Beta
মঙ্গলবার, ১০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪
Beta
মঙ্গলবার, ১০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

নীরবতা ভাঙলেন শেখ হাসিনা, দায়ী করলেন যুক্তরাষ্ট্রকে

শেখ হাসিনা।
শেখ হাসিনা।
Picture of সকাল সন্ধ্যা ডেস্ক

সকাল সন্ধ্যা ডেস্ক

ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে ক্ষমতা হারিয়ে দেশত্যাগ করা শেখ হাসিনা নীরবতা ভেঙেছেন। ভারতে অবস্থানরত বাংলাদেশের সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী অভিযোগ করেছেন, তাকে ক্ষমতাচ্যুত করার পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের মতো বিদেশি শক্তিগুলো রয়েছে।

শনিবার নিজ দল আওয়ামী লীগের সমর্থকদের উদ্দেশে দেওয়া এক বার্তায় তিনি এমন অভিযোগ করেন বলে জানিয়েছে দ্য প্রিন্ট। সেই বার্তাটি দেখেই এই প্রতিবেদন করার কথা জানিয়েছে ভারতের সংবাদমাধ্যমটি।

ভারত সরকার বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংকটের পেছনে ‘বিদেশি হাত’ থাকার সম্ভাবনা খতিয়ে দেখার কথা বলার কয়েকদিন বাদেই রবিবার শেখ হাসিনার বার্তা পাওয়ার খবরটি প্রকাশ করেছে প্রিন্ট।

ওই বার্তায় শেখ হাসিনা বলেন, “সেন্ট মার্টিন ও বঙ্গোপসাগর আমেরিকার হাতে ছেলে দিলে আমি ক্ষমতায় থাকতে পারতাম।”

একইসঙ্গে নবগঠিত অন্তর্বর্তী সরকারকে সতর্ক করে দিয়ে বলেছে, তারা যাতে এ ধরনের বিদেশি শক্তির দ্বারা ব্যবহৃত না হয়।

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে শেখ হাসিনা সরকারের টানাপোড়েন অনেক দিনের। গত মে মাসে ১৪ দলের এক সভায় শেখ হাসিনা বলেছিলেন, এক ‘শ্বেতাঙ্গ’ ব্যক্তির কাছ থেকে তিনি একটি প্রস্তাব পেয়েছিলেন, যেখানে তাকে বলা হয়, একটি বিমানঘাঁটি করতে দিলে সহজে তিনি ক্ষমতায় থাকতে পারবেন।

যুক্তরাষ্ট্র অবশ্য তখন এমন কোনও ঘটনায় তাদের সম্পৃক্ততা অস্বীকার করেছিল।

এর আগে ২০০১ সালে অনুষ্ঠিত অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের হেরে যাওয়ার পর বিভিন্ন সময়ে শেখ হাসিনা বলেছিলেন, ‘দেশ বিক্রি করতে রাজি না হওয়ায়’ তাকে ক্ষমতায় যেতে দেওয়া হয়নি।

গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর ওইদিন বিকালে এক সংবাদ সম্মেলনে সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান জানান, শেখ হাসিনা পদত্যাগ করেছেন। দেশ পরিচালনায় অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করা হবে।

এর ধারাবাহিকতায় শান্তিতে নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠন করা হয় অন্তর্বর্তী সরকার। এই সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ ১৩ উপদেষ্টা শপথ নেয় গত ৮ আগস্ট রাতে। এরপর রবিবার দুপুরে শপথ নেয় আরও দুজন।

তারপর দেশে আওয়ামী লীগের ছন্নছাড়া অবস্থার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে থাকা তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় ভিডিও বার্তা ও সংবাদমাধ্যমে কথা বলে আসছেন। তিনি এমন দাবিও করেছিলেন, তার মা পদত্যাগ করেননি। পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, কিন্তু তা করার সময় পাননি।

তবে প্রিন্ট জানিয়েছে, দলীয় সমর্থকদের উদ্দেশে দেওয়া বার্তায় শেখ হাসিনা তার পদত্যাগের প্রেক্ষাপট তুলে ধরেন।

শেখ হাসিনা বলেন, “আমাকে যেন লাশের মিছিল দেখতে না হয়, সেজন্য আমি পদত্যাগ করেছি। তারা আপনাদের (শিক্ষার্থীদের) লাশের ওপর দিয়ে ক্ষমতায় আসতে চেয়েছিল। আমি সেটা হতে দিইনি।”

তিনি বলেন, “আমি যদি আজ দেশে থাকতাম, হয়তো আরও অনেককে জীবন হারাতে হতো, আরও অনেক সম্পদ ধ্বংস হতো।”

সমর্থক ও দলীয় কর্মীদের উদ্দেশ্যে দেওয়া বার্তায় শেখ হাসিনা নিজের পরাজয়ের কথা স্বীকার করলেও দেশে ফিরে আসার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

তিনি বলেন, “আমি শিগগিরই ফিরব। এই পরাজয় আমার, কিন্তু বিজয় বাংলাদেশের জনগণের।”

শেখ হাসিনা বলেন, “আমি নিজেকে সরিয়ে নিয়েছি, আপনাদের সমর্থন নিয়ে আমি এসেছিলাম, আপনারাই ছিলেন আমার শক্তি। আপনারা যখন আমাকে আর চাননি, তখন আমি নিজেই চলে গেলাম, পদত্যাগ করলাম। আমার কর্মীরা যারা আছেন, কেউ মনোবল হারাবেন না। আওয়ামী লীগ বারবার উঠে দাঁড়িয়েছে।”

শিক্ষার্থীদের আন্দোলন নিয়ে তার বক্তব্যকে বিকৃতভাবে তুলে ধরা হয়েছে বলেও অভিযোগ করেন শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, “আমি আমার তরুণ শিক্ষার্থীদের পুনরায় বলতে চাই, আমি তোমাদের কখনও রাজাকার বলিনি… আমার কথা বিকৃত করা হয়েছে। একটি গোষ্ঠী সুযোগ নিয়েছে।”

ভারতে থাকা অবস্থায় আগামী সপ্তাহে সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে পারবেন বলেও আশা প্রকাশ করেন শেখ হাসিনা।

দ্য প্রিন্টের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ নতুন অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের প্রেক্ষাপটে যুক্তরাষ্ট্র আশা প্রকাশ করেছে, নতুন সরকার বাংলাদেশের মানুষের জন্য ‘একটি গণতান্ত্রিক ভবিষ্যৎ নির্ধারণ’ করবে।

নতুন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের ভালো সম্পর্ক রয়েছে– প্রচলিত এমন ধারণার কথাও উল্লেখ করা হয় প্রতিবেদনে।

উইকিলিকসের ফাঁস করা বার্তার বরাত দিয়ে এতে আরও বলা হয়, “অতীতে যুক্তরাষ্ট্রের কূটনীতিকদের সঙ্গে একাধিক বৈঠক বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে ড. ইউনূস ‘আক্ষেপ’ করেছেন।”

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

ad

সর্বাধিক পঠিত