স্ত্রী হত্যার মামলায় বাদী থেকে আসামি হয়ে কারাগারে থাকা সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা বাবুল আক্তার মুক্তি পেয়েছেন।
বুধবার সন্ধ্যা পৌনে ৬টার দিকে বাবুল আক্তার চট্টগ্রাম কারাগার থেকে বের হন বলে গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন ডেপুটি জেলার মো. ইব্রাহিম।
বাবুল আক্তার হাই কোর্ট থেকে জামিন পেয়েছিলেন। তবে নিহত মাহমুদা আক্তার মিতুর বাবা তা আটকাতে আপিল বিভাগে আবেদন করেও সাড়া পাননি।
বুধবার সকালে সেই আবেদনের শুনানি শেষে বাবুল আক্তারকে হাই কোর্টের দেওয়া জামিন বহাল রাখে সুপ্রিম কোর্টের চেম্বার জজ আদালত।
ফলে বাবুল আক্তারের কারামুক্তিতে আর কোনও বাধা নেই বলে জানান তার আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির। এর কিছুক্ষণ পরই কারামুক্ত হন তিনি।
আট বছর আগে চট্টগ্রামে মিতু হত্যাকাণ্ডের মামলায় পিবিআইর তদন্তে বাবুলকেই এই খুনের হোতা হিসাবে চিহ্নিত করা হলে তাকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠায় চট্টগ্রামের আদালত, যেখানে তার বিচার চলছে।
বাবুলের আবেদনে গত ২৭ নভেম্বর বিচারপতি মো. আতোয়ার রহমান ও বিচারপতি মো. আলী রেজার হাই কোর্ট বেঞ্চ তাকে ছয় মাসের অন্তর্বর্তীকালীন জামিন দেন।
একইসঙ্গে বাবুলকে কেন নিয়মিত জামিন দেওয়া হবে না, রাষ্ট্রপক্ষের কাছে সে ব্যাখ্যা চেয়ে রুল জারি করে আদালত।
জামিনের সেই আদেশ স্থগিতে গত ১ ডিসেম্বর আপিল বিভাগে আবেদন করেন বাবুলের শ্বশুর মোশাররফ হোসেন, যিনি নিজেও অবসরপ্রাপ্ত একজন পুলিশ কর্মকর্তা।
আদালতে তার আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মাহবুবুর রহমান। বাবুলের পক্ষে ছিলেন জয়নুল আবেদীন, এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন ও শিশির মনির।
বুধবার শুনানির পর ওই আবেদনে আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারক বিচারপতি মো. রেজাউল হক কোনও আদেশ দেননি।
“ফলে হাই কোর্টের দেওয়া ছয় মাসের অন্তবর্তীকালীন জামিন বহাল থাকছে। বাবুল আক্তারের কারা মুক্তিতে আর কোনও বাধা থাকছে না,” সাংবাদিকদের বলেন শিশির মনির।
পুলিশ সুপার বাবুল আক্তার চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশে ছিলেন। ২০১৬ সালের জুন মাসে তিনি বদলি হয়ে ঢাকায় যোগ দিলেও স্ত্রী ও দুই সন্তান চট্টগ্রামেই ছিলেন।
বাবুল ঢাকায় আসার কয়েকদিনের মধ্যে ওই বছরের ৫ জুন সকালে চট্টগ্রাম নগরীর জিইসি মোড়ে ছেলেকে স্কুলবাসে তুলে দিতে যাওয়ার সময় মিতুকে গুলি চালিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করা হয়।
তখন বাবুলই হত্যা মামলা করেছিলেন। তবে এক পর্যায়ে ঢাকায় তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা নিয়ে বেশ নাটকীয়তা তৈরি হয়। কয়েকমাস পর বাবুল পুলিশের চাকরি ছাড়েন।
স্ত্রী হত্যাকাণ্ডের পর বাবুল দুই শিশু সন্তানকে নিয়ে ঢাকায় শ্বশুর বাড়িতে এসে উঠলেও কয়েকমাস পর আলাদা বাসায় চলে যান।
এদিকে সাড়ে তিন বছর তদন্ত করেও গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) কোনও কূলকিনারা করতে না পারায় ২০২০ সালের জানুয়ারিতে আদালতের নির্দেশে মিতু হত্যা মামলার তদন্তভার পায় পিবিআই।
এরপর ২০২১ সালের মে মাসে পিবিআই জানায়, মিতুকে হত্যা করা হয়েছিল বাবুলের ‘পরিকল্পনায়’। আর এজন্য খুনিদের ‘লোক মারফত তিন লাখ টাকাও দিয়েছিলেন’ বাবুল।
পরে বাবুলের মামলায় চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেওয়ার পর মিতুর বাবা আরেকটি মামলা করেন। তবে সেই মামলা আদালতে না টেকার পর বাবুলের মামলাটিই পুনরুজ্জীবিত হয়। তবে বাদী বাবুল হয়ে যান আসামি।
২০২২ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর সেই মামলায় আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয় পিবিআই। তাতে বাবুলসহ সাতজনকে আসামি করা হয়। এরপর ওই বছরের ১০ অক্টোবর সেই অভিযোগপত্র গ্রহণ করে চট্টগ্রামের অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম আদালত।
গত বছরের ৯ এপ্রিল মিতুর বাবা মোশাররফ হোসেনের সাক্ষ্যগ্রহণের মধ্যদিয়ে মামলার বিচার শুরু হয়। মিতুর মা শাহেদা মোশাররফসহ বেশ কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষী এরই মধ্যে সাক্ষ্য দিয়েছেন।
মেয়ে মারা যাওয়ার পর মোশাররফ ও তার পরিবার বাবুলের পক্ষে বললেও পরে তারা অবস্থান বদলান। মোশাররফ বলেন, চতুর বাবুলের কার্যকলাপ তারা বুঝে উঠতে পারেননি।
অন্যদিকে বাবুল দাবি করে আসছিলেন, তাকে ফাঁসানো হয়েছে। মিতু হত্যাকাণ্ডের পর তার এক বোনকে বিয়ে করতে রাজি না হওয়ায় শ্বশুরবাড়ির সবাই তার ওপর বিরাগভাজন হন বলে তার দাবি।
মিতু হত্যা মামলায় মোট সাক্ষী ৯৭ জন, তার মধ্যে অর্ধশতাধিক জনের সাক্ষ্যগ্রহণ এরই মধ্যে নেওয়া হয়েছে চট্টগ্রামের আদালতে। সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে উভয় পক্ষে যুক্তিতর্ক শুনানির পর রায় হয়ে থাকে।