সাম্প্রদায়িক ও জাতিগত সহিংসতায় উত্তপ্ত রাঙ্গামাটি শহরের ক্ষতিগ্রস্ত স্থানগুলো ঘুরে দেখেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা। তবে এর মধ্যে পেরিয়ে গেছে ১৯ দিন।
বুধবার দুপুরে পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ কার্যালয় পরিদর্শন করেন তিনি। এরপরই যান সহিংসতার ক্ষতচিহ্ন বয়ে বেড়ানো স্থানগুলোয়।
অবশ্য ১৯ ও ২০ সেপ্টেম্বরের সংঘাতময় পরিস্থিতির পরপরই ২১ তারিখ খাগড়াছড়ি ও রাঙ্গামাটি জেলায় যান সরকারের তিন উপদেষ্টা। তারা স্থানীয় প্রশাসন, রাজনৈতিক নেতা ও আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর সঙ্গে বৈঠকও করেন। কিন্তু যাননি ঘটনাস্থলগুলো পরিদর্শনে, কথাও বলেননি ক্ষতিগ্রস্তদের সঙ্গে।
তিন উপদেষ্টার মধ্যে ছিলেন সুপ্রদীপ চাকমাও। তার সঙ্গে ছিলেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, স্থানীয় সরকার এবং স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় উপদেষ্টা এ এফ হাসান আরিফ।
এর পরদিন ২২ সেপ্টেম্বর রাঙ্গামাটিতে জেলা প্রশাসন আয়োজিত ‘সম্প্রীতি সমাবেশে’ উপদেষ্টাদের ঘটনাস্থল পরিদর্শন না করার বিষয়ে বিক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ সদস্য কে এস মংও। স্থানীয়রাও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে করেছেন সমালোচনা।
এই দফায় পার্বত্য অঞ্চলে সংকটের শুরু খাগড়াছড়ির দীঘিনালায় একটি মোটরসাইকেল চুরির ঘটনাকে কেন্দ্র করে এক বাঙালি যুবককে পিটিয়ে হত্যার মধ্য দিয়ে। এই ঘটনার পরদিন ২০ সেপ্টেম্বর সহিংসতা গড়ায় রাঙ্গামাটিতেও। এসব ঘটনায় অন্তত চারজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়। এর রেশ না কাটতেই অক্টোবরের প্রথম দিন খাগড়াছড়িতে শিক্ষার্থীকে ধর্ষণের অভিযোগে এক বাঙালি শিক্ষককে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। ফলে আবারও উত্তপ্ত হয় পাহাড়।
উদ্ভুত পরিস্থিতিতে নিরাপত্তাহীনতার কথা জানিয়ে এবার পাহাড়ে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় অনুষ্ঠান ‘কঠিন চীবর দান’ না উদযাপনের ঘোষণা দেন বৌদ্ধ ভিক্ষুরা। যা নিয়ে আবার শুরু হয় আলোচনা-সমালোচনা। রাঙ্গামাটির পুলিশ ও জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এ উৎসব আয়োজনের অনুরোধ করা হলেও নিজেদের সিদ্ধান্ত জানাননি ভিক্ষুরা।
পার্বত্য তিন জেলায় যখন এমন বাস্তবতা তখন দুদিনের সফরে রাঙ্গামাটি-খাগড়াছড়িতে গেলেন সরকারের পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক উপদেষ্টা। যার নিয়োগের পর পাহাড়ের একটি পক্ষই করেছিল বিরোধীতা, জানিয়েছিল অনাস্থা।
দুপুরে রাঙ্গামাটির ক্ষতিগ্রস্ত হ্যাপির মোড়, এস.কে. মার্কেট, শেভরণ ডায়াগনস্টিক সেন্টার, বনরূপা বাজার, কাটাপাহাড়, কাঁঠালতলী মৈত্রী বিহারসহ অন্যান্য স্থাপনা পরিদর্শন করেন তিনি। এসময় সঙ্গে ছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব কংকন চাকমা, রাঙ্গামাটির জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন খান, পুলিশ সুপার এসএম ফরহাদ হোসেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ সদস্য কে এস মং, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শাহনেওয়াজ রাজুসহ পুলিশ-প্রশাসনের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
এসময় ক্ষতিগ্রস্তদের সঙ্গে কথা বলেন সুপ্রদীপ চাকমা।
পরিদর্শন শেষে মৈত্রী বিহারে সাংবাদিকদের সঙ্গেও কথা বলেন তিনি। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করেছেন জানিয়ে বলেন, “ক্ষতিগ্রস্তদের আবেদন জমা দিতে বলেছি। জেলা প্রশাসকও ক্ষয়ক্ষতির বিবরণ দেবেন। আমরা যতটুকু পারি সাহায্য করব। আমরা চাই সঠিক বিচার যেন হয় এবং কোনও হয়রানি যেন না হয়।
“পাহাড়ি-বাঙালি যেই হোক, দোষীই যেন দোষী সাব্যস্ত হয়, সেটাই আমাদের উদ্দেশ্য।”
এসময় সাংবাদিকরা রাঙ্গামাটির আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি প্রসঙ্গে জানতে চাইলে জেলাপ্রশাসক ও পুলিশ সুপারকে দেখিয়ে দেন উপদেষ্ট। তাদেরকে জনগণের আস্থা অর্জন করার মতো আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থা রাখার কথা বলেন।
এছাড়া দুপুরে পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের ক্ষতিগ্রস্ত ভবন ও গাড়ি পরিদর্শন করেন উপদেষ্টা। একই সময় আঞ্চলিক পরিষদ চেয়ারম্যান ও পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সভাপতি জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা ওরফে সন্তু লারমার সঙ্গে তার অফিস কক্ষে বসে আলোচনাও করেন।