যশোরের অভয়নগর থানা পুলিশের হেফাজতে নির্যাতনে গৃহবধূ মৃত্যুর অভিযাগ তুলেছে পরিবার। এ ঘটনা তদন্তে তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছে পুলিশ।
আফরোজা বেগম (৬৫) অভয়নগর উপজেলার নওয়াপাড়া গ্রামের জলিল মোল্যার স্ত্রী। রবিবার সকালে থানা হাজত থেকে আহত অবস্থায় যশোর জেনারেল হাসপাতালে নেওয়ার আগেই তার মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসক।
পরিবারের অভিযোগ, পুলিশ গভীর রাতে ওই নারীর বাড়িতে ঢুকে টাকা না পেয়ে নির্যাতন চালায়। পরে নিজেদের কাছে থাকা ইয়াবা দিয়ে তাকে আটক দেখায়। সেখানেও নির্যাতন করা হলে তার মৃত্যু হয়।
যদিও পুলিশ বলছে, হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ওই নারী।
আফরোজা বেগমের বড় ছেলে মুন্না মোল্যা বলেন, “শনিবার রাত ১২টার দিকে আম্মু বাড়ির পাশে টিউবওয়েল থেকে পানি আনতে যায়। সেসময় বাড়িতে পাঁচজন পুলিশ আসে।
“তাদের মধ্যে অভয়নগর থানার এএসআই সিলন আলী আম্মুকে বলে, তোর কাছে যা আছে বের করে দে। আম্মু তার কাছে কিছু নেই জানালে এক নারী পুলিশ দিয়ে তার দেহ তল্লাশি করেও কিছু পায়নি সিলন আলী। পরে সিলন আলী আম্মুকে বেধড়ক মারধর করে। আমার সামনে আম্মুর চুল ফ্যানের সঙ্গে বেঁধে ঝুলিয়ে দেওয়া হয়।”
ইজিবাইক চালক মুন্না মোল্যা বলেন, “গ্রামের একটি মহলের ইন্ধনে অভয়নগর থানার এএসআই সিলন ও শামছু আমাদের বাড়িতে আসে। পরে নিজেদের কাছে থাকা ইয়াবা দিয়ে মাকে আটক দেখায়। ”
“সিলনসহ কয়েকজন পুলিশ মাকে ফ্যানের সঙ্গে ঝুলিয়ে মারধর করে। পরে রাত ১টার দিকে তাকে থানায় নিয়ে যায় পুলিশ,” বলেন মুন্না।
রবিবার সকালে থানায় গিয়ে মাকে খুব অসুস্থ অবস্থায় পান মুন্না। পরে পুলিশকে অনুরোধ করে তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হয় বলে জানান মুন্না।
তিনি জানান, চিকিৎসকরা কয়েকটি টেস্ট করতে বললেও পুলিশ সদস্যরা সেসব করতে না দিয়ে তাকে আবার থানায় নিয়ে যায়। সেখানে আবারও অসুস্থ হয়ে পড়লে যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে নেওয়ার পথে তার মায়ের মৃত্যু হয়।
মুন্নার অভিযোগ, পুলিশ দুই লাখ টাকা ঘুষের দাবিতে তার মাকে নির্যাতন করে হত্যা করেছে।
যশোর জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক হাসিব মো. আলী হাসান বলেন, “হাসপাতালে আনার আগেই আফরোজা বেগম মৃত্যু হয়। তার মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য হাসপাতালের মর্গে রয়েছে। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পরই তার মৃত্যুর কারণ বলা যাবে।”
রবিবার সকালে আফরোজা বেগমের বিরুদ্ধে অভয়নগর থানায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে একটি মামলা দায়ের করা হয়। যশোর জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অভয়নগর সার্কেল) জাহিদুল ইসলাম বলেন, “মাদকসহ আটক ওই নারী হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন।”
অভয়নগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আকিকুল ইসলাম বলেন, “আফরোজা বেগমকে শনিবার রাত দেড়টার দিকে ৩০টি ইয়াবাসহ আটক করা হয়। রাতে তাকে নারী থানা হাজতে রাখা হয়। তাকে কোনও নির্যাতন করা হয়নি।”
ওসি আরও বলেন, “আফরোজা বেগম সকালে অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে অভয়নগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। অবস্থার অবনতি হলে যশোর জেনারেল হাসপাতালে নেওয়ার পর তার মৃত্যু হয়। তিনি হাই ব্লাড প্রেসারের রোগী ছিলেন। ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহ মর্গে পাঠানো হয়েছে।”
পুলিশি নির্যাতনে মৃত্যুর অভিযোগ তদন্তে ৩ সদস্যের কমিটি গঠন করেছে পুলিশ। সিলেটের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) নুরই আলম সিদ্দিকীকে প্রধান করে কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির সদস্য অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (খ) সার্কেল জাহিদুল ইসলাম ও কোট ইন্সপেক্টর রোকসানা খাতুন।
পুলিশ হেফাজতে আফরোজা বেগমের মৃত্যুর ঘটনায় তীব্র নিন্দা, ক্ষোভ ও উদ্বেগ প্রকাশ করেছে মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন (এমএসএফ)। সংস্থাটি বলেছে, আফরোজা বেগমের মৃত্যুর বিষয়ে যে বক্তব্য পুলিশ দিয়েছে তা কোনওভাবেই গ্রহণযোগ্য ও বিশ্বাসযোগ্য নয়। এ ঘটনায় নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু তদন্ত নিশ্চিত করে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছে এমএসএফ।