Beta
শনিবার, ১৭ মে, ২০২৫
Beta
শনিবার, ১৭ মে, ২০২৫

লেবাননের পর ইয়েমেনেও হামলা ইসরায়েলের

Yemen_Attack
[publishpress_authors_box]

লেবাননের পর এবার ইয়েমেনের রাস ইসা এবং হোদেইদাহ এলাকায় হুতিদের লক্ষ্য করে বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। এর মধ্য দিয়ে ইসরায়েল যুদ্ধের তৃতীয় ফ্রন্ট খুলল। এই ঘটনা গোটা মধ্যপ্রাচ্যে আঞ্চলিক সংঘাত সৃষ্টির আশঙ্কা আরও বাড়িয়েছে।

গত দেড় সপ্তাহ ধরে লেবাননে ইরান সমর্থিত সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহর অবস্থানগুলোতে ভয়াবহ বিমান হামলা চালিয়ে আসছে ইসরায়েল। এই হামলায় হিজবুল্লাহ প্রধান হাসান নাসরাল্লাহসহ এক হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছে।

এরপর রবিবার ইয়েমেনেও বিমান হামলা শুরু করেছে ইসরায়েল। ইয়েমেনে ইরান সমর্থিত অপর সশস্ত্র গোষ্ঠী হুতিদের লক্ষ্য করে এই হামলা চালাচ্ছে ইসরায়েলি বাহিনী। এতে অন্তত ৪ জন নিহত এবং প্রায় ৫০ জন আহত হয়েছে।

ইসরায়েল বলেছে, হুতিদের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার প্রতিক্রিয়ায় রবিবার ইয়েমেনে হুতিদের লক্ষ্যবস্তুতে বিমান হামলা করা হয়েছে। ইয়েমেনের রাস ইসা ও হোদেইদা সমুদ্রবন্দরের পাশাপাশি বিভিন্ন বিদ্যুৎ প্রকল্পকে লক্ষ্য করে এই হামলা চালানো হয়। হামলার ফলে বন্দর শহর হোদেইদাহের বেশিরভাগ অংশে বিদ্যুৎ বিভ্রাট হয়েছে।

রয়টার্স জানিয়েছে, মাত্র দুই মাসের মধ্যে ইয়েমেনে এটি দ্বিতীয় ইসরায়েলি হামলা। গত জুলাই মাসে হুতিরা তেল আবিবে ড্রোন হামলা চালিয়ে একজনকে হত্যা করার পর ইসরায়েলি যুদ্ধবিমান হোদেইদাহের কাছে হুতি সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করেছিল।

শনিবার তেল আবিবের কাছে বেন গুরিয়ন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে একটি ক্ষেপণাস্ত্র হামলার দাবি করেছিল হুতিরা। তার আগের দিনও ইসরায়েল হুতিদের ছোড়া একটি ক্ষেপণাস্ত্র ভূপাতিত করে।

হুতি বিদ্রোহীরা গত বছরের নভেম্বর থেকে লোহিত সাগর, এডেন উপসাগর ও বাব আল-মানদেব প্রণালীতে ইসরায়েল ও ইসরায়েল সংশ্লিষ্ট জাহাজে ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়ে আসছে। গাজায় ইসরায়েলি হামলার প্রতিবাদে ওই হামলা চালানোর কথা বলে হুতিরা।

ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী এক বিবৃতিতে বলেছে, “গত এক বছর ধরে হুতিরা ইরানের নির্দেশ ও অর্থায়নে এবং ইরাকি মিলিশিয়াদের সহযোগিতায় ইসরায়েল রাষ্ট্রে হামলা, আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা নষ্ট করতে এবং নৌ চলাচলের বৈশ্বিক স্বাধীনতাকে ব্যাহত করার জন্য তৎপর রয়েছে।”

এক্সে এক পোস্টে হুতিদের মুখপাত্র মোহাম্মদ আবদুস সালাম বলেছেন, রবিবারের ইসরায়েলি হামলার ফলে হুতিরা গাজা ও লেবাননের পাশে দাঁড়ানো থেকে পিছপা হবে না।

লেবানন ও ইয়েমেনে হামলার নিন্দা করে ইরান বলেছে, ইসরায়েলিরা দেশগুলোতে বেসামরিক অবকাঠামোকেও হামলার লক্ষ্যবস্তু করেছে।

দেশটির প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান বলেছেন, ইসরায়েলকে একের পর এক ইরান সমর্থিত ‘প্রতিরোধের অক্ষ’-এর দেশগুলোতে আক্রমণ করতে দেওয়া উচিত হবে না ইরানের। ইসরায়েলকে অবশ্যই প্রতিরোধ করতে হবে।

লেবাননে শনিবারের হামলায় নিহত হিজবুল্লাহ প্রধান হাসান নাসরাল্লাহর হত্যার প্রতিশোধ নেওয়ার ঘোষণাও দিয়েছে ইরান। নাসরাল্লাহর মৃত্যুতে ইরান রবিবার থেকে পাঁচ দিনের জাতীয় শোকও পালন করেছে।

এদিকে, রবিবার লেবাননজুড়ে ইসরায়েলি বোমা হামলায় ১০৫ জন নিহত হয়েছে। এতে আহত হয়েছেন অন্তত ৩৫৯ জন। আহতদের মধ্যে অনেকের অবস্থাই আশঙ্কাজনক।

এদিন লেবাননের রাজধানী বৈরুত, বেকা উপত্যকাসহ বিভিন্ন অঞ্চলে বিমান হামলা হয়েছে। এসব হামলার লক্ষ্য ছিল হিজবুল্লাহর রকেট উৎক্ষেপণব্যবস্থা ও গোলাবারুদের সংরক্ষণাগার ধ্বংস করা।

রবিবার হিজবুল্লাহর শীর্ষ পর্যায়ের আরেক নেতা নাবিল কাওউককে হত্যার দাবিও করেছে ইসরায়েল।

সোমবার সকালেও লেবাননে বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। গাজার সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস বলেছে, সোমবার ইসরায়েলি হামলায় লেবাননে তাদের একজন নেতা নিহত হয়েছে।

আরেক ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠী ইসলামিক জিহাদ বলেছে, বৈরুতে হামলায় তাদের তিন নেতা নিহত হয়েছেন।

বৈরুতে গত শুক্রবারের হামলায় ইরানের বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর (আইআরজিসি) একজন ডেপুটি কমান্ডার নিহত হয়েছিলেন।

ওদিকে, লেবানন সীমান্তের কাছে সামরিক সরঞ্জামাদিসহ সৈন্যের সংখ্যাও বাড়িয়ে চলেছে ইসরায়েল। এতে দেশটিতে ইসরায়েলের সম্ভাব্য স্থল হামলার শঙ্কাও বাড়ছে।

লেবানন সীমান্তে ইসরায়েলি বাহিনীর বিপুল সেনা, ট্যাংক ও কামান মোতায়েন করতে দেখা গেছে।

গাজা যুদ্ধের মধ্যেই লেবানন ও ইয়েমেনে হামলায় গোটা মধ্যপ্রাচ্যে নতুন করে আঞ্চলিক সংঘাত সৃষ্টির আশঙ্কা তৈরি করেছে। ইসরায়েলের অব্যাহত হামলায় লেবাননে প্রায় ১০ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে।

মধ্যপ্রাচ্যে আঞ্চলিক সংঘাত শুরু হলে ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রও এতে জড়িয়ে পড়তে পারে। আগের যেকোনো সময়ের তুলনায় এখন পরিস্থিতি অনেক বেশি ঝুঁকিপূর্ণ।

সব মিলে ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় গত বছরের অক্টোবরে শুরু হওয়া সংঘাত এখন লেবানন ও ইয়েমেন হয়ে পুরো মধ্যপ্রাচ্যে বৃহত্তর আঞ্চলিক সংঘাতে রূপ নিতে পারে বলে শঙ্কা দেখা দিয়েছে।

এমন পরিস্থিতিতে গত বুধবার জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে এক জরুরি আলোচনার পর যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্সসহ তাদের বেশ কয়েকটি মিত্র দেশ ইসরায়েল-লেবানন সীমান্তজুড়ে অবিলম্বে ২১ দিনের যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছে।

কিন্তু ইসরায়েল সেই আহ্বান প্রত্যাখ্যান করে হামলা অব্যাহত রাখারা ঘোষণা দেয়। বিশ্লেষকরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্র আসলে লেবাননেও যুদ্ধবিরতি নিয়ে খেলছে। একদিকে তারা যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানাচ্ছে, অপর দিকে ইসরায়েলি বাহিনীকে অর্থ ও অস্ত্র দিয়ে সহায়তা করছে।

ফলে যুক্তরাষ্ট্রের মুখের কথা নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছে না ইসরায়েল। যুক্তরাষ্ট্র কী পদক্ষেপ নিচ্ছে, সেটিই তাদের কাছে মুখ্য বিষয়। গাজার ক্ষেত্রেও তারা একই কাজ করেছে।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত