অর্থনীতির গবেষক, সাবেক আইএমএফ কর্মকর্তা ড. আহসান এইচ মনসুর বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন। মঙ্গলবার রাতে এ-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ।
গভর্নর নিয়োগ সংক্রান্ত ওই আদেশে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ ব্যাংক অর্ডার ১৯৭২ (প্রেসিডেন্ট অর্ডার ১২৭ অব ১৯৭২) এর ১ (৫) অনুযায়ী পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশ (পিআরআই)-এর নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুরকে অন্যান্য সব প্রতিষ্ঠান ও সংগঠনের সঙ্গে কর্ম-সম্পর্ক পরিত্যাগের শর্তে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর পদে নিয়োগ প্রদান করা হলো। তার যোগদানের তারিখ থেকে ৪ বছরের জন্য এই নিয়োগ দেওয়া হলো।
এতে আরও বলা হয়, ড. আহসান এইচ মনসুর গভর্নর পদে নিয়োজিত থাকাকালে সরকারের সঙ্গে সম্পাদিত চুক্তির শর্ত মোতাবেক বেতন-ভাতা ও অন্যান্য সুবিধা বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে গ্রহণ করবেন। এ নিয়োগের অন্যান্য বিষয় উল্লেখিত চুক্তিপত্র দ্বারা নির্ধারিত হবে।
আহসান এইচ মনসুর বর্তমানে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক। আগে তিনি আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি দেশের আর্থিক খাতের একজন বিশ্লেষক হিসেবে সুপরিচিত। ব্র্যাক ব্যাংকের চেয়ারম্যান হিসেবেও দায়িত্ব পালনের অভিজ্ঞতা রয়েছে ড. মনসুরের।
এসব কারণেই অন্তবর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে উপদেষ্টা পরিষদ গভর্নর হিসেবে ড. মনসুরকে বেছে নিয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।
‘ব্যক্তিগত’ কারণ দেখিয়ে গত শুক্রবার বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের পদে ইস্তফা দেন আবদুর রউফ তালুকদার।
ছাত্র-জনতার তীব্র আন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকার পতনের পর থেকেই অফিসে অনুপস্থিত ছিলেন সদ্য পদত্যাগী গভর্নর রউফ তালুকদার। এরপর ৭ আগস্ট গভর্নর ও চার ডেপুটি গভর্নর এবং আর্থিক খাতের গোয়েন্দা দপ্তর বিএফআইইউ প্রধানের পদত্যাগের দাবিতে কয়েক ঘণ্টা বিক্ষোভ চলে মতিঝিলে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে।
তাদের দাবি ছিল, বাংলাদেশ ব্যাংক একটি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান। কিন্তু কেন্দ্রীয় ব্যাংক নানা ‘অপকর্মে’ জড়িয়ে গেছে। ডেপুটি গভর্নররা কোনও কাজ ‘সঠিকভাবে’ করতে পারেন না। আর্থিক কেলেঙ্কারির ঘটনাগুলোতে তারা সঠিক পদক্ষেপ নেননি।
সেদিন ডেপুটি গভর্নর কাজী ছায়েদুর রহমানের কাছ থেকে জোর করে পদত্যাগপত্রে সই করিয়ে নেওয়া হয়। বাকি তিন ডেপুটি গভর্নর নুরুন নাহার, খুরশীদ আলম ও হাবিবুর রহমান পদত্যাগে রাজি হয়ে ব্যাংক ছেড়ে চলে যান।
এরপর ৮ আগস্ট ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে নতুন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার শপথ নেওয়ার পরদিনই আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিবের কাছে পদত্যাগপত্র পাঠিয়ে দেন আবদুর রউফ তালুকদার।
এরপর শূন্যতা পূরণে মঙ্গলবার ড. আহসান এইচ মনসুরকে নতুন গর্ভনর হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হলো। তবে তাকে গভর্নর করতে এই পদের সর্বোচ্চ বয়সসীমা তুলে দিতে হয়েছে।
মঙ্গলবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নরের সর্বোচ্চ বয়সসীমা সংক্রান্ত বাংলাদেশ ব্যাংক অর্ডার ১৯৭২ এর আর্টিকেল ১০ এর ৫ ধারা সংক্রান্ত বিধানটি বিলুপ্তের প্রস্তাব অনুমোদিত হয়।
বাংলাদেশ ব্যাংক অর্ডার ১৯৭২-এর সংশ্লিষ্ট বিধানে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের সর্বোচ্চ বয়সসীমা ছিল ৬৫ বছর। ২০২০ সালের ৯ জুলাই জাতীয় সংসদে পাস হওয়া বাংলাদেশ ব্যাংক (সংশোধিত) আইনে গভর্নরের বয়সসীমার বিধানটি সংশোধন করে গভর্নর পদের মেয়াদ ৬৭ বছর পর্যন্ত করা হয়।
ড. আহসান এইচ মনসুরের বয়স ৭২ হওয়ায় বাংলাদেশ ব্যাংক আইন ২০২০ এর সংশ্লিষ্টে ধারা বিলুপ্ত করে তাকে নিয়োগ দেওয়া হয়। মঙ্গলবার রাতে জারি করা ওই নিয়োগের প্রজ্ঞাপনে রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে স্বাক্ষর করেন আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের উপসচিব আফছানা বিলকিস।