এ জে মোহাম্মদ আলীর জানাজায় অংশ নিয়ে তার ও তার বাবার গুরুত্বপূর্ণ দুটি পদে থাকার নজির তুলে ধরলেন প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান।
শনিবার সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি প্রাঙ্গণে সমিতির সাবেক সভাপতি এ জে মোহাম্মদ আলীর জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জ্যেষ্ঠ এই আইনজীবী ৭৩ বছর বয়সে গত বৃহস্পতিবার সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।
প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান বলেন, “তিনি এমনই এক পরিবারের সন্তান, যার বাবা বাংলাদেশের অ্যাটর্নি জেনারেল ছিলেন এবং সুপ্রিম কোর্ট বারের প্রেসিডেন্টও ছিলেন।
“একইভাবে এ জে মোহাম্মদ আলীও অ্যাটর্নি জেনারেল ছিলেন, সুপ্রিম কোর্ট বারের প্রেসিডেন্ট ছিলেন। এইটা আর পাবেন কি না, বলা মুশকিল।”
স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম অ্যাটর্নি জেনারেল ছিলেন এ জে মোহাম্মদ আলীর বাবা এম এইচ খোন্দকার। পাকিস্তান আমলে তিনি ১৯৬৪-৬৫ মেয়াদে আইনজীবী সমিতির সভাপতি ছিলেন।
বিচারপতি ওবায়দুল হাসান বলেন, “স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এম এইচ খন্দকারকে বাংলাদেশের অ্যাটর্নি জেনারেল নিয়োগ করেন। তারই সন্তান এই মোহাম্মাদ আলী সাহেব।”
এ জে মোহাম্মদ আলী বাংলাদেশের দ্বাদশ অ্যাটর্নি জেনারেল হিসাবে ২০০৫ থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেছিলেন। ২০১৩-১৪ মেয়াদে তিনি সুপ্রিম কোর্ট বারের সভাপতি ছিলেন।
বিচারপতি ওবায়দুল হাসান বলেন, “আইনজীবী থাকাকালে আমরা তখন যাকে সিনিয়র আইনজীবী হিসেবে নিতাম, তার মধ্যে মাহবুবে আলম সাহেব (প্রয়াত অ্যাটর্নি জেনারেল) এবং এ জে মোহাম্মাদ আলী সাহেবকে। এ জে মোহাম্মাদ আলীর সঙ্গে আমার অনেক স্মৃতি। তিনি নিতান্ত একজন ভদ্রলোক ছিলেন। তার রাজনৈতিক বিশ্বাস নিয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেছেন, মতবিরোধ থাকলেও কিন্তু মানুষে মানুষ হিসেবে তিনি অত্যন্ত বড় মাপের মানুষ ছিলেন।”
এ জে মোহাম্মদ আলী বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ছিলেন। জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সভাপতিও ছিলেন তিনি।
এ জে মোহাম্মদ আলীর মৃত্যুতে রবিবার আদালতের কার্যক্রম বন্ধ রাখতে প্রধান বিচারপতির কাছে বারের বর্তমান সভাপতি এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন অনুরোধ করেন। তখন প্রধান বিচারপতি বলেন, রবিবার এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে।
এ জে মোহাম্মদ আলী জানাজা শেষে তার কফিনে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানায় প্রধান বিচারপতি, অ্যাটর্নি জেনারেল, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি এবং জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম।
পরে লাশ দাফনের জন্য বনানী কবরস্থানে নিয়ে যাওয়া হয়।
এ জে মোহাম্মদ আলী ১৯৮০ সালের ২ ফেব্রুয়ারি আইনজীবী হিসাবে তালিকাভুক্ত হন। চারদলীয় জোট সরকার আমলে ২০০১ সালের ২৩ অক্টোবর তিনি অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল পদে নিযুক্ত হন। ২০০৫ সালে অ্যাটর্নি জেনারেেলর দায়িত্ব নেন তিনি।
ওয়ান-ইলেেভনের পর সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতা নিেল ২০০৭ সালের ২৪ জানুয়ারি অ্যাটর্নি জেনারেল পদ ছাড়েন তিনি।
প্রস্টেট ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন এ জে মোহাম্মদ আলী। সেখানেই তার মৃত্যু হয়।
শুক্রবার সন্ধ্যায় তার লাশ দেশে আসে। শনিবার দুপুরে ধানমন্ডির তাকওয়া মসজিদে তার প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।