নির্ধারিত সময়ের ২১ ঘণ্টা পরে চট্টগ্রাম থেকে সংযুক্ত আরব আমিরাতের শারজাহর উদ্দেশে রওনা দিয়েছে বাংলাদেশে আটকে থাকা এয়ার এরাবিয়ার একটি ফ্লাইট। রবিবার (২৮ জানুয়ারি) সন্ধ্যা ৬টায় চট্টগ্রাম শাহ আমানত আর্ন্তজাতিক বিমানবন্দর ছাড়ে ফ্লাইটটি।
এর আগে দিনভর বাহনটির ত্রুটি সারানোর কাজ করেন আরব আমিরাত থেকে উড়ে আসা প্রকৌশলীরা।
শনিবার (২৭ জানুয়ারি) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় ১৪৯জন যাত্রী নিয়ে শারজাহ রওনা হয়েছিল এয়ার এরাবিয়ার ফ্লাইটটি। পাঁচ ঘণ্টা পর শারজাহ পৌঁছানোর কথা থাকলেও এক ঘণ্টা চলার পরই মাঝ আকাশে দেখা দেয় যান্ত্রিক ত্রুটি। এ অবস্থায় আর সামনের দিকে না এগিয়ে পাইলট ফিরে যান চট্টগ্রামে। রাত সাড়ে ৯টায় চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে নিরাপদে নামে উড়োজাহাজটি।
ফ্লাইটটির বেশিরভাগ ছিলেন ওমরাহ যাত্রী। এছাড়া আরব আমিরাত প্রবাসী ও ট্রানজিটের কিছু যাত্রীও ছিলেন। তবে রবিবার যখন ফ্লাইট ছাড়ে তখন শারজাহ গেছেন ১০২ জন, বাকি ৪৭ জন তাদের যাত্রা বাতিল করেছেন।
এদের সবারই শনিবার বোর্ডিং ও ইমিগ্রেশনের আনুষ্ঠানিকতা শেষ করা ছিল।
ফ্লাইটটির চট্টগ্রাম ছাড়ার বিষয়ে কথা হয় শাহ আমানত আর্ন্তজাতিক বিমানবন্দরের পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন তাসলিম আহমেদের সঙ্গে।
তিনি সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “ত্রুটি সারিয়েই উড়োজাহাজটি ১০২ জন যাত্রী নিয়ে রওনা দিয়েছে। বাকি যাত্রীরা কেন টিকেট বাতিল করেছেন তা জানা যায়নি।”
উড়োজাহাজে ত্রুটি, চট্টগ্রামে আটকা এয়ার এরাবিয়ার ১৪৯ যাত্রী
যাত্রা বাতিল করা এই যাত্রীদের ইমিগ্রেশনের আনুষ্ঠানিকতা শেষ হয়েছিল। এরপরও কীভাবে তারা যাত্রা বাতিল করতে পারেন তা জানতে চাওয়া হয় চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে কর্মরত ইমিগ্রেশন পুলিশ সুপার এসপি এটিএম আতাহারের কাছে।
তিনি বলেন, “যান্ত্রিক ত্রুটি বা জরুরি কারণে কোনও যাত্রী যদি ইমিগ্রেশনের পর ফ্লাইটে যেতে না পারেন তাহলে এয়ারলাইনস কর্তৃপক্ষ তা আমাদের জানালে আমরা ইমিগ্রেশন বাতিল করি। সিস্টেম থেকে তাদের সিল ক্যানসেল করা হয়। অর্থাৎ সেই ইমিগ্রেশন সিল ব্যবহৃত হিসেবে গণ্য হবে না।”
এতে যাত্রীদের খুব বেশি আর্থিক ক্ষতি হয় না জানিয়ে তিনি বলেন, “কারণ যাত্রীরা একই উড়োজাহাজ পরিষেবা সংস্থায় পরবর্তী সুবিধাজনক সময়ে যাত্রার সুযোগ পান।”
যাত্রা বাতিল করা যাত্রীদের তথ্য রয়েছে এয়ার এরাবিয়ার কাছে। এ বিষয়ে তাদের আনুষ্ঠানিক কোনও বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
তবে এয়ার এরাবিয়ার এক শীর্ষ কর্মকর্তা সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “যাত্রীদের নিরাপত্তা আমাদের কাছে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার পায়। সেজন্য কোনও ঝুঁকি না নিয়ে ফ্লাইটটি চট্টগ্রামে ফিরিয়ে নেওয়া হয়েছিল।
“বেশ কিছু যাত্রী ওই ফ্লাইটে ফেরেননি, কারণটি তাদের ব্যক্তিগত। চট্টগ্রাম ফেরার পরই আমরা যাত্রীদের অফার করেছি আপনার রিফান্ড নিতে পারেন আবার চাইলে অন্য দিনের ফ্লাইটে যেতে পারেন। এরই মধ্যে বেশ কয়েকজনের টিকেটের টাকা রিফান্ড করেছি। আবার অনেকেই ফেব্রুয়ারিতে যাওয়ার জন্য বুকিং করেছেন।”
এক্ষেত্রে যাত্রীদের বাড়তি কোনও অর্থ গুনতে হবে না বলেও জানান তিনি।
শনিবার ফ্লাইটে ফেরা যাত্রীরা রবিবার দুপুর ২টা পর্যন্ত চট্টগ্রামে আটকে ছিলেন। ফ্লাইট থেকে নামিয়ে প্রথমে তাদের চট্টগ্রাম বিমানবন্দরের লাউঞ্জে রাখা হয়। এরপর রাতে শহরের আগ্রাবাদের ল্যান্ডমার্ক, অর্কিডসহ একাধিক হোটেলে থাকার ব্যবস্থা করা হয়।
অবশ্য, অনেক যাত্রীই চট্টগ্রাম শহরে আত্মীয়স্বজনদের বাসায় চলে গিয়েছিলেন।
শুরুতে কথা ছিল, ত্রুটি সারিয়ে বিকাল সাড়ে ৪টায় উড়াল দেবে ফ্লাইটটি। কিন্তু মেরামতের কাজে কিছুটা দেরি হওয়ায় পরবর্তী সময় ঠিক করা হয় সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা। সেই সময়েই ফ্লাইটটি সংযুক্ত আরব আমিরাতের উদ্দেশে ছেড়ে যায়।