Beta
বুধবার, ১৫ জানুয়ারি, ২০২৫
Beta
বুধবার, ১৫ জানুয়ারি, ২০২৫

২১ আগস্টের মামলায়ও তারেক রহমান খালাস, রইল বাকি ১

তারেক রহমান ১৬ বছর ধরে রয়েছেন যুক্তরাজ্যে।
তারেক রহমান ১৬ বছর ধরে রয়েছেন যুক্তরাজ্যে।
[publishpress_authors_box]

রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর একের পর এক মামলার দায় থেকে মুক্ত হচ্ছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, যাকে ‘ন্যায়বিচার’ বলছেন দলটির নেতারা।

অসংখ্য মামলার মধ্যে চারটি মামলায় তার বিরুদ্ধে বিচারিক আদালতের দণ্ড ছিল। রবিবার ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার মামলায় আপিলের রায়ে খালাস পেয়েছেন তিনি।

খালেদা জিয়ার ছেলে, বিএনপির ভবিষ্যৎ কর্ণধারের বিরুদ্ধে এখন আর একটি মামলার সাজাই বহাল রয়েছে।

হুলিয়া নিয়ে দেড় দশক ধরে যুক্তরাজ্যে থাকা তারেক রহমান দেশে ফেরার আলোচনা চলছে গত আগস্টে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর থেকে।

তবে আইনি সব বাধা কাটিয়েই দেশে ফিরতে চান তিনি, এমনটাই বলছিলেন বিএনপির নেতারা। একের পর পর এক মামলায় অব্যাহতি পাওয়া দৃশ্যত তারেকের দেশে ফেরা এগিয়ে আনছে।

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেই রেখেছেন, চিকিৎসার জন্য তার দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া যখন বিদেশ যাবেন, তখনই দেশে ফিরবেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক।

মির্জা ফখরুল এখন লন্ডন সফরে রয়েছেন। সেখানে তার সঙ্গে তারেকের বৈঠকের কথা রয়েছে। তারপর তারেকের দেশে ফেরার দিনক্ষণ জানাও যেতে পারে।

তবে দণ্ডে থাকা তিনটি মামলা থেকে অব্যাহতি পেলেও এখনও একটি মামলা ঝুলে আছে। সেটা হচ্ছে জিয়া অরফ্যানেজ (এতিমখানা) ট্রাস্ট মামলা।

এই মামলায় হাই কোর্টের রায়ও হয়েছে। তার বিরুদ্ধে খালেদা জিয়ার আপিল এখন আপিল বিভাগে বিচারাধীন।

এছাড়া রাষ্ট্রদ্রোহ, মানহানিসহ নানা অভিযোগে শতাধিক মামলা রয়েছে তারেক রহমানের বিরুদ্ধে। তবে সেগুলোর কোনোটি রায়ের পর্যায়ে যায়নি।

গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার সরকারের পতন ঘটার পর বিচারিক আদালত বিভিন্ন মামলায় তারেককে অব্যাহতিও দিয়েছে।

বিএনপি আগে থেকেই দাবি করে আসছে, তারেকের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ আমলে করা এসব মামলাই রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।

২০০৭ সালে গ্রেপ্তারের পর কারাগারে যেতে হয়েছিল তারেক রহমানকে। পরের বছর তিনি মুক্তি পেয়ে লন্ডনে পাড়ি জমান।

সাবেক রাষ্ট্রপতি, বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার বড় ছেলে তারেকের রাজনীতিতে আসা ২০০১ সালের পর, তখন তার দল ক্ষমতায়, মা সেই সরকারের প্রধানমন্ত্রী।

ওই সময়ে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব হিসাবে তারেক ‘হাওয়া ভবনে’ ক্ষমতার বিকল্প কেন্দ্র গড়ে তোলেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

২০০৭ সালে জরুরি অবস্থা জারির পর গ্রেপ্তার হন তারেক; তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলাও হয় । সেনা নিয়ন্ত্রিত সেই সরকার আমলেই পরের বছর জামিনে মুক্তি পেয়ে সপরিবারে দেশ ছাড়েন।

তারপর নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় বসার পর তারেক আর দেশে ফেরেননি। এর মধ্যে তার বিরুদ্ধে মামলার সংখ্যা বাড়তে থাকে, রায়ও হতে থাকে।

অর্থ পাচার মামলা

২০ কোটি ৪১ লাখ ২৫ হাজার ৮৪৩ টাকা পাচারের অভিযোগে ২০০৯ সালের ২৬ অক্টোবর তারেক রহমান ও তার বন্ধু, বিতর্কিত ব্যবসায়ী গিয়াস উদ্দিন আল মামুনের বিরুদ্ধে ক্যান্টনমেন্ট থানায় মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন।

ঢাকার তৃতীয় বিশেষ জজ মো. মোতাহার হোসেন ২০১৩ সালের ১৭ নভেম্বর এ মামলার রায় দেন। তাতে তারেককে বেকসুর খালাস দেন তিনি। তবে দণ্ড দেন মামুনকে।

এই রায়ের কারণে আওয়ামী লীগ সরকারের রোষানলে পড়ে দেশ ছাড়তে হয়েছিল বলে দাবি করেন মোতাহার।

রায়ের বিরুদ্ধে দুদক আপিল করলে ২০১৬ সালের ২১ জুলাই তারেককে খালাসের রায় বাতিল করে হাই কোর্ট। তারেককে ৭ বছরের কারাদণ্ড এবং ২০ কোটি টাকা অর্থদণ্ড দেওয়া হয় আপিলের রায়ে।

অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আসার পর গত ১২ নভেম্বর আপিল বিভাগ মামুনের আপিল গ্রহণ করেন। তাতে তিনি ও তারেক এই মামলায় অব্যাহতি পান।

অবৈধ সম্পদের মামলা

তারেক রহমান ও জোবায়দা রহমান
তারেক রহমান ও জোবায়দা রহমান।

আয়ের সঙ্গে সঙ্গতিহীন সম্পত্তি অর্জন এবং সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগে তারেক ও তার স্ত্রী জোবায়দা রহমানের বিরুদ্ধে মামলাটি হয় ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে। তারেকের শাশুড়িকেও মামলার আসামি করা হয়েছিল, তবে তাকে অব্যাহতি দেয় আদালত।

২০২৩ সালের ২ আগস্ট এই মামলার রায়ে তারেকের ৯ বছরের এবং জোবায়দার ৩ বছরের কারাদণ্ড হয়। একই সঙ্গে তারেকের পৌনে ৩ কোটি টাকার সম্পদ বাজেয়াপ্তের আদেশও হয়।

রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর সরকারের নির্বাহী আদেশে সেই রায় গত ২ অক্টোবর স্থগিত হয়েছে।

২১ আগস্ট মামলা

বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার আমলে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলা হয়। তখন যে তদন্ত হয়েছিল, তা নিয়ে ছিল ব্যাপক প্রশ্ন।

তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতায় যাওয়ার পর ২০০৮ সালে সিআইডি তদন্ত করে ২২ জনকে আসামি করে অভিযোগপত্র দিলে তার ভিত্তিতে শুরু হয়েছিল বিচার।

পরের বছর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় যাওয়ার পর অধিকতর তদন্তে আসামির তালিকায় যোগ হন তারেক রহমানসহ ৩০ জন।

এরপর ২০১৮ সালের ১০ অক্টোবর বিচারিক আদালতের রায়ে জীবিত ৪৯ আসামির সবার দণ্ড হয়েছিল। তারেক রহমানকে দেওয়া হয়েছিল যাবজ্জীবন সাজা।

আওয়ামী লী আমলে আপিলের শুনানি শেষ হয়নি। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ক্ষমতায় আসার পর ১ ডিসেম্বর দেওয়া রায়ে তারেকসহ সব আসামিকে খালাস দিয়েছে হাই কোর্ট।

উচ্চ আদালত বলেছে, বিচারিক আদালতের রায়টি অবৈধ, কারণ এটি সাক্ষ্য প্রমাণের ভিত্তিতে দেওয়া হয়নি।

জিয়া এতিমখানা মামলা

তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে ২০০৮ সালে করা এই মামলায় বিচারিক আদালতের রায়ে তারেক রহমানের সাজা ১০ বছর কারাদণ্ড।

দুদকের এই মামলায় ট্রাস্টের ২ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়। ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি রায় দেয় ঢাকার আদালত। তাতে খালেদা জিয়াকেও ৫ বছর কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

এই মামলার রায়ের পরই কারাগারে গিয়েছিলেন খালেদা জিয়া। তিনি আপিল করেছিলেন। তাতে সাজা আরও বেড়ে গিয়েছিল। হাই কোর্ট ওই বছরের ৩০ অক্টোবর রায় দেওয়ার পর জেল আপিল করেন খালেদা।

রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর রাষ্ট্রপতি বিএনপি চেয়ারপারসনের সাজা মওকুফ করলেও তারেকের সাজা রয়ে গেছে।

তবে খালেদা জিয়া মুক্তি পেলেন আপিল করেছেন। তা এখন শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে বলে জানিয়েছেন বিএনপির আইন বিষয়ক সম্পাদক কায়সার কামাল।

এখন লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি বিএনপির বিভিন্ন কর্মসূচিতে যোগ দেন তারেক রহমান।

দেশে ফেরার কত দূর?

বিএনপি বরাবরই দাবি করে আসছে, তাদের নেতা তারেক রহমানকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে নানা মামলায় ফাঁসানো হয়েছে।

২১ আগস্ট গ্রেনেড হাই কোর্টে রায়ের পর কায়সার কামাল ‘শুকরিয়া’ প্রকাশ করে সাংবাদিকদের বলেন, “তারেক রহমান সাহেব আজকের এই রায়ের মাধ্যমে ন্যায়বিচার পেয়েছেন। আজকে প্রমাণিত হয়েছে যে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য তারেক রহমান সাহেবকে যে মামলায় সাজা দেওয়া হয়েছিল, সেই মামলায় আইগতভাবে মোকাবেলার মাধ্যমে তিনি বেকসুর খালাস পেয়েছেন।”

আগস্টে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বিএনপির সহ আইন সম্পাদক সৈয়দ জয়নুল আবেদীন মেজবাহ সকাল সন্ধ্যাকে বলেছিলেন, তারেক রহমানের বিরুদ্ধে সারাদেশে ১৩০টির বেশি মামলা রয়েছে। সব মামলাই মিথ্যা, রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রমূলক।

“তারেক রহমানের ইচ্ছা, তিনি আইনি লড়াই করে মামলাগুলো থেকে অব্যাহতি পেলেই দেশে ফিরবেন।”

কায়সার কামালও তখন বলেছিলেন, “তারেক রহমান আইন ও আদালতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই তার সব মামলা আইনিভাবেই মোকাবেলা করা হবে। তিনি যথাসময়ে দেশে ফিরবেন।”

ডিসেম্বরে তারেক রহমান দেশে ফিরছেন, এমন কথাও উঠেছিল মাঝে। তবে বিএনপির পক্ষ থেকে কোনও দিনক্ষণ জানানো হয়নি এখনও।

গত সেপ্টেম্বরে মির্জা ফখরুল জানিয়েছিলেন, খালেদা জিয়া বিদেশে যাবেন, তারেক রহমান দেশে ফিরবেন।

অসুস্থ খালেদা জিয়ার চিকিৎসার জন্য বিদেশ যাওয়ার কথা রয়েছে। ডিসেম্বরে তিনি যাবেন বলে আলোচনা শোনা যাচ্ছে।  

এদিকে রায়ের পর বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস শিগগিরই তারেকের দেশে ফেরার ইঙ্গিত দিয়ে বলেছেন, “আমি আজকে ডিসেম্বরের প্রথম দিনে একটা সুসংবাদ পেলাম …ইনশাল্লাহ সামনে আরও সুসংবাদ আমরা আশা করছি।”

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত