা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে হোক, আমরা সেগুলো বলব।”

২১ সদস্য নিয়ে ‘জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশন’

সংবাদ সম্মেলনে উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ জানান, ২১ জন সদস্য নিয়ে জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশন গঠন করা হয়েছে।

“জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনে সভাপতি মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। সাধারণ সম্পাদক হিসেবে আছেন শহীদ মূগ্ধের বড়ভাই মীর মাহবুবুর রহমান স্নিগ্ধ।”

গণআন্দোলনের স্মৃতি দীর্ঘ মেয়াদে ধরে রাখতে নিহতদের পরিবার থেকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে বলে জানান তিনি।

ফাউন্ডেশনের কোষাধ্যক্ষ করা হয়েছে কাজী ওয়াকার আহমেদকে, দপ্তর সম্পাদক হয়েছেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম। সদস্য থাকছেন উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূইয়া, উপদেষ্টা নুরজাহান বেগম ও উপদেষ্টা শারমিন মুরশিদ।

সাত সদস্যের স্ট্যান্ডিং কমিটি ও সাধারণ সদস্য ১৪ জন নিয়ে মোট ২১ সদস্যের কমিটি করা হয়েছে বলে জানান আসিফ।

তিনি বলেন, “দীর্ঘমেয়াদী চিকিৎসা সহকারে আরও যত সহযোগিতা প্রয়োজন, সেটা নিশ্চিত করা হবে। যে সরকারই আসুক না কেন, শহীদরা যাতে প্রাপ্য সম্মান পায়।”

পদ্মা ব্যাংকে আটকে ৮৭৩ কোটি টাকা

পদ্মা ব্যাংকে জলবায়ু ট্রাস্টের ৮৭৩ কোটি ৮১ লাখ টাকা আটকে আছে বলে জানান পরিবেশ, বন ও জলবায়ু উপদেষ্টা রিজওয়ানা হাসান।

তিনি বলেন, জলবায়ু ট্রাস্ট ফান্ডে সরকার ৩ হাজার ৯৫১ কোটি টাকা দিয়েছিল। বিগত সরকার তার কিছু টাকা পদ্মা ব্যাংকে রেখেছিল। সেই টাকা সুদে আসলে বেড়ে পাওনা হয়েছে ৮৭৩ কোটি ৮১ লাখ ৬৫ হাজার ৮৫৩ টাকা।

এখন বার বার চেয়েও পদ্মা ব্যাংক থেকে টাকাটি পাওয়া যাচ্ছে না জানিয়ে রিজওয়ানা বলেন, “তাদের বর্তমান বক্তব্য, ২০৩৮ সালের আগে এ টাকা দিতে পারবে না। না সুদ, না আসল।”

এরকম সমস্যা শ্রম ও কর্ম সংস্থান মন্ত্রণালয়েও আছে জানিয়ে তিনি বলেন, বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে।

“সিদ্ধান্ত হয়েছে, অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকে বলা হবে। বাংলাদেশ ব্যাংক সেসব মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বসে রোডম্যাপ তৈরি করে দেবে, যাতে এই পাবলিক মানি ফেরত পাই।”

এই টাকা কবে পাওয়া যাবে- তা জানাতে পারলে খুশি হতেন জানিয়ে রিজওয়ানা বলেন, “দ্রুতই মিটিংটা ডাকা হবে। ব্যাংকগুলোর বাস্তব অবস্থা বিবেচনায় নিতে হবে। তারপর কত সময় দিতে পারবে, তারা বলবে। ২০৩৮ সালের কত আগে কত অনুপাতে ফেরত আনা যায়, সেগুলো রোডম্যাপে বলা হবে।”

যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ বলেন, শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশনের ১১৪ কোটি টাকা বেসরকারি ব্যাংকে আছে বলে তিনি খোঁজ পেয়েছেন।

শ্রমিক অসন্তোষে ‘বিদেশি ষড়যন্ত্র’

দেশে গাজীপুর ও আশুলিয়ায় পোশাক কারখানাগুলোতে শ্রমিক অসন্তোষের পেছনে ‘বিদেশি ষড়যন্ত্র’ আছে বলে সন্দেহ করছেন উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ।

তিনি বলেন, “আমরা কিছু রিপোর্ট পেয়েছি, যা আমাদেরকে ওইদিকে ইঙ্গিত করে। রেজাল্টটা যদি দেখেন, সেপ্টেম্বর ও অক্টোবরের দিকে, এটা তো সিজনাল বিজনেস। তিন মাস আগেই মালিক পক্ষকে পণ্য প্রস্তুত করতে হয়৷ সেই অর্ডারগুলো ক্যান্সেল হয়ে যাচ্ছে। প্রায় ১৫ থেকে ২০ শতাংশ অর্ডার ক্যান্সেল হচ্ছে।

“কিছু নির্দিষ্ট দেশের ক্রেতারা সেই অর্ডার নেওয়ার জন্য লবিং করছেন; উঠে পড়ে লেগেছেন। সেই জায়গা থেকে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের নতুন সচিব একথা বলেছেন। ফলাফল দেখে অবস্থানটা বোঝা যায়।”

কারখানায় হামলায় শ্রমিকরা জড়িত নয় জানিয়ে তিনি বলেন, “আমরা দেখেছি, বেকার যুব সংঘের নামে যারা বিভিন্ন ফ্যাক্টরিতে হামলা করেছেন, শ্রমিকরা সেটাকে প্রতিহত করেছেন। বেকার যুব সংঘের একজনকে আটক করা হয়েছে, সে নিজ এলাকায় ছাত্রলীগের পদধারী নেতা।”

বহিরাগতদের প্রসঙ্গ টেনে আসিফ বলেন, “যাদের শিল্প-কারখানার সঙ্গে কোনও সম্পর্ক নাই, ঝুট ব্যবসা দখলকে কেন্দ্র করে অসন্তোষ উস্কানি দিচ্ছে। তাদের ব্যাপারে সরকার কঠোর পদক্ষেপ নিচ্ছে এবং ভবিষ্যতে আরও কঠোর হবে।”

তবে কয়েকটি কোম্পানি বেতন দিতে পারছে না বলে সেখানে শ্রমিক অসন্তোষ রয়েছে বলেও স্বীকার করেন উপদেষ্টা। তা সমাধানে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।

সড়কের শৃঙ্খলার বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, “সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে আমরা আজকের মধ্যেই চাই। কিন্তু নানান কারণে সেটা সম্ভব হচ্ছে না।

“আজকেও (বৃহস্পতিবার) ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা নিয়ে বিমানবন্দর এলাকায় অভিযান হয়েছিল।

“আমাদের অনেক বিষয়ে মনোযোগ দিতে হচ্ছে। আজকে এখানে শ্রমিক আন্দোলন, কালকে ওখানে শ্রমিক আন্দোলন। যদি জিজ্ঞেস করেন আমরা কবের মধ্যে পারব? আমরা তো আজকের মধ্যেই পারতে চাই। কিন্তু একটু সমস্যা হচ্ছে। আশা করি, খুব দ্রুতই সেটা কাটিয়ে উঠতে পারব।”

লোডশেডিংয়ের বিষয়ে তিনি বলেন, “লোডশেডিংয়ের বিষয়ে আমরা গ্রাম এলাকা থেকে অভিযোগ পাচ্ছি। আমাদেরকে এখন পাওনা-দেনা যা আছে, সব মিটিয়ে দিতে হবে। সেটা মিটিয়ে দেওয়ার জন্য আমরা অগ্রাধিকারও ঠিক করেছি, কোথায় কোথায় পাওনা-দেনা মিটিয়ে দিলে মানুষের ভোগান্তি যেন মিটে যায়।”

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

ad

সর্বাধিক পঠিত