ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের ১৮টি ওয়ার্ড ডেঙ্গুর উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে বলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রাক মৌসুম জরিপে উঠে এসেছে। সেখানে দেখা গেছে, এসব ওয়ার্ডের বহুতল ভবনগুলোতেই মূলত এডিস মশার ঘনত্ব সর্বোচ্চ।
মঙ্গলবার ঢাকার মহাখালীতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে আয়োজিত ‘মৌসুম পূর্ব এডিস সার্ভে-২০২৪’ এর ফলাফল প্রকাশ অনুষ্ঠানে জরিপের তথ্য তুলে করা হয়। যা উপস্থাপন করেন রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক ও কমিউনিকেবল ডিজিজ কন্ট্রোল প্রোগ্রামের লাইন ডিরেক্টর অধ্যাপক ডা. শেখ দাউদ আদনান।
তিনি বলেন, “ঢাকার দুই সিটির ১৮টি ওয়ার্ডে ডেঙ্গুর জীবাণুবাহী এডিস মশার লার্ভার ঘনত্বের পরিমাণ নির্দিষ্ট মানদণ্ডের চেয়েও বেশি। এখানে এডিসের লার্ভার ঘনত্ব সর্বোচ্চ ৪৩ দশমিক ৩৩ শতাংশ পাওয়া গেছে বহুতল ভবনগুলোয়। এরপরই রয়েছে স্বতন্ত্র বাড়ি ও নির্মাণাধীন ভবন। এসব স্থানে লার্ভা পাওয়ার হার ২১ দশমিক ছয় শতাংশ।
“এছাড়া প্লাস্টিকের ড্রামে ১৮ শতাংশ, পানি জমে থাকা মেঝেতে ১৫ শতাংশ আর পানি জমানো বালতিতে ১৪ শতাংশ লার্ভার উপস্থিতি পাওয়া গিয়েছে। সেইসঙ্গে দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে ১৬ দশমিক ৩৯ শতাংশ এবং উত্তর সিটিতে ১৪ দশমিক ৩০ শতাংশ পরিত্যক্ত পাত্রেও রয়েছে এডিসের লার্ভা।”
অধিদপ্তরের রোগনিয়ন্ত্রণ শাখার আওতাধীন জাতীয় ম্যালেরিয়া নির্মূল ও এডিসবাহিত রোগনিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির অধীনে গত ১৭ থেকে ২৭ এপ্রিল পর্যন্ত এই জরিপ চালানো হয়।
এডিস মশার লার্ভার ঘনত্ব পরিমাপের সূচক ‘ব্রুটো ইনডেক্স’ নামে পরিচিত। এই মানদণ্ডে লার্ভার ঘনত্ব ২০ শতাংশের বেশি হলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে বলে মনে করা হয়।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের জরিপ অনুযায়ী, ঢাকার দুই সিটি করপোরেশেনের ৯৯ ওয়ার্ডের মধ্যে ১৮টিতেই ব্রুটো ইনডেক্স ২০ এর বেশি। অর্থাৎ এসব এলাকায় ১০০টির মধ্যে ২০টির বেশি পাত্রে মশা বা লার্ভা পাওয়া গেছে। এই এলাকাগুলোই রয়েছে ডেঙ্গুর বেশি ঝুঁকিতে।
জরিপে দেখা যায়, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে ঝুঁকিতে থাকা ওয়ার্ডগুলো হলো ১২, ১৩, ২০, ৩৬, ৩১, ৩২, ১৭ এবং ৩৩ নম্বর। দক্ষিণ সিটির ঝুঁকিপূর্ণ ওয়ার্ডগুলো হলো তিন, চার,পাঁচ, ১৩, ১৫, ১৬, ১৭, ২৩, ৫২ এবং ৫৪।
ঝুঁকিপূর্ণের মধ্যেও সবচেয়ে ঝুঁকির তালিকায় রয়েছে উত্তর সিটির ১২ নম্বর ওয়ার্ড। যেখানে এডিসের ব্রুট্রো ইনডেক্স ৪২ দশমিক ৩৩ শতাংশ। এরপরের অবস্থানে রয়েছে ১৩ ও ২০ নম্বর ওয়ার্ড। এদুটির ব্রুটো ইনডেস্ক ৪০ শতাংশ।
অন্যদিকে ৩৬ ওয়ার্ডে ৩৩ দশমিক ৩৩ শতাংশ, ৩১ ও ৩২ নম্বর ওয়ার্ডে ৩০ শতাংশ, ১৭ ও ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডে ২৪ দশমিক ৪৪ শতাংশ ব্রুটো ইনডেক্স পাওয়া গেছে।
তবে পুরো ঢাকার ভেতরে সবচেয়ে বেশি ব্রুটো ইনডেক্স পাওয়া গেছে দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে। এই সিটির ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের ব্রুটো ইনডেক্স ৭৩ দশমিক ৩৩ শতাংশ, চার নম্বর ওয়ার্ডে ৪৬ দশমিক ৬৭ শতাংশ, ৫২ ও ৫৪ নম্বর ওয়ার্ডে ৩৬ দশমিক ৬৭ শতাংশ, ১৬ নম্বর ওয়ার্ডে ৩৩ দশমিক ৩৩ শতাংশ।
এছাড়া তিন, পাঁচ, ১৫, ১৭ ও ২৩ নম্বর ওয়ার্ডে পাওয়া গেছে ৩০ শতাংশ ব্রুটো ইনডেক্স।
কার্যক্রমের অংশ হিসেবে দুই সিটির ৯৯টি ওয়ার্ডের তিন হাজার ১৪৯টি বাসায় জরিপ চালানো হয়। এরমধ্যে গতবারের মতোই সর্বোচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে মিরপুর, বনানি, নিকেতন, হাতিরঝিল, মোহাম্মদপুর, খিলক্ষেত, মালিবাগ।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কন্ট্রোল রুম জানিয়েছে, চলতি বছরের এখন পর্যন্ত দেশে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে পৌনে তিন হাজার মানুষ। মৃত্যু হয়েছে ৩৪ জনের। যা গতবছরের তুলনায় বেশি।
গত বছর একই সময় আক্রান্তের সংখ্যা ছিল এক হাজার ৭০৪ জন আর মৃত্যু হয়েছিল ১৩ জনের।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ইমেরিটাস অধ্যাপক ডা. এ বি এম আব্দুল্লাহ বলেন, ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ কারও একার কাজ নয়। সবাইকে একসঙ্গে মিলে কাজ করতে হবে। তা না হলে ডেঙ্গুর বাহক এডিস মশা নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না।
এ বিষয়ে সাধারণ মানুষকেও সচেতন হতে অনুরোধ জানান তিনি।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম।
তিনি বলেন, ডেঙ্গুর চিকিৎসা ব্যবস্থা একই। লক্ষণ এবং উপসর্গ দেখে এর চিকিৎসা নিতে হবে। তাই এর চিকিৎসায় দূরদূরান্ত থেকে ঢাকায় আসার দরকার নেই। অধিদপ্তর থেকে দেশের সব হাসপাতালে এ সংক্রান্ত নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ফলে সব জায়গাতেই একই চিকিৎসা পাওয়া যাবে।