কোটা সংস্কার আন্দোলন থেকে শুরু করে গণঅভ্যুত্থানের মধ্যে দিয়ে রাষ্ট্রক্ষমতার পটপরিবর্তন পর্যন্ত দেশে উদ্ভূত পরিস্তিতির কারণে বেশ কিছু দিন বন্ধ থাকার পর বিদেশি ঋণদাতা সংস্থাগুলোর পুঞ্জীভূত দেনা এবং সার, তেল-গ্যাসসহ জরুরি আমদানি পণ্যের দেনা পরিশোধ শুরু করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
সোমবার অর্থ মন্ত্রণালয় কেন্দ্রীয় ব্যাংককে দাতাদের ও বিভিন্ন জরুরি আমদানির দেনা পরিশোধ আবার শুরু করার নির্দেশ দেওয়ার পর এই কার্যক্রম শুরু হয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন একজন কর্মকর্তা এ তথ্য জানিয়েছেন।
বিগত কয়েক বছরে দেশে জ্বালানি তেল, গ্যাস ও সার আমদানিতে প্রায় ১০ বিলিয়ন ডলারের আমাদনি বিল পরিশোধ করতে হয়। গত অর্থবছরে সবমিলে প্রায় ৬৫ বিলিয়ন ডলারের আমদানি বিল পরিশোধ করেছে।
পাশাপাশি গত অর্থবছরে বাংলাদেশ দাতা সংস্থাগুলোর পূঞ্জীভূত দেনার প্রায় ৩ দশমিক ৬০ বিলিয়ন ডলার পরিশোধ করেছে।
গত এক মাসের বেশি সময় ধরে দেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতা আন্দোলনে সারাদেশ উত্তাল হয়ে উঠলে সরকার দুই দফায় সাধারণ ছুটি ঘোষণা ছাড়াও অস্থিরতার কারণে প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে সরকারি বেসরকারি অফিস বন্ধ ছিল। এই অস্থিরতার মধ্যে প্রায় ১২ দিন ধরে বাংলাদেশ ব্যাংক দাতাসংস্থা ও দাতা দেশগুলোর দেনা পরিশোধ করতে পারেনি।
এ বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “দেশে চলমান প্রায় সাড়ে তিনশ প্রকল্পে বিদেশি দাতাসংস্থার অর্থায়ন রয়েছে। এর আগেও কয়েকশ প্রকল্পে তাদের অর্থায়ন রয়েছে। এসব প্রকল্প বাস্তবায়নে দাতাসংস্থাগুলো যে অর্থায়ন করেছে, তা কিস্তি আকারে সুদ ও আসলসহ পরিশোধ করা হচ্ছে।
“এই প্রক্রিয়ায় প্রতিদিন কোনও না কোনও সংস্থার কাছে পাওনা পরিশোধ করতে হয়। কিন্তু বিগত প্রায় ১২ দিন ধরে বাংলাদেশ ব্যাংকের কার্যক্রম বন্ধ থাকায় দাতাসংস্থাগুলোর নির্ধারিত দেনা পরিশোধ করতে পারেনি বাংলাদেশ। অথচ নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কিস্তির অর্থ পরিশোধ না করলে জরিমানা দিতে হয়।”
এমন পরিস্থিতিতে বিগত ১২ দিনের কিস্তির জরিমানা দিতে হবে কি না—জানতে চাইলে ইআরডির ওই কর্মকর্তা বলেন, “দেশের এই পরিস্থিতিতে আমরা দাতা সংস্থাগুলোর সঙ্গে সার্বিকভাবে যোগাযোগ রক্ষা করেছি। তারাও দেশের পরিস্থিতি বুঝে কিস্তি পরিশোধে কয়েক দিন দেরি হলেও জরিমানা লাগবে না- এই রকম ইঙ্গিত আমাদের দিয়েছেন।”
এই দুই সপ্তাহের কিস্তি সময়মতো পরিশোধ করতে না পারার বিষয়টি সমস্যা হবে না বলে মনে করেন তিনি।