সারি সারি শ্রমিক, কাজ করছে এক মনে। কেউ কাপড় কাটছে, কেউ সেলাই। বাংলাদেশে পোশাক শিল্পের কারখানাগুলোতে এটি একটি স্বাভাবিক দৃশ্য।
কিন্তু কতদিন থাকবে এই পরিচিত দৃশ্য। কারণ, দৃশ্যপটে আসতে যাচ্ছে নতুন শ্রমিক। যে একাই করবে অনেকের কাজ। সেই শ্রমিক হলো আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা এআই।
এরই মধ্যে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবে প্রবেশ করেছে বিশ্ব। এখনই বাংলাদেশে বড় ধরনের পরিবর্তন না হলেও আশঙ্কা তৈরি হয়েছে অনেকের চাকরি হারানোর।
বিভিন্ন গবেষণা বলছে, তৈরি পোশাক ও টেক্সটাইল খাত, আসবাবপত্র, কৃষিজাত খাদ্য শিল্প, চামড়া শিল্প ও পর্যটন- চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের প্রভাবে কর্মচ্যুতি বাড়বে দেশের এ ছয়টি শিল্প খাতে।
এর মধ্যে সবচেয়ে বড় আঘাত আসতে পারে দেশের রপ্তানি আয়ের প্রধান খাত পোশাক শিল্পে। ২০৪১ সাল নাগাদ শুধু পোশাক শিল্প থেকে ২৫ লাখ শ্রমিকের চাকরি হারানোর শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরাম ধারণা দিচ্ছে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বিশ্বের প্রায় ৪০ শতাংশ চাকরির ওপর প্রভাব ফেলবে। আইএমএফ বলছে, উন্নত দেশগুলোর চাকরির বাজারের ৬০ শতাংশের ওপর এআই প্রভাব ফেলতে পারে। তবে নিম্ন আয়ের দেশগুলোতে এ হার হতে পারে ২৬ শতাংশ।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, প্রযুক্তির বিকাশ থামানো যাবে না, কিন্তু এর নিয়ন্ত্রণ ব্যক্তির হাতে থাকবে নাকি সমষ্টির হাতে থাকবে, সেটা গুরুত্বপূর্ণ। আর ভবিষ্যৎ পরিস্থতি মোকাবেলায় সরকারকে সঠিক গবেষণার মাধ্যমে রোডম্যাপ তৈরি করতে হবে।
বাংলাদেশের উদ্যোক্তারা অবশ্য আশাবাদী। তারা বলছেন, যে প্রযুক্তিই আসুক না কেন, তার সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার সক্ষমতা রয়েছে বাংলাদেশের।
প্রথম শিল্প বিপ্লব থেকে চতুর্থ শিল্প বিপ্লব
১৭৬০ সালের দিকে বাষ্পীয় ইঞ্জিনকে কেন্দ্র করে শুরু হয় প্রথম শিল্প বিপ্লব। বস্ত্র, খনিজ, কৃষি- বিভিন্ন খাতে আমূল পরিবর্তনের মাধ্যমে তৈরি হয় শক্তিশালী মধ্যবিত্ত শ্রেণির।
১৮৭১ সাল থেকে শুরু হয় প্রযুক্তিগত দ্বিতীয় শিল্প বিপ্লব। রেলপথ, টেলিফোন ও বিদ্যুতের আবিষ্কার সে বিপ্লবের সময় কারখানাগুলোকে দেয় নতুন গতি, অর্থনীতিকে দেয় অভূতপূর্ব প্রবৃদ্ধি।
এরপর বিংশ শতাব্দীর শেষ ভাগে এসে শুরু হয় তৃতীয় শিল্প বিপ্লব। ইলেকট্রনিকস এবং তথ্যপ্রযুক্তির ওপর ভিত্তি করে ঘটে যাওয়া সেই বিপ্লব ডিজিটাল বিপ্লব নামেও পরিচিত। আসে কম্পিউটার, সুপার কম্পিউটার।
পূর্ববর্তী শিল্প বিপ্লবগুলোর সঙ্গে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের বড় পার্থক্য হলো- এ ক্ষেত্রে পরিবর্তন আসছে আগের বিপ্লবগুলোর তুলনায় অনেক বেশি দ্রুত গতিতে, এটি প্রভাবিত করছে প্রতিটি দেশের প্রায় প্রতিটি শিল্পকে।
উৎপাদন, ব্যবস্থাপনা, পরিষেবা কিংবা পরিচালনা- সবকিছুতে রূপান্তরের ইঙ্গিত নিয়ে এসেছে এই চতুর্থ শিল্প বিপ্লব।
সময়টি এখন চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের হলেও পৃথিবীর প্রায় ১৭ শতাংশ মানুষ এখনও দ্বিতীয় শিল্প বিপ্লবের নাগাল পায়নি এবং ৪০০ কোটি মানুষ তৃতীয় শিল্প বিপ্লবের সুবিধা ভোগ করতে পারেনি।
বাংলাদেশে কী প্রভাব
বাংলাদেশের রপ্তানি আয়ের প্রধান উৎস তৈরি পোশাক শিল্প। এই শিল্পে শ্রমিকের সংখ্যাটি ৩০ থেকে ৪০ লাখের মধ্যে।
এআইর প্রভাবে দেশের তৈরি পোশাক খাতেই ২৫ লাখ শ্রমিকের চাকরি হারানোর শঙ্কা তৈরি করেছে। ঝুঁকিতে থাকা এই শ্রমিকদের ৫০ শতাংশই অল্প শিক্ষিত নারী। গত বছর বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানে-বিআইডিএসের এক গবেষণায় এমন তথ্য উঠে আসে।
দেশের পাঁচটি খাতের ওপর এটুআই প্রকল্প পরিচালিত সাম্প্রতিক এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, ২০৪১ সালের মধ্যে গড়ে ছয়টি খাতে প্রতি পাঁচজনের দুজন চাকরি হারানোর ঝুঁকিতে থাকবেন। এর মধ্যে তৈরি পোশাক ও বস্ত্র এবং আসবাবপত্র খাতে ঝুঁকির মুখে পড়বে ৬০ ভাগ চাকরি।
তবে এই সময়ে ৫৫ লাখ চাকরি হারানোর সম্ভাব্য হুমকির বিপরীতে ১ কোটি নতুন চাকরির সম্ভাবনার কথা এসেছে সমীক্ষায়।
২০১৭ সালের দিকে বাংলাদেশের সোয়েটার তৈরিতে অটোমেটেড মেশিন জ্যাকার্ড আসে। একজন শ্রমিকের পক্ষেই সাতটি মেশিন পরিচালনা করা সম্ভব ছিল।
তখন প্রচুর শ্রমিক এসব কারখানা থেকে ছাঁটাই হয়। সেই শ্রমিক সংখ্যার সঠিক পরিসংখ্যান না থাকলেও ধারণা করা যায়, সহস্রাধিক শ্রমিক তখন চাকরি হারায়।
তৈরি পোশাক শিল্পে এআই
তৈরি পোশাক শিল্পের ব্যবসা সারা পৃথিবীতে প্রায় ১ লাখ ৫২ হাজার কোটি ডলারের, যা অটোমেটেড না হওয়া একমাত্র ট্রিলিয়ন ডলার ব্যবসা।
বাংলাদেশ বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের ক্ষেত্রে তৈরি পোশাক শিল্পের ওপরেই বেশি নির্ভর করে। রপ্তানির প্রায় ৮৫ ভাগ আসে এই খাত থেকে।
বাংলাদেশের পোশাকের মূল গন্তব্য আমেরিকা বা ইউরোপের ক্রেতারা নিজেদের লাভের পরিমাণ বাড়াতে এবং তৃতীয় বিশ্বের ওপর নির্ভরশীলতা কমাতে এখন স্বয়ংক্রিয় উপায় খোঁজায় বেশি মনোযোগী।
এরই মধ্যে নাইকি, এইচএন্ডএম, অ্যাডিডাস, জারাসহ সব ব্র্যান্ড তাদের পরিচালনা খরচ কমাতে অটোমেটেড উৎপাদনে গিয়ে ইতিবাচক ফলও পাচ্ছে।
গত বছরের জানুয়ারিতে লুই ভিটন তাদের নিউ ইয়র্কের স্টোরে একটি বৃহৎ রোবট স্থাপন করেছে। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের সান ফ্রান্সিসকোভিত্তিক স্টার্টআপ সুইবো রাসায়নিক ব্যবহার করে কাপড়ের স্থিতিস্থাপকতা বাড়িয়ে তা এতটাই শক্ত করেছে যে তা অনেকটা গাড়ির বাম্পারের মতো শক্ত হয়ে উঠে।
তারপর অটোমেটেড পদ্ধতিতে সেলাই শেষ হলে কাপড়টিকে ধোয়ার মাধ্যমে স্টিফনিং এজেন্ট অপসারণ করা হয়। এই স্টিফনিং এজেন্ট সংরক্ষণ করা হয় এবং পুনরায় ব্যবহার করা হয়। স্টিফনিং এজেন্ট হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে পলি-ভিনাইল অ্যালকোহল, যা একটি নন-টক্সিক পলিমার।
এক্ষেত্রে আরও অগ্রসর সফটঅয়্যার অটোমেশন নামে যুক্তরাষ্ট্রের জর্জিয়ায় আরেকটি কোম্পানি। তাদের প্রযুক্তি ‘সউবট’। এই মেশিন আট ঘণ্টা চালালে ১১৪২টি টি-শার্ট তৈরি করতে পারে, যেখানে ১০ জন মানুষের একটি প্রোডাকশন লাইন মাত্র ৬৬৯টি তৈরি করে।
এরই মধ্যে চীনের তিয়ানইয়ান গার্মেন্টস কোম্পানি, যারা অ্যাডিডাসে সবচেয়ে বড় রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান। তারা ২১টি সউবট কিনেছে। সউবট মাত্র ২২ সেকেন্ডে ফেব্রিক থেকে টি শার্ট তৈরি করতে পারে।
তিয়ানইয়ান কোম্পানি বলছে, তারা দিনে ৮ লাখ টি-শার্ট তৈরি করতে পারবে সউবটের মাধ্যমে। তাদের হিসাব বলছে,তারা মাত্র ৩৩ সেন্টে একটি বেসিক টি-শার্ট তৈরি করতে পারবে। যেখানে বাংলাদেশে বেসিক টি-শার্ট তৈরি করতে গড়ে ৮০ সেন্ট থেকে ১ ডলার লাগে।
উদ্যোক্তারা প্রস্তুত
এআই প্রযুক্তি ব্যবহার নিয়ে তৈরি পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএ’র নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, বাংলাদেশ সবসময়ই ‘লেটেস্ট টেকনোলজি’ গ্রহণ করার ক্ষেত্রে এগিয়ে।
“বর্তমানে সারাবিশ্বে গ্রিন ফ্যাক্টরির যে অবস্থান, তাতে বাংলাদেশ সবার উপরে আছে। আমাদের ২১৪টি গ্রিন ফ্যাক্টরি আছে। এর মধ্যে প্লাটিনাম লিড সার্টিফাইড ফ্যাক্টরি ৭৫টির বেশি।”
তিনি বলেন, “বায়ারদের এখন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দিয়ে উৎপাদন ব্যবস্থা তৈরি করার যে চাহিদা, তাতেও আমরা বেশ এগিয়ে আছি। আমরা সবার ওপরে থাকব, এ পরিকল্পনা নিয়েই আমাদের কাজ চলছে। আমাদের টোটাল অ্যাপারেল ইন্ডাস্ট্রি পৃথিবীতে লিডিং অবস্থায় যাওয়ার জন্য প্রস্তুত।”
চাকরি কমে যাওয়ার শঙ্কাকে উড়িয়ে দেন হাতেম।
তিনি বলেন, “বাংলাদেশের অ্যাপারেল ইন্ডাস্ট্রিতে কিন্তু আগের থেকে অনেক বেশি অটোমেটেড, কিন্তু তাতেও আমাদের লোক কমে নাই, বরঞ্চ দিনে দিনে আমাদের কর্মসংস্থান বেড়েছে। তারপরও সারা বছরই আমরা দক্ষ শ্রমিক সংকটে থাকি।”
“যত অটোমেশনই হোক না কেন, আমাদের কাজের পরিধি বাড়বেই,” দাবি করে হাতেম বলেন, “বাংলাদেশের উদ্যোক্তারা সাহসী উদ্যোক্তা। যে পরিমাণ ঝুঁকি নিয়ে আমরা কাজ করি, পৃথিবীর অন্য কোনও দেশে কেউ এত ঝুঁকি নিয়ে কাজ করে না। ফলে আমরা যদি দক্ষতা অর্জন করতে পারি, তাহলে কর্মসংস্থান কমবে না, বরং বাড়বে।”
শ্রমিকদের শঙ্কা থাকছেই, সরকারের ভূমিকা প্রত্যাশা
প্রযুক্তির অগ্রগতি আটকানো যাবে না, কিন্তু সেই অগ্রগতিতে যদি শ্রমিকদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত না হয় তাহলে সেই প্রযুক্তির অগ্রগতি দেশের জন্য ভালো কিছু বয়ে আনবে না বলে মনে করেন গার্মেন্ট শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সহ সভাপতি জলি তালুকদার।
শ্রমিকের ওপর কারখানায় অটোমেশনের প্রভাব তুলে ধরতে গিয়ে তিনি সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “সোয়াটার তৈরির শিল্পে জ্যাকার্ড মেশিন আসার পর কিন্তু অনেক শ্রমিক চাকরি হারিয়েছেন। কারণ একজন শ্রমিক ৭-১০ টি জ্যাকার্ড মেশিন একাই পরিচালনা করতে পারেন।”
চাকরি হারানো শ্রমিক ভিন্ন জায়গায় আবার চাকরি পেলেও শ্রমিকের আয় কমেছে বলে দাবি করেন জলি।
তিনি আরও বলেন, “বাংলাদেশে সাব-কন্ট্রাক্টে কাজ করা কারখানার সংখ্যার কোনও সঠিক পরিসংখ্যান নাই। ফলে তাদের শ্রমিকরা কী অবস্থায় আছে, তার কোনও পরিসংখ্যান শ্রম অধিদপ্তরেরও কাছে নেই। বড় কারখানায় অটোমেটেড মেশিন আসছে, শ্রমিকরা চাকরি হারাচ্ছে। তারা গিয়ে যুক্ত হচ্ছে এসব সাব-কন্ট্রাক্টে কাজ করা কারখানায়।”
শ্রমিকদের চাকরির সুরক্ষায় সরকারি পদক্ষেপ চেয়ে জলি বলেন, “যে শ্রমিকরা প্রযুক্তিতে ততটা পারদর্শী না, তারা বিপদে পড়ছে। বিশেষ করে নারী শ্রমিকরা।
“সরকারের উচিৎ, শ্রমিকদের জীবিকা সুরক্ষার জন্য বিভিন্ন কর্মসূচি নেওয়া। মালিকরা চাইলেও তারা নিজেরাও এটা করতে পারে। কিন্তু আমাদের দেশের মালিকরা নিজেরা লাভবান হতে চায়, কিন্তু তার কারখানার শ্রমিকদের সেই লাভের ভাগ দিতে চায় না।”
রোডম্যাপ তৈরির তাগাদা
প্রযুক্তির অগ্রগতির কারণে কর্মক্ষেত্র সঙ্কুচিত হবে- এটাকে ‘ভ্রান্ত ধারণা’ মনে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. হাফিজ মো. হাসান বাবু।
তিনি সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “কোথাও আগে তিনজন শ্রমিক লাগলে এখন হয়ত প্রযুক্তির জন্য একজনেই সেই কাজ হচ্ছে। কিন্তু তাই বলে বাকি দুজনের চাকরি থাকবে না, তা তো না। তাদের অন্য কোনও জায়গায় সুযোগ তৈরি হবে।”
তবে কম দক্ষ শ্রমিকদের সমস্যা হবে বলে ড. হাফিজও মনে করেন। এজন্য সরকারসহ সংশ্লিষ্ট সবার পদক্ষেপ নেওয়া প্রযোজন বলে মনে করেন তিনি।
“এখন থেকেই শ্রমিকদের দক্ষ করে গড়ে তোলার প্রস্তুতি নিতে হবে। শুধু সরকারের দিকে তাকিয়ে থাকলে হবে না। তৈরি পোশাক শিল্প অনেক বড় খাত। বেসরকারি অনুদান এখানে আসতে হবে। মালিকরা তাদের শ্রমিকদের রুমে না রেখে হাতে-কলমে শেখানোর জন্য বিভিন্ন প্রজেক্ট হাতে নিতে পারে।”
প্রযুক্তির বিকাশ আটকানো না যাওয়ায় তার সঙ্গে এগোনোর প্রস্তুতি নেওয়ার ওপর জোর দেন বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) মহাপরিচালক বিনায়ক সেন।
তিনি সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “আমার সাথে বিজিএমইএর এক নেতার সাথে কথা হয়। তাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, কারখানাগুলোতে এআই যুক্ত করে কাজ করছে কি না তারা?
“সেই প্রশ্নের উত্তরে আমাকে বলেছিল যে, সবাই শুরু করেনি, কিন্তু কেউ কেউ তাদের সুবিধামতো প্রযুক্তি ব্যবহার শুরু করে দিয়েছে।”
“তার মানে কিন্তু কাজ শুরু হয়ে গেছে। প্রযুক্তি ঢুকে গেছে। এখন আপনার প্রস্তুত হতে হবে,” বলেন বিনায়ক সেন।
তিনি মনে করেন, প্রস্তুত হওয়ার জন্য সব তথ্য-উপাত্ত একত্রিত করে একটি সরকারি পর্যায়ে গবেষণা হওয়া দরকার। যাতে কীভাবে প্রযুক্তি ব্যবহার করে মানুষের জীবন-জীবিকা রক্ষা করা যায়। তার একটি রোডম্যাপ তৈরিও করা দরকার।
প্রযুক্তিগত বিকাশ ও শিল্পে তার প্রভাব নিয়ে সম্প্রতি (তিনি দুর্ঘটনায় পড়ার আগে) সকাল সন্ধ্যার কথা হয় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক আনু মুহাম্মদের সঙ্গে।
তিনি বলেন, প্রযুক্তির বিকাশ মানব সভ্যতায় স্বাভাবিক ঘটনা। তবে এর ফলাফল কী হবে, তা নির্ভর করবে প্রযুক্তিগত এই বিকাশ কে নিয়ন্ত্রণ করে বা মালিকানা কার হাতে থাকে, তার ওপর। বাংলাদেশে প্রযুক্তিগত বিকাশের প্রভাব রাজনৈতিক অবস্থা এবং আর্থ সামাজিক পরিস্থিতির উপর নির্ভর করবে।
“জনগণের হাতে যদি প্রযুক্তি থাকে, তাহলে একটা জিনিস সে হারালে আরেকটি সে তৈরি করতে পারবে। কিন্তু বাংলাদেশে যেভাবে অর্থনৈতিক বিকাশ হচ্ছে, তাতে সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণ কম। এখনই এসব ঠিক করার জন্য প্রস্তুত হতে হবে। সমাজের আর্থ সামাজিক অবস্থা বদলাতে হবে, যাতে মানুষ স্বাবলম্বী হতে পারে। তাতে দেখা যাবে, এই প্রযুক্তির বিকাশ আমাদের হিতে বিপরীতে যাবে না।”